• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    লন্ডন ডার্বিতে শেষ হাসি চেলসির

    লন্ডন ডার্বিতে শেষ হাসি চেলসির    

    জোসে মরিনহো, কার্লো আনচেলত্তি, আন্দ্রেস ভিলাস বোয়াস; এরকম সাতজন সাবেক ম্যানেজার স্টাফোর্ড ব্রিজে ফিরেছিলেন অন্য দল নিয়ে। কেউই জয় নিয়ে ফিরে যেতে পারেননি। আন্তোনিও  কন্তে প্রথম ম্যানেজার হিসেবে এই অপয়া রেকর্ড ভাঙবেন, সে স্বপ্ন দেখছিলেন অনেকেই। কিন্তু তা আর হলো কই? 

    ম্যাচের আগে কন্তের পক্ষে বাজি ধরার পিছনে যৌক্তিক কারণও ছিল অনেক। লিগে ১১ই ডিসেম্বরের পর থেকে কোনো ম্যাচ জেতেনি চেলসি। আর ওদিকে কন্তের অধীনে  কালকের আগ পর্যন্তলিগে কোনো ম্যাচ হারেনি স্পার্স। লেস্টার সিটির বিরুদ্ধে যোগ করে সময়ের কামব্যাকের স্মৃতি তখনো তাজা। কিন্তু দিনশেষে এই লন্ডন ডার্বির আরেকটি চেনা দৃশ্যি দেখা গেল। শেষ পাঁচবারের মতো এই ম্যাচেও চেলসি হাসল শেষ হাসি। । 

    ব্রিজে ম্যাচটা শুরু করে চেলসিই। শুরুর বাঁশি থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে লন্ডনের নীল শিবির। তিন মিনিটের মধ্যে তৈরি করে দুটি গোল দেওয়ার মতো সুযোগ। রোমেলো লুকাকু ও ক্যালাম হাডসন ওডোই তার একটি কাজে লাগাতে পারলে তখনই বদলে যেত ম্যাচের চেহারা। 

    প্রথম দশ মিনিটে ম্যাচে পা-ই ফেলতে পারেনি কন্তের শিষ্যরা। চেলসির প্রাথমিক আক্রমণ সামলে নিয়ে এরপর থেকে ধীরে ধীরে ম্যাচে আস্তানা গাঁড়তে শুরু করে হ্যারি কেইনরা। ১৩তম মিনিটে কেইনের পাস থেকে পিচের মাঝখান থেকে সামনে এগিয়ে করা হ্যারি উইংকসের শটটি ছিল স্পার্সের প্রথম বলার মতো আক্রমণ। 

    ১৮তম মিনিটেই অবশ্য ১০ জনে নেমে যেতে পারত স্পারস। চেলসি ডিফেন্ডার মালাং সারের উপর ম্যাট ডোখার্টির করা বল-বহির্ভূত চার্জ স্লো মোশনে বেশ ্মারাত্মকই দেখাচ্ছিল। তবে ট্যাকেল নিয়ে কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করলেও শেষপর্যন্ত ডোখার্টিকে আর সরাসরি লাল কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি ভিএআর। 

    দিনের শুরুতে লিভারপুলকে একটি বিতর্কিত পেনাল্টি দিয়ে আবারও ফুটবল বিশ্বের চক্ষুশূল হওয়া ভার এ ম্যাচেও হয়ে উঠে আলোচনার বিষয়। অন্তত স্পার্স ভক্তদের জন্য তো অবশ্যই।

    ৪০তম মিনিটে প্রথমার্ধের সবচেয়ে বড় সুযোগটি পায় স্পার্স। মধ্যমাঠে জর্জিনিয়োর কড়া ট্যাকল এড়িয়ে বেশ কয়েক পা ড্রিবল করে ডিবক্সে বল বাড়ান স্পার্স উইঙ্গার রায়ান সেসেয়ন। তার কাটব্যাকটি বক্সের ভেতর আলতো করে রিসিভ করে উল্টো ঘুরে জালেও জড়ান কেইন। 

    কিন্তু রেফারি পল টিরানির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কেইনদের উচ্ছ্বাস। বল রিসিভ করার সময় থিয়াগো সিলভাকে স্পর্শ করেছিলেন কেইন। আর এই অল্প স্পর্শেই থিয়াগো সিলভা পড়ে যাওয়ায় ফাউলের বাঁশি বাজান রেফারি। 

     

    ভিএআরসময় নিয়ে দেখে এই ফাউলের সিদ্ধান্তটি। থিয়াগো সিলভাকে কেইন স্পর্শ করেছেন, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটি মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো ছিল কি না, তা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। গত শুক্রবার রাতে ওয়াটফোর্ডের সামিরকে এরচেয়ে জোরে ‘স্পর্শ’ করে ভূপাতিত করেছিলেন টিমো পুক্কি। কিন্তু তার পরবর্তী পাস থেকে হওয়া নরউইচের গোল বাতিল করেনি ভার। 

    প্রথমার্ধের শেষদিকে কেইনের গোল বাতিল না হলে ম্যাচটি অন্যরকম হতে পারত স্পার্সের জন্য। তবে এই সিদ্ধান্তকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ নেই কন্তের। দ্বিতীয়ার্ধে তার দলকে সবভাবে পরাস্ত করেছে স্বাগতিকরা। 

    গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিট থেকেই আবারও আক্রমণাত্মক  মাউন্টরা। ফলাফলও আসে তাৎক্ষণিকভাবেই। দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই মাঠের বাঁপাশের টাচলাইন ধরে আক্রমণে আসেন চেলসির মেকশিফট রাইট উইঙ্গার হাডসন ওডোই। বক্সের কাছে এসে অপর উইঙে থাকা হাকিম জিয়েশের উদ্দেশ্যে বল বাড়ান তিনি। আলতো করে বলটি রিসিভ করে বক্সভর্তি স্পার্স প্লেয়ারদের মাথার উপর দিয়ে এক বাঁকানো শট নেন জিয়েশ। তার শট এতোটাই চোখধাঁধাঁনো ছিল যে স্পার্স গোলরক্ষক লরিসও জায়গা দাঁড়িয়ে শুধু দেখেছেনই। চেলসির হয়ে লিগে যে পাঁচ গোল পেয়েছেন, তার তিনটিই এলো বক্সের বাইরে থেকে।

    বল জালে জড়ানো মাত্রই বুনো উল্লাসে ফেটে পড়ে ব্রিজের গ্যালারি। চেলসি অবশ্য সেখানেই থামেনি। প্রথম গোলের পর টমাস টুখেলের শিষ্যরা আক্রমণের মাত্রা আড়ও বাড়িয়ে দেয়। পরের কয়েক মিনিটেই তৈরি করে আরও বেশ কয়েকটি সুযোগ। 

    স্পার্সকে কোণঠাসা করে দিয়ে ৫৫তম মিনিটে ম্যাচের দ্বিতীয় গোল করে চেলসি। ম্যাসন মাউন্টের ফ্রিকিকে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন সেই থিয়াগো সিলভা। লুকাস মউরা ও অলিভার স্কিপকে নিয়ে টাচলাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কন্তে তার প্রথম ট্যাকটিকাল বদলির আগেই পরাজয়ের ঘনঘটা দেখে ফেলেন। 

    ম্যাচের বাকি সময়েও নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখে চেলসিটুখেল বাহিনী। স্পার্সের বিপক্ষে এ মাসের তৃতীয় জয় তুলে নিতে শেষ পর্যন্ত আর তেমন বেগ পেতে হয়নি তাদের। লিগ কাপের দুই ম্যাচসহ জানুয়ারিতে চেলসি-স্পার্সের এগ্রিগেট স্কোর এখন ৫-০।

    এই জয়ে তৃতীয় টেবিলের তৃতীয় স্থানটি আরও পাকাপোক্ত করেছে চেলসি। আর এই ম্যাচ জিতলেই শীর্ষ চারে উঠে যাওয়ার সুযোগ থাকা স্পার্স থাকছে সপ্তম স্থানে। 

    চেলসির বিপক্ষে সর্বশেষ ছয় ম্যাচে কোনো গোলের দেখা পায়নি কেইনরা। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে সর্বশেষ ৩২ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে লন্ডনের সাদা শিবির। দুর্যোগের মাঝেও রাজধানীতে দাদাগীরির অধিকারটা তাই থাকছে তুটুখেল বাহিনীর কাছেই।