• ক্রিকেট, অন্যান্য
  • " />

     

    ক্রিকেট মাঠে ভূমিকম্প: ম্যাচ বন্ধ হয়েছে প্রকৃতির আরও অদ্ভুত খেয়ালে

    ক্রিকেট মাঠে ভূমিকম্প: ম্যাচ বন্ধ হয়েছে প্রকৃতির আরও অদ্ভুত খেয়ালে    

    বৃষ্টি বা আলোক স্বল্পতায় এসব কারণে মাঠের খেলা বন্ধ হওয়া নিয়মিত দৃশ্যই। কিন্তু এসব ছাপিয়ে খেলার মাঠে প্রকৃতির অমোঘ খেয়ালের এমন কিছু নজিরও আছে, যেখানে চোখ বুলালে একটু চমকেই উঠতে হয়। 

     

    ভূমিকম্প

     

    ঘটনা চলতি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের। ত্রিনিদাদের কুইন্স পার্ক ওভালে সেমিফাইনালের প্লে অফে খেলছিল আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে। সেই ম্যাচ চলাকালীন রিখটার স্কেলে ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। টেলিভিশনের ব্রডকাস্টিং ক্যামেরাও কেঁপে ওঠে থরথর করে। যদিও ক্রিকেটাররা সেই অর্থে টের পাননি বলে খেলাও বন্ধ হয়নি। কোনো ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হননি গ্যালারির দর্শকরাও। 

    অবশ্য ধারাভাষ্যকাররা টের পেয়েছেন ভালোমতোই। ধারাভাষ্যকার অ্যান্ড্রু লিওনার্ডকে বলতেও শোনা যায় ভূমিকম্পের কথা। পরবর্তীতে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘১৫-২০ সেকেন্ডব্যাপী প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভব করেছি। যদিও মনে হয়নি ঝাঁকুনিতে মিডিয়া সেন্টার ভেঙে পড়বে বা এমনকিছু। কেউই জানতো না কখন থামবে, নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণও ছিল না। কিছুটা হলেও ভয় পেয়েছি।’

    ক্রিকেট মাঠে ভূ-কম্পনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। যার চাক্ষুস স্বাক্ষী এক ক্যারিবিয়ান ধারাভাষ্যকার। যুব বিশ্বকাপের এই ম্যাচ চলাকালীন সেই স্মৃতিচারণ করেন তিনি। আশির দশকে এক টেস্ট ম্যাচে স্যার ভিভ রিচার্ডস কম্পন অনুভব করায়  থামিয়ে দেন প্রতিপক্ষের বোলারকে। ভূমিকম্প না থামা অবধি সেবার খেলা শুরু হয়নি।


    অতিরিক্ত সূর্যের আলো


    আলোক স্বল্পতায় খেলা থেমে যাওয়ার ঘটনা ক্রিকেট মাঠের নিয়মিত দৃশ্যই। বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচে। কিন্তু সূর্যের আলো বেশি হওয়াতেও একবার খেলা বন্ধ রাখতে হয়েছে, তাও ওয়ানডে ম্যাচে। 

    ২০১৯ সালে ভারতের নিউজিল্যান্ড সফরে এই দৃশ্যর অবতারণা। নেপিয়ারের ম্যাকলারেন পার্কে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাট করছিলেন বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ান। ইনিংসের ১১তম ওভারে ধাওয়ান আম্পায়ারকে জানান, অতিরিক্ত সূর্যের আলো সরাসরি চোখে পড়ায় তিনি বলই দেখতে পাচ্ছেন না। ম্যাচ অফিসিয়ালরা বাধ্য হয়েই খেলা বন্ধ রাখেন ত্রিশ মিনিট। সূর্যের মাত্রাতিরিক্ত বিকিরণে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা স্বীকৃত ক্রিকেটে সেটাই প্রথম।

    এর বছরখানেক পর একই মাঠে একই কারণে খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন আম্পায়াররা। তবে সেটা ছিল টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। ব্যাটসম্যান গ্লেন ফিলিপস সূর্যের বেশি আলোতে দেখতেই পাচ্ছিলেন না বোলার হারিস রউফকে। ফিল্ড আম্পায়ারদের জানালে, তারা সেই একই সিদ্ধান্ত নেন। সূর্যের তেজ কমলে আবার মাঠে গড়ায় খেলা। 

    সূর্যের আলোর কথা চিন্তা করে, উইকেটগুলো সাধারণত উত্তর-দক্ষিণমুখী করে বানানো হয়। কিন্তু নেপিয়ারের ম্যাকলারেন পার্কের উইকেট পূর্ব-পশ্চিমমুখী। যে কারণে সূর্যাস্তের আগে অতিরিক্ত আলোতে ব্যাটসম্যানদের চোখ ধাধিয়ে যায়।

     

    এমন আরো একটা ঘটনা আছে। ১৯৯৫ সালের কথা। ম্যানচেস্টার টেস্টে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ম্যাচে আম্পায়ার ছিলেন ডিকি বার্ড। টি সেশনের ১৫ মিনিট আগে তিনি জানান, মাঠে প্রচন্ড সূর্যের আলোর জন্য খেলা চালানো সম্ভব নয়। ফিল্ড আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তে নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগেই মাঠ ছাড়ে দুই দল। ঘটনার সূতিকাগার তৎকালীন ওল্ড ট্র্যাফোর্ড সংলগ্ন কাঁচের তৈরি গ্রিন হাউজ। গ্রিন হাউজের প্রভাবে মাঠের আশেপাশে সূর্যের বিকিরণও বেড়ে যায়। 

     

     তুষারপাত

     

    ২০১৬ সালে সারি-সমারসেটের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায় তুষারপাতে। পুরো মাঠ ঢেকে যায় শুভ্র তুষারে, ম্যাচের তৃতীয় দিনে একবারের জন্যও বল মাঠে গড়ায়নি। 

    ১৯৭৫ সালে ডার্বিশায়ার-ল্যাংকাশায়ারের ম্যাচও আছে এই তালিকায়। কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের সেই ম্যাচে ল্যাংকাশায়ারের হয়ে খেলেছেন ডেভিড হেইন্স, ক্লাইভ লয়েডরা। ডার্বির বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে ৪৭৭/৫ রানে ইনিংস ঘোষনা করেন লয়েডরা।  মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রথমদিন তারা খেলেছেন প্রচণ্ড গরমে। অসহ্য গরমে দর্শকরা গায়ের জামাও খুলে ফেলেন। কিন্তু রাত পোহাতেই বদলে যায় পরিবেশ। শিলাবৃষ্টি নামে আকাশ ফুঁড়ে। সাথে নিয়ে আসে তুমুল তুষারপাতও। 

     

    গরমে কুপোকাত

    ডার্বিশায়ার-ইয়র্কশারের মধ্যকার প্রভিডেন্ট কাপের ফাইনাল ম্যাচ ৪৫ মিনিটের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল প্রচণ্ড গরম। দিবারাত্রির ম্যাচে ২৫৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ডার্বির ব্যাটসম্যানরা আপত্তি জানান। প্রচুর গরম আর শেষ বিকেলের তীর্যক আলোতে বল দেখতেই সমস্যা হচ্ছিল তাদের। 

     

    মরুঝড়

    ১৯৯৮ সালে শারজাহতে কোকাকোলা কাপের ফাইনাল। মরুঝড়ের কারণে  ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়েছিল ১৫ মিনিট দেরিতে। ভারতের ইনিংস থেকে কমিয়ে দেয়া হয় চার ওভার। একইসাথে অস্ট্রেলিয়ার ছুঁড়ে দেয়া লক্ষ্যও ২৮৫ থেকে নেমে আসে ২৭৬ রানে। অবশ্য সেই ম্যাচে ওয়ার্ন-ক্যাসপ্রোভিচদের পিটিয়ে শচিন যে ঝড় তুলেছিলেন, তার কাছে শারজাহর মরুঝড় তুচ্ছই।