হতাশার এক দিন শেষে মিরাকলের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
১ম টেস্ট, চট্টগ্রাম (টস- বাংলাদেশ/ ব্যাটিং)
বাংলাদেশ ৩৩০ ও ১৫৭, ৫৬.২ ওভার (লিটন ৫৯, ইয়াসির ৩৬, মুশফিক ১৬, আফ্রিদি ৫/৩২, সাজিদ ৩/৩৩, হাসান ২/৫২)
পাকিস্তান ২৮৬ ও ১০৯/০ ৩৩ ওভার (আবিদ ৫৬*, শফিক ৫৩*, রাহী ০/১৩, এবাদত ০/২৩)
৪র্থ দিন, স্টাম্পস
আগের দিনের শেষ সেশনের ধসের পর চতুর্থ দিনে বাংলাদেশকে করতে হত বিশেষ কিছুই। দুর্ভাগ্য ও শাহীন শাহ আফ্রিদি ঝড়ে সেটা হয়ে ওঠেনি। অভিষেকই দারুণ মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইয়াসির আলী; বাঁধ সাধলেন আফ্রিদি। আফ্রিদির বাউন্সারে হেলমেটের পিছনে বল লাগায় ধরাশায়ী হন ইয়াসির। এরপরও খেলে যাচ্ছিলেন। তবে কয়েক ওভার পরেই বুঝতে পারলেন খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন না। ৩৬ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়েই ফিরতে হল তাকে। লড়াইটা এরপর চালিয়ে গিয়েছিলেন লিটন দাস, খেলেছিলেন ৫৯ রানের ইনিংস। তাতেই বাংলাদেশ পাকিস্তানকে বেঁধে দিতে পেরেছিল ২০২ রানের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যের দিকে রীতিমত ছুটছেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার, ১০৯ রানের অবিছিন্ন জুটি গড়েই দিন শেষ করেছেন তারা।
আব্দুল্লাহ শফিক-আবিদ আলী যা করেছেন প্রথম সেশনে মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলীর কাছে সেটাি ছিল কাম্য। প্রথম সেশনে অবশ্যই কাজটা ব্যাটারদের জন্য বেশ কঠিন। শফিক ও আবিদ দুজনেই ফিফটি তুলে নিয়েছেন। বাংলাদেশের দিন শুরু করা মুশফিক ও ইয়াসিরের জন্য তা করতে হয়ত দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হত। সে কারণেই বোধহয় দিনের শেষ আর শুরুর ব্যাটিংয়ে দেখা মিল বিস্তর ফারাকের। দিনের প্রথম ওভারেই হাসান আলীর বলের লেংথ পড়তে না পারে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুশফিক। বল সামান্য ভেতরে ঢুকে উপড়ে ফেলল মুশফিকের অফ স্টাম্প। তবে মুশফিকের বিদায়ে আশাহত না হয়ে দারুণ খেলছিলেন ইয়াসির। মাটি কামড়েই যে শুধু পড়েছিলেন তা না; খারাপ বলের যোগ্য জবাব দিয়ে বের করে নিচ্ছিলেন বাউন্ডারিও। আগের ইনিংসের নায়ক লিটনও দিচ্ছিলেন যোগ্য সঙ্গ। কিন্তু বিধিবাম হল আফ্রিদির ঐ বাউন্সারেই।
ইয়াসিরের বিদায়ের পর মেহেদি হাসান মিরাজও এসে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। সাজিদ খানের তীক্ষ্ণ অফ ব্রেকে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে তিনি ফেরেন ১১ রানে। ইয়াসিরের কনকাশন বদলি হয়ে এরপর নামেন নুরুল হাসান। লাঞ্চের আগের ওভারেই জোরালো আবেদন ও রিভিউয়ের পরেও বেঁচে গিয়েছিলেন। লাঞ্চের পর জড়তা কাটিয়েছিলেন সাজিদকে দুই চার মেরে। এরই মাঝে আরও একবার সাবলীল স্ট্রোকপ্লের পসরা সাজিয়ে লিটন পূর্ণ করেন ফিফটি। চাপের কোনও প্রভাব তার ইনিংসে যেন পড়েইনি মনে হল। তবে প্রতিরোধের দেয়াল ভেঙে দিয়ে পরের ওভারে সেই সাজিদের আঘাতেই নুরুল ফেরেন ১৫ রানে। টেইলএন্ডার নিয়ে লিটনকে পাড়ি দিতে হত বন্ধুর পথ, করতে হত প্রায় অসম্ভব কিছু। পারলেন না তিনি, ফিরলেন আফ্রিদির কাছে এলবিডব্লিউ হয়ে ৫৯ রানে। দুই বল পরেই আবু জায়েদ রাহীকে ফিরিয়ে নিজের ৫ উইকেট পূর্ণ করেন আফ্রিদি। পরের ওভারে তাইজুলকে ফিরিয়ে এরপর বাংলাদেশের ইনিংসের ইতি টানেন সাজিদ। সেই যে পাকিস্তান দুটো সেশন নিজেদের করে নিয়েছিল তার ব্যতিক্রম হয়নি শেষ সেশনেই। শফিকের ৫৩* ও আবিদের ৫৬* রানে প্রয়োজনীয় রান তারা নামিয়ে এনেছেন ৯৩ রানে। শেষদিনে বাংলাদেশকে তাই নিজেদের ঝুলি থেকে জাদুর কাঠি বের করতেই হবে; নয়ত ম্যাচে সহজ জয় পেতে যাচ্ছে পাকিস্তান।