সোহেল তানভীর-বেন কাটিংয়ের ‘বদলা’: ক্রিকেটে এমন হয়েছে আগেও
ব্যাট-বলের লড়াই, ম্যাচের ফলাফল ছাপিয়ে কখনো কখনো ক্রিকেটারদের দ্বন্দ্বই হয়ে উঠে আলোচ্য বিষয়। এমন অনেক উদাহরণই আছে ক্রিকেটের বিশাল ইতিহাসে। সর্বশেষটির সাক্ষী হয়ে রইল পাকিস্তান সুপার লিগের ময়দান। দুদিন আগে পিএসএলের ম্যাচে সোহেল তানভীরের ওপর পুরনো এক প্রতিশোধ নিয়েছেন বেন কাটিং। কারণ চার বছর আগে কাটিংকে আউট করে একইভাবে উদযাপন করেছিলেন তানভীর।
চলতি পিএসএলে পেশোয়ার জালমির হয়ে খেলছেন কাটিং। পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার তানভীর খেলছেন কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সে। মঙ্গলবার দুই দলের গ্রুপ পর্বের ম্যাচের ১৯তম ওভারে বল করতে যান তানভীর, ব্যাটিং প্রান্তে তখন কাটিং। মাথায় তখন হয়তো বদলার চিন্তা।
টানা তিন ছক্কায় ওভার শুরু করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। প্রতিশোধের মোক্ষম সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেননি তিনি। তানভীরকে দেখিয়ে বসেন তার দুই হাতের মধ্যমা। কারণ বছর চারেক আগে তানভীরও কাটিংকে আউট করে একই অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন। পরের ওভারে নাসিম শাহর বলে তুলে মারতে গিয়ে কাটিং ক্যাচ দেন সেই তানভীরের হাতেই। ক্যাচ নিয়ে একইভাবে মধ্যমা দেখিয়ে উদযাপন করেন তানভীর।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৮ সালের ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে গায়ানা ও সেন্ট কিটসের ম্যাচে। সেই ম্যাচে সেন্ট কিটসের হয়ে তানভীরকে ছক্কা মেরেছিলেন কাটিং। পরের বলে দারুণ এক ইয়র্কারে কাটিংকে বোল্ড করেন তানভীর। এরপর দুই হাতের মধ্যমা দেখিয়ে কাটিংকে বিদায় জানান বাঁহাতি এই পেসার। সেই ঘটনা এখনো ভোলেননি কাটিং।
পিএসএলে একইভাবে জমিয়ে রাখা ক্ষোভ উগড়ে দিলেন এবার। অবশ্য তানভীরও ছেড়ে কথা বলেননি। এই ম্যাচেই কাটিংয়ের ক্যাচ নিয়ে সিপিএলের সেই দৃশ্যর জন্ম দিয়েছেন তিনি। দুজনকেই গুনতে হয়েছে ম্যাচ ফির ১৫ শতাংশ জরিমানা। সিপিএলের সেই ম্যাচেও একই পরিমাণ জরিমানা দিয়েছিলেন তানভীর। পিএসএলের ম্যাচের পর দুজন অবশ্য সব মিটমাট করে নিয়েছেন।
স্টোকস-স্যামুয়েলস
বেন স্টোকস ও মারলন স্যামুয়েলসের রেষারেষির শুরু ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে এক টেস্ট ম্যাচে। গ্রেনাডায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন স্যামুয়েলস। পুরোটা সময় তাকে স্লেজিং করেন স্টোকস। সেই স্লেজিং স্যামুয়েলস তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন অনন্যভাবে। ৮ রান করে আউট হয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে যাচ্ছিলেন স্টোকস। তখন মাথার ফ্লপি হ্যাট বগলদাবা করে স্টোকসকে এক স্যালুট ঠুকে বসেন স্যামুয়েলস।
সেই স্যালুটকান্ডের রেশ ছিল ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও। স্টোকসের চার বলে টানা চার ছক্কা মেরে ক্যারিবিয়ানদের শিরোপা জিতিয়েছিলেন কার্লোস ব্রাথওয়েট। নন স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকে তা দেখেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা স্যামুয়েলস। এর আগেই অবশ্য দুজনের একচোট হয়ে গিয়েছিল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর স্যামুয়েলস যান উইকেটে। তখন স্টোকস তাকে বলেন, ‘আমি দেখতে চাই তোমরা কীভাবে এখান থেকে উঠে আসো।’
স্টোকসের সেই কথাই তাঁতিয়ে দেয় স্যামুয়েলসকে। স্টোকসের সেই কথার জবাবে স্যামুয়েলস খেলেন ৮৫* রানের ইনিংস। এক সাক্ষাতকারে সেবারের শিরোপাজয়ী অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি।
দুজনের প্রকাশ্য এই দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হয়ে আইপিএলের ২০২০ সালের আসরের আগে। আইপিএলে যাওয়ার আগে নিউজিল্যান্ডে নিজের বাবার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন স্টোকস। থাকতে হয়েছিল ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে। তখন কোয়ারেন্টিনের একাকীত্বের ভয়াবহতা বোঝাতে স্টোকস বলেছিলেন, ‘এমনটা আমি আমার চরম শত্রুর জন্যও কামনা করি না। মারলন স্যামুয়েলসের জন্যও না।’
এই কথায় রেগে যান স্যামুয়েলস। স্টোকসের কথার বেশ কড়া জবাব দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি স্টোকসের স্ত্রীকে জড়িয়ে কথা বলতেও ছাড়েননি।
স্যামুয়েলস-ওয়ার্ন
২০১৩ সালের বিগ ব্যাশে তর্কের পর শেন ওয়ার্ন টেনে ধরেছিলেন স্যামুয়েলসের জার্সি। কারণ সেই ম্যাচেই রান বাঁচাতে গিয়ে মেলবোর্ন স্টারসের ডেভিড হাসির জার্সি টেনে ধরেছিলেন স্যামুয়েলস। সেই ঘটনার রেশ ধরে এই দৃশ্যের সূত্রপাত।
এখানেই শেষ নয়। স্যামুয়েলসের গায়ে বলও ছুঁড়ে মেরেছিলেন ওয়ার্ন। মেলবোর্ন রেনেগেডসের স্যামুয়েলসও রেগে গিয়ে ব্যাট ছুঁড়ে মারেন। যদিও সেটা ওয়ার্নের গায়ে যেন না লাগে সেভাবেই মেরেছিলেন তিনি। সেই ম্যাচেই লাসিথ মালিঙ্গার বাউন্সার গিয়ে লাগে স্যামুয়েলসের মাথায়। রক্তপাত শুরু হয় এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, মালিঙ্গা ছাড়া মেলবোর্ন স্টার্সের কোনো ক্রিকেটারই এগিয়ে যাননি তখন।
তখন থেকেই ওয়ার্ন আর স্যামুয়েলসের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়ই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন দুজন। কেউ কাউকে পছন্দ করেন না, এই জিনিস স্পষ্ট। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর সংবাদ সম্মেলনে স্যামুয়েলস ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন ওয়ার্নের ওপর। বিগ ব্যাশের সেই ঘটনার বদলা হয়তো ছিল সেটাই।
স্টোকস-তামিম
২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ইংল্যান্ড। টেস্ট ১-১ সমতায় ড্র করলেও, এর আগে ওয়ানডে জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইংলিশদের হারানোর পর মাঠ ছাড়ছিল বাংলাদেশ দল। তখন করমর্দন করতে এসে তামিমের হাতের জোরে চাপ দেন জনি বেইরস্টো। তামিম জানতে চান, কেন এমন করেছেন তিনি? তখন স্টোকস এসে ধাক্কা দেন তামিমকে।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা প্রচুর স্লেজিং করেছিলেন জস বাটলার-স্টোকসরা। দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের পাল্টা স্লেজিং করেন তামিম আর বাকিরা মিলে। সেটাই পছন্দ হয়নি স্টোকস-বেইরস্টোদের।
ঘটনার রেশ ছিল পরের বছরের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেই স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচ চলাকালীন তামিমের সাথে বাগযুদ্ধে নেমেছিলেন স্টোকস। কিন্তু তামিম হাত নেড়ে স্টোকসকে ইশারা দেন, ‘বোলিং মার্কে চলে যাও।’ স্টোকসের স্লেজিংয়ের জবাব তামিম সেদিন দিয়েছিলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে।