দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ে অবিশ্বাস্য পরাজয়ের সামনে বাংলাদেশ
২য় টেস্ট, মিরপুর (টস- পাকিস্তান/ ব্যাটিং)
পাকিস্তান ৩০০/৪, ৯৮.৩ ওভার (বাবর ৭৬, আযহার ৫৬, রিজওয়ান ৫৩*, তাইজুল ২/৭৩, খালেদ ১/৪৯, এবাদত ১/৮৮)
বাংলাদেশ ৭৬/৭, ২৬ ওভার ( শান্ত ৩০, সাকিব ২৩*, সাজিদ ৬/৩৫)
৪র্থ দিন, স্টাম্পস
দুই দিনে খেলা হয়েছিল মোটে ৬.২ ওভার। টেস্টে কোনও ফলাফল না আসাটাই সম্ভাব্য ফল ছিল। কিন্তু চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে যা হলও তাতে মনে হচ্ছে পাকিস্তান আরও একটি জয় দিয়েই সফর শেষ করতে পারে। ৩০০ ছোঁয়ার পর বাবর আজম ইনিংস ঘোষণা করার পর ফলোঅন এড়াতে বাংলাদেশকে করতে হত মোটে ১০১ রান। সাজিদ খানের স্পিন বিষে নীল হয়ে বাংলাদেশ এখন সেটাও করতে পারবে নাকি সন্দেহ রয়েছে।
সাজিদ খান উইকেট কাজে লাগিয়েছেন, তীক্ষ্ণ টার্ন আদায় করে নিয়েছেন। তবে ৭৫ রানে ৭ উইকেট হারানোর পেছনে সাজিদের যতটা না কৃতিত্ব তার চেয়ে বেশি দায়ভার চাপাতে হচ্ছে বাংলাদেশের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের ওপর। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হকের কথাই ধরুন। ২২ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে তখন শঙ্কায় বাংলাদেশ। অথচ তখন তিনি সাজিদের বল সামান্য ঠেলে দিয়েই তেড়েফুঁড়ে সিঙ্গেলের জন্য দৌড় দিলেন এমনভাবে যেন তিনি কোনও লক্ষ্যতাড়ায় নেমেছেন। এমনকি বল যে হাসান আলীর কাছে সরাসরি চলে যাচ্ছে সেটাও তিনি বুঝে ওঠার আগেই দিয়েছেন ভোঁদৌড়। ফলাফল হাসানের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়ে মুমিনুলের ফেরা, সেটাও মোটে ১ রানে।
মুমিনুল সাজিদকে কিছুটা ভয় পেয়েই এই কাজ করেছিলেন কিনা তা অবশ্য জানার উপায় নেই। তবে সাজিদ ততক্ষণে বাংলাদেশের মনে ভীতি সঞ্চার করেছে এটাও সত্য। অভিষিক্ত মাহমুদুল হাসান জয় ফ্রন্টফুটে ডিফেন্ড করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। সাজিদের ভাসিয়ে দেওয়া বল লাফিয়ে ওঠায় এরপর সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে পয়েন্টে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ফিরে যান সাদমান ইসলামও।
সেই যে দুই ওপেনারকে ফিরিয়েছিলেন তার ধারাবাহিকতায় শেষ সেশনে পান আরও উইকেটের দেখা। চা-বিরতির ঠিক আগে মুমিনুল যেরকম কান্ডজ্ঞ্যানহীন কাজ করলেন, বিরতির পর অনেকটা সেরকম কাজ করলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। আগের বলেই দারুণ এক চার মারার পর সাজিদের নিরীহ একটা বল তিনি সরাসরি তুলে দিলেন শর্ট মিড উইকেটের হাতে। তার দেখানো পথে হেটে লিটন দাসও এরপর উইকেট উপহার দেন সাজিদকে। বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বলের লাইনে যেতে পারেননি। ফলস্বরূপ সাজিদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়িনের পথ দেখেন তিনি। কিছুক্ষণ পরেই নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরে যান, ৩০ রান করে। শান্তকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে টেস্টে প্রথমবারের মত ৫ উইকেট পেয়ে যান সাজিদ। শেষ ড্রিংকস ব্রেকের আগে ফিরে এলো সেই পুরনো ভূত। ধুঁকতে থাকা অবস্থায় সজোরে ব্যাট চালানোর সিদ্ধান্ত নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। বল পুরোপুরি মিস করে স্টাম্প খুইয়ে ফিরে যান রানের খাতা খোলার আগেই। আলোকস্বল্পতার কারণে আধা ঘণ্টা আগেই খেলা শেষ হয়ে যাওয়ায় সাকিব আল হাসান অপরাজিত ছিলেন ২৩ রানে।
শেষ সেশনটায় পরিকল্পনার স্পষ্ট অভাব দেখা গেলেও দিনের শুরুটা ছিল উল্টো। সকালের সুবিধা নিয়ে খালেদ আহমেদ ও এবাদত হোসেন বেশ ভুগিয়েছেন আযহার আলী ও বাবর আজমকে। এবাদতের প্রথম ওভারেই তাই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আযহার ফিরে যান ৫৬ রানে। কিছুক্ষণ পরেই খালেদ আহমেদের নিচু হয়ে যাওয়া বল মিস করে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে বাবর ফিরেছিলেন ৭৬ রানে। তবে সময় যত গড়িয়েছে বাউন্সের সাথে ধাতস্থ হয়ে ততটাই গেড়ে বসেছিলেন ফাওয়াদ আলম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ফাওয়াদ ৫০ রানে অপরাজিত থাকলে ৩০০ ছোঁয়ার সময় আগে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন রিজওয়ানও, করেছিলেন ৫৩* রান। ইনিংস ঘোষণার পর পাকিস্তান যা চেয়েছিল মাঠে ঠিক তাই করেছে। শেষ দিনে বাংলাদেশের এরকম ব্যাটিংয়ের ধারা অব্যাহত থাকলে পাকিস্তান হয়ত টেস্ট সিরিজেও বাংলাদেশকে ওয়াইটওয়াশ করেই ফিরবে।