শেষ দিনে বায়ার্নের সঙ্গে ম্যাচে ঝুলে রইল বার্সেলোনার ভাগ্য
বার্সা ম্যানেজার হিসেবে জাভি তাঁর ক্যারিয়ার জয় দিয়ে শুরু করলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাঁর প্রথম ম্যাচটাতে বেনফিকার সাথে ড্র করলো বার্সেলোনা। ম্যাচের পুরোটা সময় জুড়েই কাতালানরা আক্রমণ আর গোলের সুযোগ তৈরি করে গেলেও ফলাফলটা তাদের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ ছিল শতভাগ। শেষের দিকে সেফারোভিচ সহজ সুযোগ হাতছাড়া না করলে ঘরের মাঠে বার্সাকে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হতো। তবে বেনফিকা নকআউটের দৌড়ে টিকে থাকতে পেরে এই ড্র নিয়ে সন্তষ্টই থাকবে।
এই ম্যাচে জিতলে নকআউট নিশ্চিত বার্সার। জাভির অধীনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচে কাতালানরা কুইক পাসিংয়ে বেনফিকাকে দৌড়ের উপর রেখেছে বেশ ভালোমতোই। দেমির-গাভিরা ছিলেন বেশ উজ্জীবিত। তাদের খেলায় মনে হচ্ছিলো ন্যু ক্যাম্পে গোল আসতে বেশিক্ষণ লাগার কথা নয়। কিন্ত প্রথমার্ধের খেলা শেষেও কোন গোলের দেখা মিললো না। অবশ্য কম জাগেনি গোলের সম্ভাবনা! বার্সার হয়ে গোলের সবচেয়ে কাছে দুবার গিয়েছিলেন দেমির। ম্যাচের শুরুতেই বেনফিকার দু-তিন ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে ডানপাশ থেকে এক শট নিয়েছিলেন, সেটি সামান্যের জন্য বাইরে গেছে। এরপর প্রথমার্ধ শেষের বাঁশি বাজার কয়েক মিনিট আগে ওই প্রান্ত থেকেই দারুণ এক বাঁকানো শট নিয়েছিলেন, বারে লাগার আগ পর্যন্ত গোল হবে হবেই বলে মনে হচ্ছিলো যা দেখে।
সুযোগ আরও কয়েকটা তৈরি হয়েছিলো। আলবা একবার বাঁ প্রান্তে দারুণ এক বল পেয়ে গিয়েছিলেন, কিন্ত তাঁর শটটা চলে যায় সোজা গোলকিপারের দিকে। আরাউহো আরেকবার বেনফিকা ডিবক্সের ডানপাশে বল পেয়ে শট নিয়ে রাখতে পারেননি অন টার্গেটে। গোলের খুব কাছে গিয়েছিল বেনফিকাও। ইয়ারেমচুক শুরুতেই মাঝমাঠে বার্সার বল ইন্টারসেপ্টের পর পেয়েছিলেন, কিন্ত বক্সের সামনে থেকে তাঁর নেওয়ার দুর্বল শট কোন পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি স্টেগানকে। আরেকবার অবশ্য স্টেগান হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন বটে, লেংলেকে ছিটকে দিয়ে কর্নারে ইয়ারেমচুক হেড করেছিলেন, স্টেগেন শেষ মুহুর্তে হাঁটু দিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এরপরেই আবার ওতামেন্দি কর্নার থেকে কয়েক পা ঘুরেফিরে আসা বল পেয়ে বুলেট শটে জালে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বল, কিন্ত পরে রেফারি গোলটি বাতিল করে দেন কর্নারটিতে বল গোললাইন পেরিয়ে গিয়ে ভিতরে এসেছিল বলে।
দ্বিতীয়ার্ধেও বেনফিকা প্রতি-আক্রমণে কয়েকবার উঠলেও ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারছিলো না। কিন্ত একেবারে শেষের দিকে যে সুযোগ পেয়েছিল, এমন সুযোগ ঝাপিয়ে পড়েই লুফে নিতে হয়। অথচ সেফারোভিচ পারলেন না স্টেগানকে ফাঁকি দিয়েও বল জালে জড়াতে। বার্সেলোনার অ্যাটাক বাধাগ্রস্ত হয়ে বল পেলে টু অন ওয়ান অবস্থায় চলে যায় বেনফিকা, এরপর সেফারোভিচ একা পেয়ে যান স্টেগেনকে, বার্সা গোলরক্ষককেও পরাস্ত করেই ফেলেছিলেন তিনি, কিন্ত শেষমেশ বল মেরে দেন বাইরে দিয়ে।
বার্সাও গোলের খুব কাছে গিয়ে ফিরে এসেছে কয়েকবার। দেম্বেলে এই ম্যাচের আগে এ মৌসুমে খেলেছেন মাত্র ২৬ মিনিট, আজ দেমিরের বদলি নেমেই বেনফিকার জন্যে হুমকি হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। দুর্দান্ত পেসের সাথে বল নিয়ন্ত্রণে সুযোগ তৈরি করেছেন। দারুণ এক ক্রস করেছিলেন, ডি ইয়ংয়ের হেডটাও ভালো ছিল যেমন তেমনই অডেসের সেভটাও ছিল দুর্দান্ত। তবে আরেকবার আরাহো গোল করে উদযাপনেই মেতে উঠেছিলেন, কিন্ত পরে দেখতে পান রেফারি অফসাইডের ফ্ল্যাগ তুলে দিয়েছেন।
যোগ করা সময়ে পিকের ফ্রি-হেডারও বাইরে চলে গেলে বার্সাকে গোলের দেখা না পেয়েই মাঠ ছাড়তে হয়। বেনফিকার ড্র নিশ্চিতে অবশ্য যথেষ্ট অবদান রয়েছে অতামেন্দির। ডিপাই আর দেম্বেলে দুজনে দুটি মুহুর্তে শট নিতেই যাবেন, এমন সময়ে অতামেন্দি এসে স্লাইডিং ট্যাকলে বাঁচিয়ে দিয়েছেন বেনফিকাকে। যার ফলে বার্সাকে ড্র নিয়েই সন্তষ্ট থাকতে হচ্ছে। যদিও এই ড্রয়ে বার্সার সন্তষ্ট থাকার সুযোগ নেই, কারণ বেনফিকা শেষ ম্যাচে কিয়েভের সাথে জিতলে বার্সারও নকআউট যেতে হলে বায়ার্নের সাথে জিততেই হবে