• অন্যান্য
  • " />

     

    মোসাদ্দেক-নাঈমদের দিনে সিলেটে ক্রিকেট-উৎসব

    মোসাদ্দেক-নাঈমদের দিনে সিলেটে ক্রিকেট-উৎসব    

    শহরের মধ্যিখানে বসেছে সিলেটের ক্রিকেটারদের মেলা। আর শহরের সব ঝঞ্ঝাট ফেলে সবুজের মাঝে ফুটে উঠা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই এক মিলনমেলা। সিলেটের ক্রিকেট গেল কয়েক বছর ধরেই ছিল অচল-সচল অবস্থার মাঝখানেই দাঁড়িয়ে। করোনা বাঁধাসহ সবমিলিয়ে গেল দুই বছরে সিলেট প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ মুখ দেখেনি, এবার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে হচ্ছে তা। আর সেই সাথেই প্রকৃতির সৌন্দর্য্যমন্ডিত সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দুই মাঠে চলছে দুটি খেলা। সিলেটে তাই এখন বলা যায় ক্রিকেট উৎসবই চলছে!

    ঘরোয়া ক্রিকেটে সাকিবের পদচিহ্ন পড়ে না খুব একটা। তবে গেলবারের ডিপিএলের পর এবার বিসিএলের ৫০ ওভার সংস্করণও সাকিবের উপস্থিতি পেয়েছে। বিপিএলের পূর্বে এই টুর্নামেন্ট খেলতে আমেরিকা থেকে চলে আসা সাকিবই ছিলেন সকল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁর দল ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে বাধ্য হওয়ার পর যখন তিনি চার নাম্বারে ব্যাট করতে নামছেন, তখন ভালো শুরুর পর দুই উইকেট হারিয়ে সেন্ট্রাল জোন তুলে ফেলেছিল ৬৭ রান।

    রুবেলের বলে ১৩ রানে সৌম্য ইনসাইড এজে বোল্ড হওয়ার পর মাজিদ অনেক সময় ক্রিজে পড়ে থাকেন, কিন্ত শেষমেশ নাঈমকে স্টেপ আউট করে মারতে গিয়ে ২৭ বলে ৮ রানে শেষ হয় তাঁর ইনিংস। এরপর ক্রিজে আসার পরপরই অপর প্রান্ত থেকে সাকিবকে দেখতে হয় প্রথম বলেই ৩৬ রান করা মিজানুরকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে। এক পাশে বেশ স্বছন্দে খেলে যাওয়া মিথুনও ৩৭ বলে ৩৭ রানে ফিরে গেলে ১২৩ রানে চার উইকেট হারায় সেন্ট্রাল জোন।  

    প্রথম বিশ ওভারেই রাজাকে বোলিংয়ে আনেননি ইস্ট জোনের অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। মাঝের ওভারে পেসের সাথে সুইংয়ে দুর্দান্ত বোলিংয়ে রাজা সাকিবকে খোলস বন্দী রাখেন। বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ও নাঈম হাসানও চাপ ধরে রাখেন আঁটসাঁট বোলিংয়ে। সাকিব শেষমেশ খোলস থেকে বেরুবার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্লগ সুইপ যেই করেন, ধরা খেয়ে যান মিড উইকেটে। ৫৮ বলে ৩৫ রানে তাঁর ইনিংসের আগে অধিনায়ক মোসাদ্দেকও ১৭ রানে ফিরে যান। শেষে ১১ রান আনতে সেন্ট্রাল জোন চার উইকেট হারিয়ে ফেলে অলআউট হয় ১৭৭ রানে।

    প্রথম ইনিংসে দাপট দেখিয়ে তানভীর স্পেল শেষ করেন ২৯ রানে দুই উইকেটে, পরের ইনিংসে আরেক বাঁহাতি স্পিনার মুরাদের ব্রেকত্রু ম্যাচে ফেরায় ইস্ট জোনকে। শূন্য রানেই আশরাফুলকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর ইমরুল ও রনির জুটিটা সেন্ট্রাল জোনকে ম্যাচ থেকে ছিটকেই দিচ্ছিলো প্রায়। মুরাদ এসে এলবিডব্লিউর শিকার বানিয়ে ইমরুলকে ২৫ রানে ফিরিয়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই মোসাদ্দেকের বলে লং অনে রনি তালুকদার ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৩৮ রান করেই। মোসাদ্দেক-মুরাদের বলে এরপর ইস্ট জোনের উপর চেপে বসে সেন্ট্রাল জোন। মোসাদ্দেক এক প্রান্ত থেকে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে গেছেন, ১০ ওভার মাত্র ১৩ রান খরচই তাঁর পক্ষে স্বাক্ষ্য দিচ্ছে। ক্রিজে এসেই ভুগতে থাকেন আফিফ, শেষমেশ তাঁর ভোগান্তির সমাপ্তি তিনি নিজেই ঘটিয়ে দেন ডাউন দ্য উইকেটে এসে সাকিবকে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে।

    ৩১ রানে ইরফান শুক্কুরের পর নাঈমকেও হারিয়ে ১১৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে জয় থেকে দূরে চলে যেতে থাকে ইস্ট জোন। আলাউদ্দিন বাবুর সাথে মিলে নাদিফের ৩৪ রানের জুটি তাদের জয়ের কাছে নিয়ে যেতে থাকে আবার। কিন্ত শেষ ছয় ওভারে যখন লাগত ৩২, রান তখন ম্যাচে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে সৌম্যকে নিয়ে আসেন মোসাদ্দেক। সৌম্য এসেই তাঁর প্রথম ওভারের শেষ বলের পর পরের ওভারের প্রথম বলে নাদিফ ও বাবুকে ফিরিয়ে দিয়ে জয়টা আনুষ্টানিকতার হাতেই ছেড়ে দেন। তখন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ঠিক পাশেই একাডেমি মাঠে অন্য ম্যাচে আনুষ্টানিকতাও সম্পন্ন। এ ম্যাচে বাঁহাতি বোলাররা বাহাদুরি দেখিয়েছেন, সেখানে চলেছে বাহাদুরি বাঁহাতি এক ব্যাটারের।

     

    সাউথ জোন এনামুল ও মাইশুকুরের উইকেট ৩৪ রানেই খুইয়ে ফেলার পর পিনাক ঘোষ ও তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটে ভালো সংগ্রহের দিকেই চোখ রাখছিল। ৪৭ রানে পিনাক আউট হয়ে ফিফটির দেখা না পেলেও হৃদয় পেয়েছেন, তবে ৫৫ রানের বড় হয়নি তাঁর ইনিংসও। জাকির, মাহেদী, নাহিদুল কেউই এরপর আর তাদের ইনিংস ১১ রানের বড় করতে পারেননি। তাই সাউথ জোন আটকে গেছে ১৬২ রানেই। যা আবার নর্থ জোন পেরিয়ে গেছে ৩১ ওভারেই। ৬ রানে তানজিদ তামিমের উইকেট হারানো নর্থ জোনের চাপে পড়ার শঙ্কা ইমন হাওয়ায় মিলিয়ে দেন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে হাওয়ায় বল ভাসিয়ে ভাসিয়ে। চারটী ছক্কা ও পাঁচ চারে তিনি ৫৪ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলে যখন থেমেছেন, তখন তাঁর দল জয় থেকে খুব বেশি দূরে নয়।

    ৯৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হিসেবে ইমনকে হারানোর সময়ে তখন সেট হয়ে ক্রিজে ছিলেন নাঈম ইসলাম। শেষমেশ ৬৬ রানে অপরাজিত থেকে ৩২ রান করা আরিফুলকে সঙ্গে করে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। এর আগে তাদের সতীর্থ বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ৩৯ রানেই ৩ উইকেট নিয়েছিলেন, দিনের অন্য ম্যাচে তানভীর ২৯ রানে দুই উইকেট নেওয়ার পর সাকিব ও মুরাদও বল হাতে দাপট দেখিয়েছেন। তবে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছিল দুই ডানহাতির উঠেই, এক ম্যাচে মোসাদ্দেক, অন্য ম্যাচে নাঈম ইসলাম। স্পিনারদের দাপটের মাঝেও জ্বলে উঠেছিলেন কিন্ত দুই পেসার রাজা ও শফিকুল। তবে সিলেটের এই ক্রিকেট উৎসব নিয়ে উত্তেজনাটা মাঠের খেলায়ও ঠিক ফুটে উঠতো পারতো, যদি রানের চাকাটা আরও দ্রুতগতিতে চলত!