রোমাঞ্চকর 'দ্যার ক্লাসিকার', 'বিতর্কিত' পেনাল্টি ও ডর্টমুন্ডের জালে লেভানডফস্কির 'জোড়া'
সবশেষ ছয় ‘দ্যর ক্লাসিকা’তে বায়ার্নের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। সিগনাল ইদুনা পার্কে হুলিয়ান ব্রান্ডটের আচমকা গোলে মনে হচ্ছিল- এবার বোধহয় বরুসিয়া শক্তি সঞ্চার করে চ্যালেঞ্জ জমিয়ে রেখেছিল বায়ার্নের জন্য। কিন্তু নাগলসম্যানের ফরোয়ার্ড প্রেসিং বাভারিয়ানদের ঠেকানোর মত শক্তি বারবার খুঁইয়েছে মার্কো হোসের শিষ্যরা। শেষমেষ নানা নাটকীয়তা আর ‘বিতর্কিত’ সিদ্ধান্তের পর বরুসিয়ার ডেরা থেকে ২-৩ গোলের জয় নিয়েই ফিরলেন লেভানডফস্কিরা, আর নিজেও সাবেক দলের বিপক্ষে করেছেন জোড়া গোল।
এর আগের কয়েক বছরের ‘ক্লাসিকা’গুলো ছিল নিতান্তই একপেশে। বেশিরভাগেই বায়ার্ন ম্যাচে দাপট দেখিয়ে জিতে নিয়েছে। ডর্টমুন্ডের জন্যও খারাপ সময় গেছে বেশ। এবার অবশ্য বুন্দেসলিগা শিরোপার দৌড়ে বায়ার্ন-ডর্টমুন্ডই আছে সবার উপরে। ডর্টমুন্ডের সামনে সুযোগ ছিল বায়ার্নকে পেছনে ঠেলে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। পাঁচ মিনিটের মাথায় হুলিয়ান ব্রান্ডটের গোলে সেই স্বপ্নই দেখছিল হোসের ডর্টমুন্ড।
কিন্তু সেই স্বপ্ন তিন মিনিট পরেই প্রেসিং মেশিনে পিষে দেন থমাস মুলার-রবার্ট লেভানডফস্কি। নাগলসম্যানের বল উইনিং গেগেনপ্রেসিংয়ে ম্যাট হামেলস পরাস্ত হয়ে যান ডর্টমুন্ডের মাঝমাঠে। তাকে রীতিমত ঘোল খাইয়ে মুলার আলতো মাথা ছুঁয়ে বল এগিয়ে দেন লেভানডফস্কির সামনে। রীতিমত ফাঁকা ডি-বক্সে সময় নিয়ে বরুসিয়ার গোলকিপার কোবেলকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান বায়ার্নের পোলিশ স্ট্রাইকার। ব্যালন ডি’অরের ‘স্ট্রাইকার অফ দ্য ইয়ার’- তো আর এমনি এমনি হননি।
প্রথমার্ধে বায়ার্নের প্রেসের কাছে বারবার বল হারিয়েছে ডর্টমুন্ড। হালান্ড এক-দুইবার সামনে বুদ্ধিদীপ্ত দৌড়ে ফাঁকা জায়গা বের করলেও লুকাস হারনান্দেজের মার্কিং এড়াতে পারছিলেন না। উলটো আবারও ডিফেন্সিভ ভুলে ৪৩ মিনিটে কিংসলে কোমানের গোলে ম্যাচে পিছিয়ে যায় বরুসিয়া ডর্টমুন্ড।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য চাঙ্গা এক ডর্টমুন্ডকে দেখা গেল। জুড বেলিংহামের দেওয়া বল যখন বক্সে হালান্ড পান, তখন তিনি এমন কোণে দাঁড়িয়ে যেখান থেকে গোল করা প্রায় অসম্ভব। হালান্ড বলে সময় নিয়ে পজিশন ঠিক করলেন, শরীরটাকে বাঁয়ে বাঁকিয়ে শট নিলেন গোলে। বাঁকানো সে বল জালের একেবারে ডান কোণে আছড়ে পড়ল, সমস্ত শক্তি দিয়েও ঠেকাতে পারেননি নয়্যার। হালান্ডের সমতাসূচক গোলে ফেটে পড়ল পুরো সিগনাল ইদুনা পার্ক।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ম্যাচের এ এমন এক চিত্র ঠিক, কিন্তু ৬০ মিনিটের পর ডার্বির তাপটাও লাগতে শুরু করল। কড়া ট্যাকল-ইন্টারসেপশনে রেফারিও বারবার বাঁশি বাজাতে বাধ্য হচ্ছিলেন। ৬৫ মিনিটে লাফিয়ে ওঠা উপামেকানোর মাথা গিয়ে আঘাত করে হুলিয়ান ব্রান্ডটের খুলির ডান পাশে। সে ধাক্কায় মাটিতে পড়েছেন আরও বাজেভাবে, সঙ্গে সঙ্গেই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। শেষমেষ স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
তবে ম্যাচের সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আসে ভিএআরে বায়ার্নকে দেওয়া পেনাল্টিতে। রিপ্লেতে বারবার দেখা যায়, বায়ার্নের কর্নার ক্লিয়ার করার জন্য বক্সের ভীড় থেকে সরার সময় কনুইয়ের একটু উপরে গিয়ে বল লাগে ম্যাট হামেলসের। রেফারি ভিএআরে সেটিকে হ্যান্ডবল বলে পেনাল্টি দেন, যদিও হ্যান্ডবলের ‘নতুন নিয়ম’-এ এমন পরিস্থিতিতে হ্যান্ডবল ডাকার জন্য নিরুৎসাহিত করা হয়েছে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘আইএফএবি’ থেকে। সে পেনাল্টি থেকে গোল করে জোড়া পূর্ণ করেন লেভানডফস্কি।
চার নম্বর গোলটাও খেতে পারত ডর্টমুন্ড, যদি না ৯৮ মিনিটে তোলিসো ডর্টমুন্ডের ফাঁকা পোস্ট মিস না করতেন। শেষ মুহূর্তের কর্নারে কোবেল বেরিয়ে আসায় বক্স ছিল ফাঁকা। কিন্তু তোলিসোর নেওয়া শট খুঁজে পায়নি জাল। মাঝে লাইনসম্যানের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে ডাগআউট ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে ডর্টমুন্ড ম্যানেজার হোসেকে। নাগলসম্যানও শেষ দিকে এসে ধৈর্য্য হারিয়েছেন।
ডার্বিতে ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে নিজেদের শীর্ষস্থান আরও শক্ত করেছে বায়ার্ন। চ্যালেঞ্জ জানালেও আবারও নতুন করে ছক কষতে হবে ডর্টমুন্ডকে। এদিকে এই জয়ে বার্সেলোনার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে আত্মবিশ্বাস নিয়েই নামবে বায়ার্ন মিউনিখ, যেখানে কীনা বার্সেলোনা নিজেদের মাঠে আজ বেতিসের কাছে হেরেছে ১-০ গোলে।