জাভি যুগের প্রথম জয়ে দেখা মিলল বার্সেলোনার আত্মবিশ্বাসী ফুটবল
জাভি ফিরে এলেন। শূন্য গ্যালারি আজ কানায় কানায় পরিপূর্ণ। জাভি ফিরলেন কাতালান ডার্বির দিন; সে ঝাঁঝটাও টের পাওয়া গেল মাঠে। আর টের পাওয়া গেল, জাভি ক্ষণিকের জন্য আসেননি, পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায়, মাঠে আচরণে। বার্সেলোনার সঙ্গে মিশে থাকা টোটাল ফুটবল কিংবা মোটা দাগে টিকি-টাকা ফুটবল না হলেও নিজের দর্শনে বার্সেলোনাকে কক্ষপথে নিয়ে আসাই জাভির একমাত্র লক্ষ্য। প্রথম পরীক্ষায় অবশ্য কোনমতে উতরে গেছে বার্সোলোনা, এসপানিওলকে ১-০ গোলে হারালেও এই বার্সেলোনায় ছিল বেশ কিছু চমক।
প্রথম চমক দলে ইলিয়াস আখোমাচ নামের ১৭ বছরের এক তরুণের দেখা পাওয়া। জাভি দলের দায়িত্ব নিয়েই ‘লা মাসিয়া’ থেকে সরাসরি বার্সেলোনা দলে জায়গা দিয়েছেন মরক্কোর এই ‘বিস্ময় বালক’কে। রাইট উইংয়ে তিনি ছিলেন সপ্রভ। যদিও তিনি খেলেছেন প্রথমার্ধেই, দ্বিতীয়ার্ধে সেখানে জাভি নিজ চোখে পরখ করে দেখেছেন আরেক লা মাসিয়ার ছাত্র এল আবদেকে।
বার্সেলোনার খেলায় পরিবর্তনের ছোয়া স্পষ্ট। মাঝ মাঠ ডায়াগনাল বল থেকে উইং এ পাঠিয়ে একের পর এক বক্সে ক্রস পাঠানোর দৃষ্টিকটু স্বভাব বদলেছে ব্লাউগ্রানাদের। মাঝমাঠ থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছেন বুসকেটস; আর পেছনে সামনে এক এক করে এগিয়ে গিয়ে বার্সেলোনার প্রতিটি আক্রমণের সুতা বুনছিলেন পিকের সঙ্গে। লেফট উইং ও হাফ স্পেইস ধরে ত্রিভুজ আকৃতি পাসিং চ্যানেল তৈরি করে বল নিয়ে এগিয়েছেন ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, নিচে নেমে এসে আক্রমণে ভূমিকা রেখেছেন দলের প্রায় সবাই।
তবু লো ব্লকে খেলা এসপানিওলের বিপক্ষে শুধু গোলটাই মিলছিল না। প্রথমার্ধে তো গোলে ঠিকমত শটও নিতে পারেনি তারা। ৫-৪-১ ফরমেশনে সাজানো এসপানিওলের ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকলেও কাজের কাজ হয়নি। ৩১ মিনিটে সেজন্য বক্সের অনেক বাইরে থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন বুসকেটস, তবে সে বল ঠেকিয়ে বিপদ হতে দেননি এসপানিওল কিপার ডিয়েগো লোপেজ। উলটো প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে অতর্কিত আক্রমণে বিপদে পড়তে পারত বার্সেলোনা। পিকের পায়ে বল লেগে মাঠের বাইরে চলে না গেলে আর.টি.ডির গোলে পিছিয়ে পড়তে হত জাভির দলকেই।
তবে কাজ হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে, তাও ঠিক ৪৮ সেকেন্ডের মাঝেই। লেফট উইংয়ে গাভি প্রায়ই আতংক ছড়িয়েছেন এসপানিওল ডিফেন্সে। পকেট স্পেইস থেকে বল নাট্মেগ করে পাঠিয়েছিলেন মেমফিসের কাছে। ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে পা দিয়ে ছুঁয়ে বসেন মেমফিসের গোড়ালিতে, রেফারির বাঁশিতে পেনাল্টি। বল জালে জড়াতে মোটেও ভুল করেননি এই ডাচম্যান। আর অন্যদিকে ডাগআউটে ততক্ষণে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন জাভি।
এরপর বার্সেলোনা শুধু নিজেদের কাছেই বল রেখেছে। এসপানিওল নিজেদের কাছে বল অতটা রাখতেও চায়নি। কাউন্টার অ্যাটাকে সেট পিস থেকে একবার সুযোগ মিললেও আর.টি.ডির শট বক্সের অনেক বাইরে দিয়ে যাওয়ায় টার স্টেগানকেও বড় কোন পরীক্ষা দিতে হয়নি। জাভির বার্সেলোনা যে ফুটবল আজ খেলেছে সেটা নিঃসন্দেহে কোম্যানের ফুটবলের ধরণ থেকে আলাদা। তবে, জাভি যে বার্সেলোনাকে আবারও তার পুরোনো পরিচয় ও ছন্দে ফিরিয়ে নিতে চান, সেটা বার্সেলোনার খেলার ধরণ দেখে আজ কিছুটা হলেও আঁচ করা গেল।