শেষ ওভারের নাটকের পর হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ
৩য় টি-টোয়েন্টি, মিরপুর (টস- বাংলাদেশ/ ব্যাটিং)
বাংলাদেশ ১২৪/৭, ২০ ওভার (শান্ত ৪৭, শামীম ২২, আফিফ ২০, ওয়াসিম জুনিয়র ২/১৫, কাদির ২/৩৫, দাহানি ১/২৪,)
পাকিস্তান ১২৭/৫, ২০ ওভার (হায়দার ৪৫, রিজওয়ান ৪০, বাবর ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৩/১০, আমিনুল ১/২৬, শহিদুল ১/৩৩)
ফলাফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী
পুরো সময়ই ম্যাচ ছিল পাকিস্তানের মুঠোয়; শেষ ওভারেও হাতে ৮ উইকেট নিয়ে তাদের প্রয়োজন ৮ রান। বিপিএলে শেষ ওভারে বেশ কয়েকটি ম্যাচ জেতানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তাও জয়ের আশায় দায়িত্ব তুলে নিলেন নিজের কাঁধে। মোটামুটি ম্যাড়ম্যাড়ে এক ম্যাচ হঠাৎ প্রাণ ফিরে পায় শেষ কালে এসেই, টানা দুই বলে মাহমুদউল্লাহ ফেরান উইকেটে থাকা সরফরাজ আহমেদ ও হায়দার আলীকে। উইকেটে এসেই হ্যাটট্রিক বলে ছয় মেরে আবারও ম্যাচ পাকিস্তানের দিকেই নিয়ে যান ইফতিখার আহমেদ; কিন্তু পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচে পরের বলেই ফিরে যান তিনিও! শেষ বলে দুই রান প্রয়োজন হলে মাহমুদউল্লাহর বীরত্বকে ম্লান করে দিয়ে স্নায়ু ধরে রেখে চার মারেন মোহাম্মদ নাওয়াজ; মুঠো গোলে বেরিয়ে যেতে বসা ম্যাচ নিজেদের কব্জায় এনে তবেই ফেরেন। দুঃস্বপ্নময় অধ্যায় কাটানো বাংলাদেশের দুর্ভোগের অবসান তাই হল না দেশের মাটিতেও; পাকিস্তানের কাছে ধরাশায়ী হয়ে শেষ ম্যাচে হারল ৫ উইকেটে। পাকিস্তানের কাছে নতি স্বীকার করে হতে হল ওয়াইটওয়াশ।
উইকেট মন্থর হলেও ১২৮ রানের লক্ষ্যে পাকিস্তান যে খুব একটা বিচলিত ছিল না তার প্রমাণ মেলে তাদের ব্যাটিংয়ে। আগের দুই ম্যাচেই পাওয়ারপ্লেতে উইকেট হারানো পাকিস্তানের দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান টিকে থেকে তোলে ২৫ রান।
তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক মিরপুরে এসে যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন। ভাগ্যের চাকায় এদিনও তাই আসেনি কোনও পরিবর্তন। দুই অঙ্ক স্পর্শ করলেও থেমেছেন ১৯ রান করে; তাও আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের নিরীহ এক বলে দারুণ টাইমিং করে ফিল্ডারকে খুঁজে নিয়ে। হায়দার আলীকে নিয়ে এরপর ওয়ানডে মেজাজে খেলছিলেন রিজওয়ান। বাউন্ডারি বের করার দিকে খুব একটা মন না দিয়ে প্রান্ত বদল করে খেলা রিজওয়ান মনোযোগ হারিয়ে বসেন। বেশ বাইরের বল স্টাম্পে ডেকে এনে থামেন ৪০ রানে। তাতে অবশ্য স্বপ্ন পূরণ হয়েছেন শহিদুল ইসলামের। অভিষেকেই পেয়েছেন বড় উইকেট।
ওয়ানডে মেজাজে খেলতে থাকা পাকিস্তানকে হাত খুলে খেলতেই হত। শহিদুলের ঐ ওভারে দুই ছয়ে ১৬ রান এলেও পরের তিন ওভারে তারা তোলে ১৮ রান। শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহ নিজের ঘরোয়া ম্যাচের বীরত্বের কথা প্রায় মনে করিয়েই দিয়েছিলেন। তবে দুঃসহ এই অধ্যায়ে রোমাঞ্চ হয়ে থাকল ঐ শেষ ওভারটুকুই; হতাশার পাল্লা আরও ভারী করে ফিরতে হয়েছে ওয়াইটওয়াশের গ্লানি নিয়েই।
এর আগে আরও একবার টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এদিন ওপেন করতে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত পাকিস্তানের অভিষিক্ত পেসার শাহনাওয়াজ দাহানির প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান। তিনে নামা শামীম হোসেন পাটওয়ারিকে নিয়ে পাওয়ারপ্লেতে কোনও বিপদ ঘটতে দেননি মোহাম্মদ নাঈম। পাওয়ারপ্লেতে তাই বাংলাদেশ তোলে ৩৩ রান।
পাওয়ারপ্লের পরেও দুজনেই ডট গুণতে থাকলে সেই চক্র থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়েই ঘটে বিপদ। উসমান কাদিরকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ২৩ বলে ২২ রান করে ফিরে যান শামীম। উইকেটে এসে আফিফ হোসেন ধ্রুবও খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। উইকেটে অনেক সময় কাটালেও অন্য প্রান্তে নাঈমও ধুঁকতে থাকেন। কাদিরকে দুই ছয় মেরে হাত খোলার চেষ্টা করে আফিফ কাদিরের পরের ওভারে আবার চড়াও হতে গেলে উইকেট খুইয়ে ফেরেন ২১ বলে ২০ রান করে। হাতে উইকেট থাকলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে নাঈম ১৫-১৮ ওভারে করেন মোটে ২১ রান। তারই ফলশ্রুতিতে মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের ১৯তম ওভারে লো ফুল টসে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ৫০ বলে ৪৭ করে।
ঐ ওভারের শেষ বলে নুরুল হাসানও ফিরলে হারিস রউফের করা শেষ ওভারেও আসে দুই উইকেট। প্রথম বলেই রউফ মাহমুদউল্লাহকে ফেরানোর পর শেষ বলে রান আউটের শিকার হন আমিনুল ইসলাম। বাংলাদেশ তাই তুলতে পারে ১২৭ রান।