• পাকিস্তানের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচনী প্রক্রিয়া যখন 'যেমন খুশি তেমন ডাকো'

    জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচনী প্রক্রিয়া যখন 'যেমন খুশি তেমন ডাকো'    

    ২০১৮ বিপিএলের সময়। চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে নজর কেড়েছিলেন একজন তরুণ ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ দলেরই এখনকার সিনিয়র এক ক্রিকেটার সেই তরুণকে দেখিয়ে বলেছিলেন, 'একে চিনে রাখুন, অনেক দিন ন্যাশনাল টিমে সার্ভিস দিয়ে যাবে।' ইয়াসির আলী নামের সেই তরুণ ব্যাটসম্যান ২০১৯ সালের মে মাসেই ডাক পান জাতীয় দলে। কিন্তু সেই সিনিয়রের অনুমান ঠিক হয়নি, ইয়াসিরের এখনো জাতীয় দলে অভিষেকই হয়নি। তার জন্য যতটা দায় ইয়াসিরের, অনেক বেশি বাংলাদেশের 'যেমন খুশি তেমন ডাক' মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের। যে মন্ত্র জপে বাংলাদেশের ক্রিকেটের দল নির্বাচনটাই এখন হয়ে গেছে হাস্যকর। 

    ইয়াসিরের কথায় একটু ফিরে আসা যাক। সেই ২০১৯ সালে মে মাসের পর বাংলাদেশের অনেক সিরিজেই তিনি ডাক পেয়েছেন। কখনো টেস্ট দলে, কখনো ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি দলে। কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলার আর সুযোগ হয়নি, মাঠে পানির বোতল আনা নেওয়াই করেছেন। ও হ্যাঁ, টেস্টে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেছেন শর্ট লেগে। দলের হয়ে অবদান ওই পর্যন্তই। জিম্বাবুয়ে সিরিজে প্রায় সবাই সুযোগ পেলেও তার হয়নি। পাকিস্তানের সঙ্গে স্কোয়াডে প্রথম দুই ম্যাচে সুযোগ পাননি। আনুষ্ঠানিকতা হয়ে যাওয়া শেষ ম্যাচে শরিফুল, নাসুম, শামীম সুযোগ পেয়ে গেলেও হয়নি তার। ইয়াসিরের প্রথম জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর টেস্ট অভিষেক হয়েছে তিন জনের, ওয়ানডেতে ছয় জনের আর টি-টোয়েন্টিতে দশ জনের। আস্ত একটা একাদশই সাজিয়ে ফেলা যায় যাদেরকে দিয়ে। কিন্তু ইয়াসিরের আর সুযোগ মেলেনি! 

    এই সিরিজেই যেমন খুশি তেমন ডাকোর আরও টাটকা কয়েকটি উদাহরণ আছে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পর হুট করে পারভেজ হোসেন ইমন ও কামরুল রাব্বিকে ডাকা হলো দলে। সাইফ হাসানের জায়গায় ইমনের অভিষেক দেখে ফেলছিলেন অনেকে। কিন্তু ইমনের আর নামা হলো না। তাহলে তাকে ডাকা হলোই বা কেন? আবার শহিদুলকেই যদি ডেব্যু করানো হবে তাহলে কামরুল রাব্বিকেই বা ডাকার কারণ কী? তাও আবার শেষ মুহূর্তে। আকবরেরটা না হয় মানা গেল দলের সঙ্গে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আছেন। 

    সাইফ হাসানের ব্যাপারটাও খুবই বিভ্রান্তিকর। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাকে বরাবরই লম্বা সংস্করণের জন্য ফিট ভাবা হতো। বিপিএলেও কখনো সেভাবে চোখে পড়ার মতো কিছু করেননি। কিন্তু পাকিস্তান সিরিজে খেলে ফেললেন প্রথম দুই ম্যাচ। অথচ টি-টোয়েন্টিতে সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচিত ইমনকে ডাকাই হলো না। 

    দলে ডাকা নিয়ে এমন অদ্ভুত রসিকতা হয়েছে আরও। বিশ্বকাপের দলে যেমন শুরুতে ১৫ জনেরই ছিল, পরে সেখানে রিজার্ভ থেকে আসেন রুবেল হোসেন। মোস্তাফিজদের ব্যর্থতার পরও পুরো বিশ্বকাপে একটা ম্যাচেও সুযোগ পাননি। এরপর বিশ্বকাপ শেষে আবিষ্কার করেন, তাকে ডাকা হয়নি পাকিস্তান সিরিজে। কেন বিশ্বকাপ দলে রাখা হলো আবার কোনো ম্যাচে না খেলার পরও কেন তাকে বাদ দেওয়া হলো, সেই প্রশ্নের উত্তর রুবেলেরও সম্ভবত জানা নেই। নির্বাচকদের কাছে জানতে চাওয়া হলেও এর সদুত্তর দিতে পারেননি কখনো। 

    ক্রিকেটারদের এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সঙ্গত কারণেই উত্তর দেননি কখনো। ইয়াসির বরং বলেছেন, দলের সঙ্গে এভাবে থাকতে পারার সৌভাগ্যই বা কয়জন ক্রিকেটারের হয়? বাকিরা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন। আবার দল নির্বাচন নিয়ে যে নির্বাচক-কোচ-অধিনায়কের মধ্যে দ্বিমত আছে পরিষ্কার সেটিও। মুশফিকুর রহিমকে 'বাদ' দেওয়ার ইস্যুতে যেমন মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত তার নয়। এই সিদ্ধান্ত টিম ম্যানেজমেন্টের। তাহলে কি বাকিদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য? 

    বাংলাদেশের ক্রিকেটের আরও অনেক কিছুর মতো দলে ডাক পাওয়াটাও চলছে আপন গতিতে!