আমাকে প্রশ্ন না করে যারা গুজব রটাচ্ছে তাদের করুন: কোহলি
কয়েকদিন আগেই বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি জানিয়েছিলেন যে ভিরাট কোহলিকে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব না ছাড়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু এবার সংবাদ সম্মেলনে এসে কোহলি জানালেন, এরকম কিছুই হয়নি। ভারতের টেস্ট অধিনায়ক স্পষ্টভাষী এক সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছেন অনেক কিছুরই জবাব। ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে তাকে যেভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে সেটা নিয়েও নিজের আক্ষেপ লুকাননি তিনি।
ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়ার প্রশ্ন উঠলে কোহলি পুরো প্রক্রিয়া পরিষ্কার করে তুলে ধরেন। সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখ যখন টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন তখন বিসিসিআই সেটার জন্য তাকে প্রশংসা করেছিলেন বলে জানান তিনি, “আমি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম যে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব আর করব না সেটা তখন সাথেসাথেই বিসিসিআইকে জানাই। তখন তারা আমার সিদ্ধান্তের বিপরীতে কিছুই বলেনি; সেটা নিয়ে কোনও জড়তাও তাদের কথাবার্তায় ছিল না। বরং তারা সেটা ভালোভাবেই নিয়েছিল। আমাকে তারা বলেছিল, আমার সিদ্ধান্ত দলকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতেই সাহায্য করবে।” এরপর ডিসেম্বরের ৮ তারিখের আগে বিসিসিআইয়ের কেউই তার সাথে যোগাযোগ করেননি। ৮ই ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দল ঘোষণার প্রায় দেড় ঘণ্টা আগেই এরপর কোহলির কাছে আসে ফোনকল।
পুরো ফোনালাপের সারমর্ম তুলে ধরেন এরপর কোহলি, “৮ই ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট সফর নিয়ে কথা বলার জন্য নির্বাচনী আলোচনার প্রায় দেড় ঘন্টা আগে আমাকে ফোন দেওয়া হয়। প্রধান নির্বাচক চেতন শর্মা টেস্ট দল নিয়ে আমার সাথে সবিস্তারে আলোচনা করেন। তিনি যেই দল দিয়েছিলেন সেখানে আমারও কোনও অমত ছিল না। কথা শেষ হওয়ার পর যখন কল রাখতে যাব তখন তিনি আমাকে বলেন যে, পাঁচজন নির্বাচক মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আমাকে আর ওয়ানডে অধিনায়ক রাখা হবে না। জবাবে আমি শুধু বলেছি, আচ্ছা ঠিক আছে।”
৯ই ডিসেম্বরেই তারপর গাঙ্গুলি বলেন যে তাদের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব না ছাড়ার অনুরোধ কোহলি না রাখায় তাদের এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কেননা নির্বাচকেরা মনে করেন, সাদা দলের দুই ফরম্যাটে দুই অধিনায়ক রাখা ঠিক হবে না। সেটা নিয়ে কোহলিকে সরাসরি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর আমি তাদের এটাও বলেছিলাম যে টেস্ট আর ওয়ানডেতে আমি অধিনায়কত্ব চালিয়ে যেতে চাই, যদি না তাদের কোনও ভিন্নমত থাকে। আমি একদম মন খুলে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিলাম। আমি তাদের পরিষ্কারভাবে বলেছিলাম যে তাদের যদি মনে হয় তারা আমাকে বাকি দুই ফরম্যাটেও অধিনায়ক হিসেবে আর চান না তাহলে সেই সিদ্ধান্তও একান্তই তাদের।”
ওয়ানডে অধিনায়কত্ব নিয়ে সোজাসাপ্টা সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে খেলতে না চাওয়ার অনুরোধ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। রোহিত শর্মার সাথে তার দ্বৈরথের দিকেও ইঙ্গিত করা নিয়ে কোহলি যারপরনাই বিরক্ত, বলেন, “ আমি দলের জন্য সবসময়ই ছিলাম, এখনও আছি। সত্যি কথা বলতে, এই প্রশ্ন আমাকে না করে যারা এসব গুজব রটাচ্ছে তাদের করুন। তারা কোথা থেকে থেকে এসব আজগুবি তথ্য পেয়ে এসব লিখছেন সেসব নিয়ে তাদের প্রশ্ন করলেই ভালো হবে বলে মনে হয় আমার।”
“ছুটি নেওয়ার বিষয়ে বিসিসিআইয়ের সাথে আমার কোনও কথাই হয়নি। অতীতেও আমাকে নিয়ে এরকম কথা বলা হয়েছে যে আমি নাকি কোনও বিশেষ উপলক্ষে কোথাও যাওয়ার জন্য খেলতে রাজি হইনি-যার একটাও সত্যি নয়। কোথা থেকে এসব তথ্য পেয়ে তারা আবার এগুলা ছাপে সেটা আমি বুঝেই উঠতে পারি না।”
এসব গুজব যে তাকে কষ্ট দেয় সেটাও তিনি লুকাননি। তবে সব পেছনে ফেলে আবারও সামনে তাকাতে চান তিনি, “কোনও কিছুই আমাকে এরকম একটা সফরের প্রস্তুতি থেকে বিচ্যুত করবে না। আমি আমার সেরাটা দেওয়ার জন্য নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেব, মাঠেই হোক বা নেটে। মাঠের বাইরে অনেক কিছুই হবে এরকম, তবে সেটা রোখার সামর্থ্য একজন ব্যক্তির হাতে নেই বললেই চলে। আমার হাতে যা আছে আমি সেটা ঠিকঠাকভাবে করব। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য আমি মুখিয়ে আছি। আমি সেটার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত এবং দলের জয়ের জন্য নিজের সেরাটা দেওয়াই এখন আমার ধ্যানজ্ঞ্যান।”
ক্রিকেট মাঠে ২০২১ সালটা ভিরাট কোহলির জন্য মোটেও ভালো যাচ্ছিল না। তারই মাঝে আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস বেঙ্গালুরুর অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরে ভারতের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন। অধিনায়ক হিসেবে নিজের শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিদায় নিতে হয়েছিল সুপার-১২ থেকেই। তবে টেস্ট আর ওয়ানডে অধিনায়কত্বে মনোনিবেশ করবেন ভেবেই নিয়েছিলেন কঠিন সেই সিদ্ধান্ত। সেটা নিয়েও সৌরভ গাঙ্গুলির মন্তব্যে চারদিক থেকে যখন ধেয়ে আসছিল প্রশ্নের বান তখন আর নিশ্চুপ থাকেননি কোহলি। সব প্রশ্নের জবাব যেমন স্পষ্ট ভাষায় দিলেন, ব্যাট হাতে মাঠেও রাবাদা-নরকিয়াদের একের পর এক বাউন্সার মাঠছাড়া করে দোর্দণ্ড প্রতাপে ফিরে আসতে পারবেন কিনা সেটা সময়ই বলবে।