ম্যান ইউনাইটেড-আর্সেনাল ‘ক্লাসিক’, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে স্বস্তির সুবাতাস ও রোনালদোর ৮০১*
এই এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যাওয়া যায় বাকি সবকিছু। দুয়ো ধ্বনির ঝাঁঝ, ‘বুড়ো হাড়ে ক্ষয় ধরার’ মত কড়া কথা, কিংবা ঘরের ভেতর এক চাপা অস্বস্তি- সবকিছু যেন এক নিমিষে ভুলে গেল ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। ভুলে গেলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-ব্রুনো ফারনান্দেজরা। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে ক্লাসিক এক ম্যাচের জন্ম দিয়ে সিআরসেভেন গড়লেন আরেক ইতিহাস। ৩-২ গোলে গানারদের হারানোর পথে এঁকেছেন নিজের পদচিহ্ন, হয়ে গেছেন ক্লাব-দেশের হয়ে ৮০০ গোল করা পৃথিবীর একমাত্র ফুটবলার। আর সবকিছুই যেন উপর থেকে প্রত্যক্ষ করলেন এক ‘গডফাদার’।
শুধু রোনালদো নন, ব্রুনো ফারনান্দেজের জন্যও এই ম্যাচ স্বস্তির। ১৫ ম্যাচ গোলশূন্য, এমন বাজে সময় ক্যারিয়ারে কখনোও কাটেনি। রোনালদোর ঐতিহাসিক মুহূর্ত আসার আগেই ব্রুনো পেয়েছেন চাপা সেই অস্বস্তি থেকে মুক্তি। তার গোলেই যে খেলায় সমতায় ফিরেছিল ম্যান ইউনাইটেড।
অথচ ম্যাচের ১৩ মিনিটেই অদ্ভুত কায়দায় গোল হজম করে বসেছিল রেড ডেভিলরা। ফ্রেডের পায়ের চাপ ওপেন প্লে’র মাঝেই পড়ে গিয়েছিলেন ডি গেয়া। ফাঁকা পোস্ট পেয়ে এমিল স্মিথ রো সোজা বল পাঠিয়েছিলেন জালে, রেফারি আন্দ্রে ম্যারিনার রীতিমত বিভ্রান্ত! ডি গেয়া ফাউলের স্বীকার হয়েছেন নাকি ইনজুরড হয়েছেন বোঝা যাচ্ছিল না কিছুই। ভিএআরের কল্যানে অবশ্য মিলল উত্তর। নিজের প্লেয়ারের ‘গুঁতো’ খেয়ে পড়ে গেলে তো আর সেই গোল বাতিল হয়না। সিদ্ধান্ত এলো গোলের, আবারও ভুলের খড়্গ ফ্রেডের কপালে, যার পারফরম্যান্স নিয়ে ম্যান ইউনাইটেডের ভেতরেই আছে নানা সমালোচনা।
কিন্তু সেই ফ্রেড পরে পুরোটাই পুষিয়ে দিয়েছেন কড়ায় গণ্ডায়। ফারনান্দেজের গোলে তার ছিল বড় ভূমিকা। আর্সেনালকে ফাইলার থার্ডে আটকাতে তিনি ছিলেন তৎপর। কিন্তু এই ম্যাচের গল্পটা যে অন্যখানে।
‘রোনালদো প্রেস করেন না’, ‘ক্লাচ মোমেন্ট ছাড়া কেন গোল আসে না’, ‘সিআরসেভেনের ধার শেষ’- এমন সব কথা কম শোনেননি ম্যান ইউনাইটেডে আসার পর। নিজেও ঠিক জবাবটা দিতে পারছিলেন না। মাঝে সোলশার ব্যর্থতার বোঝা মাথায় নিয়ে চলে গেছেন, ম্যান ইউনাইটেড হেরেছে অনেকগুলো ম্যাচ। আজ আর খোলসে থাকেননি। সব সমালোচনা টেবিলের অন্যপাশে সরিয়ে রেখে পূর্ণ করেছেন তার ৮০০ গোলের ট্যালি, যা পৃথিবীতে আগে কেউই কখনও করতে পারেনি। র্যাশফোর্ডের দেওয়া বল বক্সের একদম মাঝে পেয়ে র্যামসডেলকে ফাঁকি দিয়ে বল পাঠিয়েছেন জালে। আর স্ট্যান্ডে চিরাচরিত উদযাপনের মাঝে বুকে টেনে নিয়েছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস।
থামতে পারতেন সেখানেই, কিন্তু না। অন্যদিকে মার্টিন ওডেগার্ড সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাচে এনেছিলেন সমতা। আবার সেই ওডেগার্ডের ভুলেই রেড ডেভিলরা পায় পেনাল্টি। চোখ বুজে বড় এক নিঃশ্বাস নিয়ে মুহূর্তেই গোলের ট্যালি ৮০১ এ নিয়ে গেছেন পেনাল্টি থেকে। ‘সিইউউ’ করেছেন সবাইকে নিয়ে। আর সে গোলটাই যথেষ্ট ছিল আর্সেনালকে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে থামিয়ে দেওয়ার জন্য।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন মাইকেল ক্যারিকও। ভিয়ারিয়াল-আর্সেনাল জয়, চেলসির সঙ্গে ড্র- এরচেয়ে ভালোও কিছু আর হয়তো আশা করতে পারতেন না তিনি। কেয়ারটেকার ম্যানেজার হিসেবে শতভাগ অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে ‘সাইন অফ’ করলেন তিনি, সরে দাঁড়াবেন সেই ‘গডফাদার’-এর জন্য। রবিবার ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ম্যাচে যিনি এসে দাঁড়াবেন ইউনাইটেডের ডাগআউটে। গেগেনপ্রেসিং-এর গডফাদার র্যালফ রানিয়েকের অধীনে ম্যান ইউনাইটেড খেলবে ‘হেভি মেটাল’ ফুটবল। তবে তার আগে স্ট্যান্ড থেকে পুরনো ইউনাইটেডের এমন জয় নিশ্চয়ই তার জন্যও ছিল স্বস্তির