• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    টুখেলের চেলসিকে ডুবিয়ে চতুর্থ লিগ শিরোপার আরও কাছে গার্দিওলার সিটি

    টুখেলের চেলসিকে ডুবিয়ে চতুর্থ লিগ শিরোপার আরও কাছে গার্দিওলার সিটি    

    ৪-৩। না, এটা কোন ম্যাচের ফলাফল নয়। আজকের ম্যাচের আগে পেপ গার্দিওলা-টমাস টুখেলের মুখোমুখি পরিসংখ্যান; পেপের জয় চারবার- টুখেলের তিন। মাঝে দুইবার ড্র। বুন্দেসলিগায় নয় বছর আগে শুরু হওয়া এই ‘শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই’টা যতটা না বাঁকা কথার, কিংবা বিধ্বংসী প্রেস কনফারেন্সের- তার চাইতে অনেক বেশি বুদ্ধির, এবং শ্রদ্ধারও। বছর গড়িয়ে দুই ম্যানেজারই এসে বদলে দিয়েছেন দুই দলের চেহারা। পয়েন্ট তালিকায় প্রিমিয়ার লিগের এক ও দুই নম্বর দলের ম্যাচটা নিঃসন্দেহেই ছড়িয়েছে উত্তাপ। তবে দিনশেষে মুখোমুখি জয়ের ট্যালিটা ৫ এ নিয়ে গেছেন পেপ গার্দিওলা; কেভিন ডি ব্রুইনার একমাত্র গোলে লিগে টানা দ্বিতীয়বার হারিয়েছেন টুখেলের চেলসিকে।   

    সিটির সামনে সুযোগ ছিল লিগে টানা বারোতম জয় তুলে নেবার। যেখানে ডিসেম্বর মাসে চেলসিই ছিল শীর্ষে, সেখানে উলটো চেলসি হারিয়েছে সব। ডিসেম্বরের ঠাসা ফিক্সচার থেকে তারা পেয়েছে মাত্র দশ পয়েন্ট। আর এই ম্যারাথনে এগারোতে এগারো জয় গার্দিওলার সিটির; লিভারপুল-চেলসিকে পাশ কাটিয়ে পাঁচ বছরে চতুর্থ লিগ টাইটেল জেতার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে তারা। এই ম্যাচটা যেমন ছিল চেলসির জন্য সিটির সঙ্গে দূরত্ব কমানোর চ্যালেঞ্জ; ঠিক তেমনি টাইটেল জেতার ম্যারাথনেও উত্তেজনা ফিরিয়ে আনার। চেলসি সে চ্যালেঞ্জে ব্যর্থ; সিটি টানা বারোতম জয় তুলে নিয়ে টাইটেল রেসটাতেও প্রায় ইতি টেনে দিয়েছে।

    প্রথমার্ধের সবচেয়ে বড় হাইলাইট টুখেলের বিরক্তিমাখা চেহারা। রীতিমত সিটি শাসিয়ে গেছে চেলসির এগারোজনকে। নিজেদের হাফ সামলাতেই পুরো অর্ধ কেটেছে ব্লুজদের; যেখানে ঠিক বিপরীতে নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন এদেরসন; কেননা চেলসি গোলে শট নিতে পারেনি একটিও। এক কোভাচিচ ছাড়া সিটির আগ্রাসী প্রেস সামলাতে খাবি খেয়েছেন চেলসির প্রায় বাকি সবাই। আর সিটি একের পর এক চান্স ক্রিয়েট করে গেছে চেলসির বক্সে; বিশেষ করে চেলসির লেফট ফ্ল্যাংকে।

    দুই অর্ধেই চেলসির দুই ডিফেন্ডার মালাং সার আর মার্কোস আলোনসোর ঘাম ছুটিয়েছেন রাহিম স্টারলিং। যতবারই আলোনসোকে পাশ কাটিয়ে গেছেন, ভালো সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি। আর মালাং সার তো স্টারলিংয়ের ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পেরেই ওঠেননি। প্রতিবারই হজম করতে হয়েছে কর্নার। 

    প্রথমার্ধের সবচেয়ে বড় সুযোগ এসেছিল সিটির জন্য ঠিক ৩০ মিনিটের মাথায়। চেলসির হয়ে চাপ হজম করে যাওয়া কোভাচিচই করে বসলেন ভুল। ডি ব্রুইনার প্রেসে বল হারিয়ে ফেলেন তিনি; সে বল নিয়ে গ্রিলিশ প্রায় গোলটা করেই ফেলেছিলেন। কেপার রিফ্লেক্সিভ সেইভে সে দফায় চেলসিকে বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেন তিনি।

    চেলসির হয়ে সিটির ডিফেন্স লাইন ব্রেক করে বেশ কয়েকবার ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন হাকিম জিয়েখ। কিন্তু উলটো ভুলভাল দিকে বল ঠেলে শুধু বিরক্তিটাই বাড়িয়েছেন টুখেলের। লুকাকু ভালো জায়গায় বল পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি ঠিকমত। যে চেলসি টুখেলের অধীনে পুরো মাঠে দাপট দেখিয়ে খেলে এসেছে, সেই চেলসিই আজ সিটির বিপক্ষে খেলেছে কোন রেলিগেশন অঞ্চলে থাকা লো ব্লক ডিফেন্সিভ দলের মত।

    গোলে কোন শট না নেবার ভুলটা শুধরাতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই একটু খোলস ছেড়ে খেলা শুরু করেছিল। ফাঁকায় বল জিতে লুকাকু পেছনে ফেলে দিয়েছিলেন সিটির দুই সেন্টারব্যাককে। কিন্তু এদেরসনের বুদ্ধিদীপ্ত মুভমেন্টে গোলে শট নেওয়ার জায়গা কমে যায় লুকাকুর; ঠেকিয়েও দেন তার নেওয়া শট। সে বল অবশ্য জিয়েখের কাছে গেলেও কিছু করতে পারেননি তিনি। উড়িয়ে মেরেছেন পোস্টের অনেক উপর দিয়ে।

    পেপের কাছে এখনোও দগদগে ক্ষত হয়ে আছে টুখেলের কাছে চ্যাম্পিয়নস লিগটা হারানো। সে ম্যাচ যতটা না চেলসি জিতেছে; তার চেয়েও যেন পেপ হেরে গিয়েছিলেন তার নিজের কাছে। ভয়ানক এক ইনজুরিতে পড়ে সেবার মাঠ ছাড়তে হয়েছিল সিটির ‘স্টারম্যান’ কেভিড ডি ব্রুইনাকে। সাবেক চেলসির এই মিডফিল্ডারই তার প্রাক্তন দলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন দেনা-পাওনা; এনে দিয়েছেন সিটির মহাআরাধ্য সেই গোল। ৭০ মিনিটে কানসেলোর দেওয়া বল রিসিভ করে ডামি করে অনবদ্যভাবে পাশ কাটান কানতেকে। কেপা আর মাঝের ফাঁকা জায়গাটা বুঝে নিলেন ডান পায়ের শট। কেপার বাম হাত পাশ কাটিয়ে চেলসির জালের লেফট কর্নারের আছড়ে পড়ার আগে সে বল নিল দারুণ এক বাঁক; আর সে বাঁকের পর উদ্বেলিত পুরো এতিহাদ! চেলসির দুর্গের ঘটলো পতন; ঘটালেন তাদেরই সাবেক এক সৈনিক।

    চেলসি এরপরও চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। টুখেল এনেছেন সিস্টেমে পরিবর্তন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। উলটো দ্বিতীয় গোল খাওয়ার আশংকায় তটস্থ থাকতে হয়েছে চেলসির ব্যাকলাইনকে। শেষ পর্যন্ত ডি ব্রুইনার একমাত্র গোলটাই যথেষ্ট ছিল গার্দিওলার সিটির জন্য চেলসির থেক ১৩ পয়েন্ট এগিয়ে যাওয়ার। ম্যাচ শেষে মালাং সারের অসহায় চেহারাটাও দেখা গেল ক্যামেরায় স্পষ্ট; টুখেলও বিপর্যস্ত। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা টানা দ্বিতীয়বার বিধ্বস্ত হলো ম্যান সিটির কাছে। টুখেলও পেপের কাছে হারলেন পঞ্চমবারের মত। আর সিটি লিগ শিরোপা জেতার পথে এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে!