• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    বক্সিং ডে'র 'বক্সিং ম্যাচ'-এ ম্যান সিটির স্বস্তির জয়

    বক্সিং ডে'র 'বক্সিং ম্যাচ'-এ ম্যান সিটির স্বস্তির জয়    

    বক্সিং ডে’তে এতিহাদের ম্যাচটাকে বক্সিং ম্যাচের সঙ্গে তুলনা করলে ভুল কিছু হবে না। প্রথমার্ধ শেষে সিটির দাপটে মনে হচ্ছিল, দুঃসহ এক স্মৃতি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে রজার্সের লেস্টারকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ২০ মিনিটেই পালটে গেল দৃশ্যপট; ঘুরে দাঁড়ানো লেস্টার প্রায় সমতা এনেই ফেলেছিল। কিন্তু হলো না শেষ পর্যন্ত; উল্টো ৯০ মিনিট পর্যন্ত আরও গোল। নয় গোলের ম্যাচ সিটি জিতে নিল ৬-৩ গোলে। 

    ম্যাচের শুরু হতে না হতেই দুই গোলে এগিয়ে যায় সিটি। ইনজুরি আক্রান্ত লেস্টারের ডিফেন্সকে ছিঁড়ে ফেলে প্রথম গোলটা দিয়ে ডি ব্রুইনা বুঝিয়ে দিলেন, ঠিক সময়েই ফর্মে ফিরতে শুরু করেছেন তিনি। লেস্টারের লেফট ওয়াইড চ্যানেল আর হাফ স্পেইসে ওভারলোড করে বারবার বিপদে ফেলেছে সিটি। লেস্টারের জন্য বিপদ আরও বাড়িয়ে দেন টিলেমান্স, কর্নারের সময় লাপোর্তেকে বক্সে ফাউল করে। মাহরেজের পেনাল্টিতে ১৩ মিনিটেই ২-০ তে এগিয়ে সিটি।

    লেস্টারের লেফট ব্যাক লুক থমাস আর সেন্টার ব্যাক ভেস্তেরগার্দকে নিয়ে রীতিমত ঘোল খাইয়ে ছেড়েছেন কানসেলো-বেরনাদো সিলভা-কেভিন ডি ব্রুইনা। ডিফেন্ডারদেরকে মার্কার থেকে বের করে এনে বক্সে ওভারলোড তৈরি হচ্ছিল গুন্ডোগান, স্টার্লিং আর মাহরেজের কারণে। সেরকমই এক সুযোগ থেকে বক্সে ওঁত পেতে থাকা গুন্ডোগানের সহজ শটে আবারোও গোল খেয়ে বসে লেস্টার। ঠিক তার চার মিনিট পর আবার পেনাল্টি; এবারও ভুলটা টিলেমান্সের। স্টার্লিংয়ের পায়ে আলতো খোঁচাটাই যথেষ্ট ছিল পেনাল্টির বাঁশির জন্য। রাহিম স্টার্লিং ভুল করেননি; জোরালো শটে স্মাইকেলকে পার করে বল চলে গেল জালে। ২৫ মিনিটে স্কোরলাইন ৪-০।

    ম্যাচটা এভাবেই শেষ হতে পারত; অন্তত সিটির খেলার ধরণ দেখে এমনই মনে হচ্ছিল। নিজেদের মাঝে বলের দখল রেখে প্রথমার্ধ পার করে দেয় গার্দিওলার শিষ্যরা। কিন্তু পেপ গার্দিওলা নিশ্চয়ই আঁচ করতে পারেননি, যে ঝড়টা তিনি লেস্টারের উপর বইয়ে দিয়েছেন- উল্টো তার জন্যও অপেক্ষা করছে এমন ভয়াবহ কিছু । বিপজ্জনক এরিয়াতে প্রেসিং আর কাউন্টার অ্যাটাকের চেষ্টায় লেস্টারের ঘুরে দাঁড়ানোর ঝাঁঝ টের পাওয়া গেল দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর দশ মিনিটের মধ্যেই।

    লাপোর্তের থেকে বল কেড়ে নিয়ে সরাসরি কাউন্টারে এগোন ম্যাডিসন; লাইন ব্রেকিং এক পাসে খুঁজে পান ইহিনাচোকে। সিটির হাই ব্যাক লাইনের ইহিনাচোর সঙ্গে ওয়ান-টু করে লেস্টারের হয় প্রথম গোল ম্যাডিসনের। দ্বিতীয় গোলটাও প্রায় অ্যাকশন রিপ্লে, এবারও নেপথ্য নায়ক ম্যাডিসন। সিটির নিজেদের অর্ধে বল ইন্টারসেপ্ট করে আলগা মার্কিংয়ে থাকা ইহিনাচোকে আবারও খুঁজে পান তিনি। এবার ইহিনাচো সাহায্য পেলেন লেফট উইঙ্গার আদেমোলা লুকমান থেকেও। লাপোর্তে-দিয়াসকে পেছনে রেখে তার নেয়া শটে ৫৯ মিনিটে লেস্টারের দ্বিতীয় গোল।

    ইহিনাচো ৬৪ মিনিটে যখন লেস্টারেরে হয়ে তৃতীয় গোলটা করলেন; মনে হচ্ছিল অসম্ভবটা সম্ভব করেই ছাড়বেন ব্রেন্ডন রজার্সের শিষ্যরা। ম্যাডিসনের বাকানো শট এদেরসনের হাতে লেগে গিয়ে লাগে বারে। ঠিক সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন ইহিনাচো, এবার স্কোরশিটে নাম উঠলো তারও। ৪-৩ গোল স্কোরলাইনে আরও প্রেস করতে শুরু করলো লেস্টার, কিন্তু গার্দিওলার জন্য স্বস্তি এনে দেন লাপোর্তে ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই। 

    সেট পিস ডিফেন্ড করার ব্যাপারে লেস্টার ছিল ভয়াবহ অগোছালো। দুজন ম্যান মার্কার থাকলেও জোনাল মার্কিংয়ে তারা ছিলেন ছন্নছাড়া। সেই সুযোগে কর্নার থেকে রিয়াদ মাহরেজের পাঠানো বল বেশ আয়েস করেই লেস্টারের জালে পাঠান লাপোর্তে। ৮৭ মিনিটে লেস্টারের জন্য সব আশায় গুড়েবালি দিয়ে দেন স্টার্লিং। এমনই এক কর্নার থেকে ফাকায় বল পেয়ে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন তিনি। ৯০ মিনিটে ৯ গোলের এক অবিশ্বাস্য ম্যাচ!

    এই নিয়ে লিগে টানা ৯ ম্যাচে জয় পেল সিটি, শীর্ষস্থানটাও হয়েছে শক্ত। কিন্তু মাত্র ২২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে দশম স্থানে ধুঁকছে লেস্টার।