স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ড্র করেও যেন 'জিতে গেল' ক্যারিকের ইউনাইটেড
স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ, ৫০ মিনিট। আকাশ থেকে বল নেমে এলো জর্জিনিয়োর পায়ে। উচ্চতার কিংবা নিজের মনোসংযোগে ব্যাঘাত- যে কারণেই হোক না কেন; বলের তাল হারালেন তিনি। অন্যদিকে ঝড়ের গতিতে ছুটে আসছেন স্যানচো-র্যাশফোর্ড। বল নিয়ে জর্জিনিয়োকে যখন পাশ কাটিয়ে স্যানচো চলে যাচ্ছিলেন, ততক্ষণে বুঝে গেছেন- সর্বনাশটা হয়ে গেছে। মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন, আর দেখলেন মেন্ডিকে ফাকি দিয়ে স্যানচো গোলটা করে ফেলেছেন। গত কয়েক সপ্তাহে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ঝড়-ঝাপ্টার পর স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে এমন গোল তো তাদের পরম আরাধ্য! একের পর এক গোল হজম করে ম্যাচ হার, কোচ বরখাস্ত হওয়া, বোর্ডের দুর্দশা- এসব কিছুর মাঝেও চেলসিকে এক পর্যায়ে হারানোর স্বপ্ন দেখছিল রেড ডেভিলরা। সে স্বপ্ন সফল হয়নি যদিও, ওয়্যান বিসাখার ভুলে পেনাল্টিতে চেলসিকে ফিরিয়েছেন সেই জর্জিনিয়োই। ম্যাচ শেষ হয়েছে ১-১ ড্র দিয়ে। তবে এই ড্র থেকে ম্যান ইউনাইটেডের হারানোর কিছু নেই, বরং যা হারানোর হারিয়েছে চেলসিই।
অন্তর্বতীকালীন ‘অন্তর্বর্তী ম্যানেজার’ মাইকেল ক্যারিকের শুরুর একাদশ দেখে প্রথমেই কিছুটা চমকে ওঠার কথা। এমন বিগ, ক্রাঞ্চ ম্যাচে একাদশেই নেই তাদের বড় তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ম্যাটিচ-ফ্রেড-ম্যাকটমিনে তিন হোল্ডিং মিডফিল্ড নিয়ে ম্যাচ শুরু করা ম্যান ইউনাইটেডের চেষ্টাই ছিল চেলসি থেকে আসা সব চাপ হজম করে যাওয়া। ক্যারিকের টোটকাটা কাজেও দিয়েছে। চেলসি একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে ম্যান ইউনাইটেড বক্সে। সবকিছুই একের পর এক গিলে খেয়েছে ম্যান ইউনাইটেড ডিফেন্স।
তবে ইউনাইটেডকে এভাবে খেলতে দেখাটা বেশ দৃষ্টিকটু বটে। বলের পজেশন রাখতে ব্যর্থ হওয়া, লং বলে রাউট ওয়ান ফুটবল খেলা- কিন্তু ক্যারিক সম্ভবত এটাই চাচ্ছিলেন। চেলসির কোন ভুলের জন্য ওঁত পেতে অপেক্ষা করছিল ইউনাইটেড। তাদের আশা সফল হলো। জর্জিনিয়োর এমন ‘হাউলার’-এ ম্যান ইউনাইটেডই এগিয়ে গেল প্রথমে।
শেষ কয়েকমাস মোটেও ভালো যাচ্ছে না জর্জিনিয়ো। টমাস টুখেলের অধীনে দারুণ এক মৌসুম কাটিয়েছেন গত বছর। জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ-ইউরো-সুপার কাপ সবই। কিন্তু সবই যে ম্লান হয়ে গিয়েছিল ঠিক এক মাস আগে। তার পেনাল্টি মিসে সুইজারল্যান্ডকে হারাতে ব্যর্থ হয়েছিল ইতালি, বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার সমীকরণটা সেখানেই জটিল হয়ে যায় ইতালির জন্য। সে পেনাল্টি মিসের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করার সুযোগ পেয়েছেন জর্জিনিয়ো। সেই সঙ্গে কিছুক্ষণ আগের ভুলের প্রায়শ্চিতটাও যেন করলেন স্পট কিক থেকে গোল করে। ছোট সেই লাফটা অনেক দিন ধরে দিচ্ছিলেন না, আজ সেই লাফে ডি গেয়াকে পাঠালেন ভুল দিকে। চেলসি ম্যাচে ফিরেছিল সমতায়।
ম্যান ইউনাইটেড আজ ‘অ-ম্যান ইউনাইটেড’ সুলভ খেলা খেললেও চেলসি তাদের নিজের খেলাটাই খেলেছে। পজেশন-প্রেসিংয়ের সমন্বয়ে সব কিছুই ঠিকঠাক মত করেছে ব্লুজরা। শুধু কাজের কাজটা হয়নি ফাইনাল থার্ডে। ডি গেয়াকে প্রথমার্ধে একবার প্রায় পরাস্তই করে ফেলেছিলেন রুডিগার। বক্সের অনেক বাইরে থেকে নেওয়া শট গোলবারে লেগে বাইরে চলে যাওয়ায় সেবার হাফ ছেড়ে বাঁচে রেড ডেভিলরা।
ঠিক ৬০ মিনিটের মাথায় মাঠে নামেন রোনালদো। কিন্তু তার জন্য ম্যাচে তেমন কিছু করার ছিল না সুযোগের জন্য অপেক্ষা করে থাকা ছাড়া। তবে সেরকম কোন সুযোগ আসেনি তার জন্য; যদিও এসেছিল ফ্রেডের জন্য। চেলসির গোলকিপার মেন্ডি সচরাচর এই মৌসুমে ভুল করেননি, কিন্তু ৮৮ মিনিটে তিনি যেন ফ্রেডের পায়েই তুলে দিলেন বলটা। ফ্রেডও ফিরতি কায়দায় মেন্ডির হাতে বল ফিরিয়ে না দিলে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ থেকে ‘অসম্ভব’ এক জয় নিয়েই হয়তো বাড়ি ফিরত ইউনাইটেড।
চেলসি এরপরও গোল বের করার চেষ্টা করে গেছে, রিস জেমস আগের মতই ছিলেন বিপজ্জনক। কিন্তু তাকে আটকে রাখার বড় বাহবা পাবেন ম্যাকটমিনে। ম্যাচের ঠিক শেষ মুহূর্তে রুডিগার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন। তার নেওয়া ভলিটা অবশ্য গোলে না গিয়ে আছড়ে পড়ে দর্শক স্ট্যান্ডে, ফলে ড্র নিয়েই শেষ হয় ম্যাচ।
চেলসির জন্য এই ড্রতে ক্ষতিটাই বেশি। ঘাড়ের কাছে আরও জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে লিভারপুল-ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ড্র থেকেও সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরবে রেড ডেভিলরা, বিশেষ করে মাইকেল ক্যারিক। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার হিসেবে যে অপরাজিত তিনি! চ্যাম্পিয়নস লিগে ভিয়ারিয়ালকে হারানোর পর চেলসির সঙ্গে ড্র ম্যানেজার হিসেবে জীবনবৃত্তান্তর জন্য চমৎকারই বলা যায়। অন্তত সোলশার যাবার পর দলকে আর হারতে দেননি তিনি, তাই বেশ শান্তি নিয়েই আপাতত ম্যানেজারের বড় দায়িত্ব কাঁধ থেকে নামিয়ে রাখবেন তিনি। অন্যদিকে ম্যান ইউনাইটেডের জন্য নতুন এক যুগ অপেক্ষা করছে তাদের নতুন ম্যানেজার র্যালফ রানিয়েকের অধীনে। অন্তত আজ যে ফুটবল তারা খেলেছে, সেরকম কিছু যে কখনই তারা রানিয়েকের অধীনে খেলবে না তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা চলে।