• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    তেল ক্লাসিকো ২.০ শেষে 'শেষ হাসি' হাসল পেপ গার্দিওলার ম্যান সিটি

    তেল ক্লাসিকো ২.০ শেষে 'শেষ হাসি' হাসল পেপ গার্দিওলার ম্যান সিটি    

    ‘তেল ক্লাসিকো’ ২.০, এতিহাদ। প্যারিসে পেয়ে এসেছিলেন তেতো স্বাদ, হারতে মোটেই পছন্দ না সিটি বস পেপ গার্দিওলার। পিএসজির বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচে তাই কড়ায় গণ্ডায় হারের জ্বালা ফিরিয়ে দিয়ে গেল ম্যানচেস্টার সিটি। দুই দল গতিময় অ্যাটাকিং ফুটবল খেললেও অন্তত প্রেসিংয়ের ধারে কাছেও ছিল না পচেত্তিনোর পিএসজি। এমবাপের শুরুর গোলের পরও স্টারলিং আর জেসুসের গোলে ২-১ গোলে হেরেছে পিএসজি।

    দুই দলই নিজদের লিগে ‘বড়’ দল, পছন্দ করে বল নিজের দখলে রাখতে। এই ক্যাটাগরিতে অবশ্য পেপ গার্দিওলা এক কাঠি সরেস, কোনভাবেই বলের দখল হারাতে চায় না তার দল। শুরুতে পিএসজি নিজেদের কাছে বল রাখার চেষ্টা করলেও সেটা ছিল বৃথা চেষ্টা। তীব্র গতির প্রেসিংয়ে পিএসজিকে নাজেহাল করে ফেলছিলেন মাহরেজ, বেরনাদো সিলভা, গুন্দোয়ানরা। ম্যাচের আধ ঘণ্টা থেকে শুরু করে প্রথমার্ধের শেষ পর্যন্ত একের পর এক পরীক্ষা দিতে হয়েছে সিটিজেনদের কাছে। বিশেষ করে মাহরেজ রাইট উইং থেকে কাট করে বল আছড়ে ফেলছিলেন পিএসজির বক্সে। তবে নাভাস ছিলেন বলে ভরসা, কিন্তু বক্সের মাঝে পিএসজির বড় ফাঁক বারবারই সমস্যা তৈরি করে গেছে ম্যাচের বিভিন্ন সময়ে।

    প্রথমার্ধে বলের দখল রাখতে ব্যর্থ হয়ে কৌশল বদলে দিলেন পচেত্তিনো। ডিফেন্ডিং ব্লকে চারজনকে রেখে নুনো মেন্দেস লেফট ফ্ল্যাংকে চাপ দিয়ে খেলা শুরু করলেন। ৪৯ মিনিটে দারুণ এক বল পেয়ে পাঠালেন মেসির কাছে, অন্যদিকে হাই ডিফেন্স লাইন ধরে রাখা সিটিজেনরা তখনও বুঝে উঠতে পারেনি কী হতে যাচ্ছে। নিজেদের পজিশনে ফের‍ত আসার আগেই মেসির ক্ষীপ্র গতির দৌড় আর নেইমারের সঙ্গে ওয়ান টু করে বল পেলেন আবারও বক্সে। চোখের পলকে সে বল চলে গেল ডান দিকে, বল ছুলেন না নেইমার; ডামি করার পর বল সোজা এমবাপের পায়ে। এদেরসনের পায়ের ফাক দিয়ে বল পাঠিয়ে দিলেন জালে। ক্লাসিক কাউন্টার অ্যাটাকে গোল। মেসি-নেইমার-এমবাপে-- তিনজনই এই গোলের কারিগর, সঙ্গে নুনো মেন্দেস ছিলেন এই গোল বানিয়ে দিতে অনবদ্য।

    তবে পিএসজির জন্য এতটুকুই বাহবা বরাদ্দ। গোল খেয়ে কৌশল পালটে ফেললেন পেপ গার্দিওলাও। ৫৩ মিনিটে ওলেক্সান্দার জিনচেঙ্কোকে (কেভিন ডি ব্রুইনা নন) উঠিয়ে নামালেন জেসুসকে, ফলস নাইনে তিনি নিলেন বেরনাদোর জায়গা, আর বেরনাদো নিচে নেমে গেলেন মাঝমাঠে।

    ভোজবাজির মত ফল মিলল ৬২ মিনিটে। বেরনাদো আর কানসেলো বারবার বাম ফ্ল্যাংকে পিএসজি ডিফেন্স টেনে নিয়ে এনে ফাকা জায়গা তৈরি করছিলেন মাঝে। অদ্ভুত সুন্দর এক পাসে রদ্রি খুঁজে নিলেন পেছন থেকে দৌড়ে আসা ওয়াকারকে। অফসাইডের ফাঁদ কাটিয়ে তার বাড়ানো বল জেসুসের কাছে। জেসুস নিয়ন্ত্রণ না রাখতে পারলেও ঠিকই বল পাঠিয়ে দেন আনমার্কড স্টার্লিংয়ের কাছে। তার গোলে সমতায় ফিরল ম্যান সিটি। 

    খেলাটা অবশ্য ৭৪ মিনিটে ঘুরিয়ে দিতে পারতেন নেইমার। এদেরসনকে রঙ ফুটেড অবস্থায় পেয়ে বল মেরেছিলেন তার বায়ে। কিন্তু এতই বায়ে মারলেন যে নেটের বেশ বাইরে দিয়ে চলে গেল বল। এমন সুযোগ মিস করলেও মিস করেননি তারই ব্রাজিল সতীর্থ জেসুস। মাহরেজের আরও একটি চমৎকার ক্রস এবার বক্সের বায়ে পেয়ে যায় বেরনাদো সিলভাকে। নিজে না মেরে উলটো নাভাসকে ধোকা দিলেন যেন তিনি, বাকি কাজ টুকু সারলেন জেসুস। এমন কোণে মারলেন যা নাভাসের পক্ষে বাঁচানো সম্ভব নয়। দুই গোল দিয়ে ম্যাচে শেষ পেরেকটা যেন ঠুকে দিল সিটি।

    দৃষ্টিকটু ব্যাপার একটাই, পিছিয়ে থেকেও নিজেদের হাফে বিন্দুমাত্র প্রেস করেনি পিএসজির নামী-দামী ত্রয়ী। ইদ্রিসি গানা গেইকে তুলে আনহেল দি মারিয়াকে নামিয়েও কোন লাভ হয়নি পচেত্তিনোর। তাই তেল ক্লাসিকো ২.০ শেষে ডাগআউটে হাসিটা চওড়া হলো পেপ গার্দিওলারই, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই গ্রুপ পর্বের মিশন শেষ করাটা তার জন্য আনন্দেরই বটে। আর তেল ক্লাসিকোর হিসেবে স্কোরলাইন দাঁড়ালো পেপ গার্দিওলা ১-১ মউরিসিও পচেত্তিনো। তবে খুব শীঘ্রই যে ম্যানচেস্টার ডার্বির উত্তাপে তাদের দেখা হয়ে যাবে কিনা, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আর সেটা যদি হয়ও, তবে তাদের হিসাব-নিকাশের খাতা নিঃসন্দেহে বড়ই হতে থাকবে।