লিটন-মুশফিকের সকালের হতাশা শেষে বিকেলে তাইজুলদের নিস্ফলা দিন
১ম টেস্ট, চট্টগ্রাম (টস- বাংলাদেশ/ ব্যাটিং)
বাংলাদেশ ৩৩০, ১১৪.৪ ওভার (লিটন ১১৪, মুশফিক ৯১, মিরাজ ৩৮*, হাসান ৫/৫১, ফাহিম ২/৫৪, আফ্রিদি ২/৭০)
পাকিস্তান ১৪৫/০, ৫৭ ওভার (আবিদ ৯৩*, শফিক ৫২*, মুমিনুল ০/১২, রাহী ০/৩০)
২য় দিন, স্টাম্পস
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম বাংলাদেশের প্রথম দিনের শেষটা যতটা ভালো হয়েছিল দ্বিতীয় দিনের শুরুটা হল ততটাই খারাপ। আগের দিন বিপর্যয় সামলে হাল ধরেছিলেন মুশফিকুর রহিম-লিটন দাস। এদিন আর সেরকম কিছুই হল না বলতে গেলে। মেহেদি হাসান মিরাজ চেষ্টা করেছিলেন ৩৮ রান করে বাংলাদেশকে যতদূর সম্ভব এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। তবে তাকে কেউই সঙ্গ দিতে পারেনি। এক প্রান্ত তাই মিরাজ আগলে রাখলেও বাংলাদেশ গুঁটিয়ে যায় প্রথম সেশনেই, ৩৩০ রানে। বাংলাদেশের হতাশা আরও বাড়িয়ে পুরো দিন অবিচ্ছিন্ন থেকেই কাটিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি।
জুটি অবশ্য ভাঙার সুযোগ পেয়েছিলো বাংলাদেশ। আবিদ আলী এক প্রান্তে ছুটলেও অন্য প্রান্তে অভিষিক্ত আব্দুল্লাহ শফিক এগিয়ে চলছিলেন গুটি গুটি পায়ে। অভিষেকের স্নায়ুচাপ বা খেলার ধরন-কারণ যাই হোক স্কোরিং শট তার ছিল পরিমিত। সেই শফিকই ১৩তম ওভারে তাইজুল ইসলামের আর্ম বল পড়তে পারেননি। জায়গা বানিয়ে ঐ বলে কাট করতে গেলে বলের গতি বুঝতে পারেননি। বাংলাদেশের ফিল্ডাররা আবেদন করল ঠিকই, কিন্তু তাতে ছিল না কোনও প্রাণ। ব্যাট না প্যাড কোথায় আগে লেগেছে ঠাহর করে উঠতে না পেরে উতসাহ দেখালেন না তাইজুল-লিটন কেউই। মুমিনুল হকও আম্পায়ারের ডাকে সম্মতি দিয়ে রিভিউ নিলেন না। পরে রিপ্লেতে দেখা গেল, প্যাডে তো আগে লেগেছিলও, রিভিউ নিলে দেখা মিলত তিন লাল দাগের।
এরপর বাংলাদেশের চার বোলার শুধু যেন হাতই ঘুরিয়ে গিয়েছেন। আবিদ-শফিক কোনও সুযোগ সেই অর্থে দেননি। আবিদ ফিফটি পূর্ণ করার পর ছুটছিলেন সেঞ্চুরির পথে। তারই মাঝে ছুঁয়েছেন ১০০০ টেস্ট রানের মাইলফলক, যা পাকিস্তানের হয়ে চতুর্থ দ্রুততম। আর অভিষেকেই ফিফটির দেখা পেয়ে গিয়েছেন রয়েসয়ে খেলা শফিকও। বাংলাদেশের বোলারদের ঝুলিতে উইকেটের জায়গায় জমা হয়েছে শুধুই হতাশা।
হতাশায় ভরা দিনের শুরুটাও হয়েছিল একইভাবে। দিনের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে হাসান আলীর ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন লিটন; আগের দিনের সাথে মাত্র ১ রান যোগ করে করতে পারেন ১১৪। অভিষিক্ত ইয়াসির আলীকে উইকেটে আসার পর থেকে খুব একটা স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি, রিভিউ কলে বেঁচে গিয়েছেন একবার। তবে তার কিছুক্ষণ পরেই হাসানের সেই ভেতরে ঢোকা সিমিং ডেলিভারিতে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন ৪ রান করে। আরেক প্রান্ত আগলে রাখলেও চাপ যে মুশফিককে কিছুটা পেয়ে বসেছিল তা আঁচ করা যাচ্ছিল। প্রায় ৫ ওভার ধরে ছিলেন ৯১ রানে, তামিম ইকবালের সাথে বাংলাদেশের যৌথ সর্বোচ্চ টেস্ট রান সংগ্রাহক হওয়া থেকে ১ রান দূরে। কিন্তু থামলেন সেই ৯১ রানেই, ফাহিম আশরাফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে।
মুশফিক ফেরার পরেও অন্য প্রান্তে থাকা মেহেদি হাসান মিরাজ ছিলেন প্রাণবন্ত। একজন সঙ্গী না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়েই অবশ্য তাকে থাকতে হয়। তাইজুল কিছুক্ষণ উইকেটে থেকে শাহীন শাহ আফ্রিদির শিকার হয়ে ফেরেন ১১ রানে। এরপর নিজের স্ট্রাইক ধরে রাখার বিষয়ে যথেষ্ট সাবধান ছিলেন মিরাজ। কিন্তু বিপদ ঘটল হাসানের আরেক ওভারেই। দ্বিতীয় বলে ডাবল নিবেন ভেবে দৌড় দিয়ে সিঙ্গেল নিয়েই থেমে যেতে হল। যেই আশংকা করেছিলেন তাই হল। পরের দুই বলেই হাসান ফেরালেন আবু জায়েদ রাহী ও এবাদত হোসেনকে। সেই সাথে বছরের ৫ম ৫ উইকেটও পূর্ণ করেন তিনি। সেই যে প্রথম সেশনেই গুঁটিয়ে যাওয়ার হতাশা নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিল বাংলাদেশ, সেই হতাশার পারদের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে আবিদ-শফিক।