• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    ইতিহাদে থ্রিলার, এবারও শেষ হাসি কেইনদের

    ইতিহাদে থ্রিলার, এবারও শেষ হাসি কেইনদের    

    ম্যানচেস্টার সিটি ২:৩ টটেনহাম হটস্পার


     

    ম্যাচের আগে স্পার্স ম্যানেজার আন্তোনিয়ো কন্তে স্বীকার করে নিয়েছিলেন, পেপ গার্দিওলাই বিশ্বের সেরা কোচ। ঐশ্বর্যে ভরা ম্যানচেস্টার সিটি কতটা দুর্দান্ত তা নিয়েও কম বলেননি তিনি। লিগে বিগত ১৫ ম্যাচে মাত্র দুই পয়েন্ট খোয়ানো সিটির প্রশংসা করার জন্য বিশেষণের অভাব পড়বে না কারোরই। 

    জবাবে গার্দিওলা বলেছিলেন, কন্তের দল থেকে সবসময় শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে যেন গার্দিওলাকে সেই শিক্ষাটাই দিলেন কন্তে। ৭০ শতাংশের বেশি বলের দখল রেখে, তিনগুণ বেশি আক্রমণ করেও স্পার্সের কাছে মৌসুমের দ্বিতীয় পরাজয়ের মুখ দেখল সিটিজেনরা। জোড়া গোল করে এই জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন হ্যারি কেইন।

    যথারীতি সিটি ম্যাচ শুরু করলেও ম্যাচের প্রথম কাউন্টার অ্যাটাকেই গোল দিয়ে বসে স্পার্স। চতুর্থ মিনিটে স্পার্সের হাফ থেকে দুর্দান্ত এক থ্রু বলে সিটির ডিফেন্স ছিঁড়ে দৌড় দেওয়া হিউয়েং মিন সনকে খুঁজে পান কেইন। সনকে ঠেকাতে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সামনে এগিয়ে আসেন সিটি কিপার এডারসন। বক্সের ঠিক সামনে থেকে সন ডানদিকে পাস দেন দেঁজান কুলুসেভস্কির কাছে। বল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জোয়াও ক্যান্সেলোকে নাটমেগ করে গোল করেন স্পার্সের প্রথম একাদশে অভিষেক হওয়া এই সুইডিশ অ্যাটাকার। 

    এই গোলের পর ব্যাপক আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ডি ব্রুইনারা। একের পর আক্রমণ করে গেলেও জোনাল ডিফেন্ডিং করা স্পার্স ভালোভাবেই সামলে নিচ্ছিল তাদের। ২০ মিনিটে ইলকে গুন্ডোগানের দূরপাল্লার শট সাইডবারে লেগে ফিরে যায়। এর আগে-পরে আরও বেশ কয়েকটি সিটি অ্যাটাক গোল হওয়ার কাছাকাছি গেলেও স্পার্স কিপার হুগো লরিসকে বিব্রত করেনি। 

    ৩৩তম মিনিটে এসে স্পার্সের গোলে প্রথম শট নিতে সমর্থ হয় সিটিজেনরা। লেফট উইং থেকে করা স্টার্লিংয়ের ক্রস গিয়ে পড়ে লরিসের হাতেই। কিন্তু বল মুষ্টিবদ্ধ করতে ব্যর্থ হন লরিস। তার হাত থেকে বল ছুটে সরাসরি গিয়ে পড়ে গুন্ডোগানের সামনে। বক্সের এতো ভেতর থেকে সেই বলকে জালে জড়াতে কোনো ভুল করেননি এই জার্মান।

    এক-এক গোলে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধেও ম্যাচের চেহারা একইরকম থাকে। প্রথম এক ঘণ্টায় স্পার্সের বক্সে সিটি প্রায় ৩৬টি টাচ পেলেও তার বিপরীতে সিটি বক্সে স্পার্সের খেলোয়াড়েরা টাচ পায় মাত্র দুইটি। কিন্তু এই আধিপত্য কন্তের গেমপ্ল্যানে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। 

    কন্তে জানতেন সিটির বিপক্ষে বলের দখল তেমন পাবে না তার শিষ্যরা। তাই যেই অল্প সময় বল পাবে তারা, সেটির যথাযোগ্য ব্যবহার করাই ছিল প্ল্যান। কিন্তু জোনাল মার্কিংয়ের মাধ্যমে সিটিকে থেঁতো করে দেওয়ার ডিফেন্সিভ পরিকল্পনা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলেও কাউন্টার অ্যাটাকে তেমন সুবিধা করতে পারছিল না স্পার্স। 

    তাদের সিংহভাগ লং বলেই ছিল অ্যাকুরেসির অভাব। তবে সেই দুই একটি লং বল ঠিকভাবে দিতে পেরেছে স্পার্স, সেগুলোতেই কেঁপে ওঠেছে সিটির রক্ষণ। ৫৯তম মিনিটে এমন একটি বলই দেন সন। বাম পাশ থেকে তার করা ক্রস সরাসরি গিয়ে পড়ে কেইনের পায়ে। সেটি জালে জড়াতে ভুল করেননি ইংল্যান্ড অধিনায়ক। 

    পাঁচ মিনিট পর একটি কাউন্টার অ্যাটাকে আবার এডারসনের মুখোমুখি হন কেইন। এবারও বাঁকানো এক পাসে কেইনকে খুঁজে নেন সনই। কিন্তু এডারসনকে একা পেয়ে এবং তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করার সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগে লাগাতে পারেননি কেইন। তার শট গিয়ে ঠেকে এডারসনের বাম পায়ে। 

    এর দুই মিনিটের মাথায়, ৬৬তম মিনিটে অপর পাশে একটা দুর্দান্ত আক্রমণ চালায় সিটি। বাম পাশে বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো এক শটে গোলের সর্ব ডানের প্রান্তকে টার্গেট করেন গুন্ডোগান। মাঠভর্তি দর্শক প্রায় উদযাপন করা শুরু করে দিলেও বাজপাখির মতো একটি ডাইভ দিয়ে সেই বল ফিরিয়ে দেন লরিস।

    ৭৪ মিনিটে অবশ্য স্পার্স একবার ম্যাচ জেতার উদযাপন করেই ফেলেছিল। রাইট উইং থেকে আক্রমণে উঠে কুলুসেভস্কি শট নেন। সেই শট ডিফ্লেক্টেড হয়ে এসে পড়ে কেইনের পায়ে। সুনিপুণভাবে বলটি গোলের বাম পাশে পাঠিয়ে দেন কেইন। কিন্তু ভিএআর চেকে কুলুসেভস্কির অফসাইড ধরা পড়লে বাতিল হয়ে যায় গোলটি।

    এরপর সিটির চাপ দক্ষতার সাথে প্রতিহত করলেও ৮৯ মিনিটে এসে একটি ভুল করে বসে স্পার্সের রক্ষণ। বামপাশ থেকে করা বার্নার্দো সিলভার ক্রস গিয়ে লাগে ভূপাতিত হতে থাকা রোমেরোর হাতে। হাতে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তার হাতে লেগে বলের গতি যথেষ্টই পরিবর্তিত হয়। প্রথমে এই ঘটনা খেয়াল না করলেও ভিএআরের পরামর্শে পরে সিটিকে পেনাল্টি দেন রেফারি। সেই পেনাল্টিকে কাজে লাগিয়ে যোগ করা সময়ে সিটিকে সমতায় ফেরান রিয়াদ মাহরেজ। 

    ৯২তম মিনিটে এই সমতাসূচক গোল হওয়ার পর মনে হচ্ছিল, ম্যাচের সব রোমাঞ্চ বুঝি শেষ হলো। কিন্তু না। গোল খাওয়ার পর কিক-অফ থেকেই আক্রমণে উঠে কেইনরা। ৯৫তম মিনিটে বাম পাশ থেকে বল নিয়ে উঠেন কুলুসেভস্কি। এবার তিনি অনসাইড। বক্সের কাছে এসে মাঝখান বরাবর করেন একটি মাপা ক্রস। সেই ক্রস গিয়ে পড়ে কেইনের মাথায়। কেইনের হেড, এবং গোল। 

    এ যেন ২০১৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থ্রিলারের পুনঃচিত্রায়ন। এবারও হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন গার্দিওলা। আর উন্মত্ত উদযাপনে মেতে উঠেন কন্তে ও স্পার্স ডাগআউট।

    গ্রীষ্মে সিটিতে যোগ দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন কেইন। সেই দলবদল নাটকের জন্যই হয়তো এই মৌসুমে ঠিক চেনা রূপে ফেরা হয়নি তার। তবে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে এসেই যেন চেনা রূপে ফিরলেন ইংলিশ অধিনায়ক। সবাইকে আবার মনে করিয়ে দিলেন কেন তার জন্য ১৬০ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত খরচ করতে রাজি ছিল ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি। আর এর বদৌলতে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নদের মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো হারানোর বিরল এক দৃষ্টান্ত তৈরি করল স্পার্স।