রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকার শেষে ওয়েম্বলিতে প্রথমের স্বাদ পেলেন ক্লপ
মাইনজ, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড হয়ে একটি শীর্ষস্থানীয় ইংলিশ ক্লাব, নিজের অজান্তেই হয়তো ইয়ুর্গেন ক্লপের ক্যারিয়ার রোডম্যাপ অনুসরণ করেছেন টমাস টুখেল। ইংল্যান্ডে এসে ক্লপের মতোই পেয়েছেন সাফল্যের দেখা। কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে আবারও স্বদেশীর সামনে মাথা নত করেই মাঠ ছাড়তে হলো টুখেলের। রোববার ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে কারাবায়ো কাপের শ্বাসরুদ্ধর ফাইনালে টাইব্রেকারে শেষ হাসি হেসেছে ক্লপের লিভারপুলই
পুরো কারাবায়ো কাপে লন্ডনের বাইরে না যাওয়া চেলসি শহরে থেকেই শিরোপাটি বাক্সবন্দী করার পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিল। ওয়েম্বলির ফাইনাল ফ্রন্টফুটে থেকেই শুরু করে লন্ডনের ক্লাবটি। ষষ্ঠ মিনিটে গোল দেওয়ার একটি দারুণ সুযোগ পায় চেলসি। মাঠের বাম পাশ থেকে কয়েকজন প্লেয়ারকে কাটিয়ে রাইট উইংব্যাক সিজার আজপিলিকুয়েতাকে বল দেন কাই হ্যাভার্জ। দ্রুত ক্রসে সেই বল বক্সে পাঠান আজপি। কিন্তু সেই ক্রস থেকে ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিকের নেওয়া শট সরাসরি যায় গোলকিপার বরাবর।
চেলসির প্রাথমিক চাপ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে দ্রুতই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে লিভারপুল। মিডফিল্ডের প্রেস এবং আক্রমণভাগের গতি ও চতুরতা ভোগাতে শুরু করে চেলসিকে। ১৯ মিনিটে রক্ষণ থেকে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আরনল্ডের বাড়ানো সুচারু লং পাস খুঁজে নেয় প্রতিপক্ষ বক্সে আড়ি পাতা সাদিও মানেকে। কিন্তু মানে সেই বলে ঠিকমত হেড করতে ব্যর্থ হন।
১০ মিনিট পর আরেকটি সুযোগ পান মানে। ডিবক্সের বাইরে থেকে নাবি কেইটার নেওয়ার শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন চেলসি কিপার এডওয়ার্ড মেন্ডি। ফিরতি বল গিয়ে পরে মানের পায়ে। বলতে গেলে প্রায় ফাঁকা গোলপোস্টের সামনে দাঁড়িয়ে শট নেন মানে। কিন্তু সবাইকে তাক লাগিয়ে সেই বলও ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন মেন্ডি। এই সেনেগালিজ কিপারের বীরত্ব অব্যাহত থাকে ম্যাচের বাকি সময়জুড়েও।
মানে দুটি সুযোগ হাতছাড়া করার পর যেন তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা লাগিয়েই দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন ম্যাসন মাউন্ট। ষষ্ঠ মিনিটের আক্রমণটির মতো প্রায় একই রকম এক আক্রমণে প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে লিভারপুলকে ঘায়েল করে চেলসি। এবার হ্যাভার্জের ক্রস থেকে বক্সে বল পান মাউন্ট। কিন্তু তার নেওয়া শট সাইডবারের মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূর দিয়ে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এরচেয়েও সহজ একটি সুযোগ পান এই ইংলিশ মিডফিল্ডার। রক্ষণ থেকে আসা এক লং বল লিভারপুলের বক্সে রিসিভ করেন মাউন্ট। সব ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে খালি বক্স পেয়ে বসা মাউন্ট দেখেশুনে শট নেন গোলের ডানপাশে। কিন্তু সাইডবারের লেগে ফিরে আসে সেই বল।
ম্যাচের ৬৯তম মিনিটে লিভারপুল একটি গোল দিয়েই বসেছিল। আর্নল্ডের ফ্রিকিকে বক্সের বাঁপাশ থেকে হেড দেন মানে। সেই হেডে গোলের ডানপাশে যেতে থাকা বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন জোয়েল মাতিপ। কিন্তু ভিএআর চেকে ভার্জিল ভ্যান ডাইকের অফসাইড ধরা পড়লে পরে বাতিল করা হয় গোলটি।
পরবর্তীতে অবশ্য লিভারপুলের বাতিল হওয়া গোলের চেয়েও বেশি বিনোদনমূলক ব্যাপার হয়ে উঠে চেলসির অফসাইডে গোল দেওয়া। পুরো ম্যাচে তিন তিনবার অফসাইডে গোল দেয় টুখেলের শিষ্যরা। ক্লপের হাইলাইন তিনবারই রক্ষা করে লিভারপুলকে।
গোল বাদে নির্ধারিত সময়ের খেলা ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে যেন সবকিছুই ছিল। বাতিল হওয়া গোল, ভিএআর বিতর্ক, রক্ষণ ও দুই গোলকিপারের বীরত্ব, এমনকি সামান্য হাতাহাতিও। বাকি ছিল শুধু গোলই।
সেই গোলের পসরা নিয়েই যেন হাজির হয় টাইব্রেকার। দুই দলেরই প্রথম পাঁচজন বল জালে জড়ালে শুরু হয় টাইব্রেকারের অন্তিম পর্যায়। সেখানেও একে একে সবাই জালের দেখা পেতে শুরু করেন। দুই দলের ১০ জন অন-ফিল্ড প্লেয়ারই গোল পান। দলের ১১তম পেনাল্টি নিয়ে আসেন গোলকিপার চাওমিন কেলেহার। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত কিপিং করে দলকে সাহায্য করা এই আইরিশ তরুণ বল পায়েও ধরে রাখেন সেই আত্মবিশ্বাস। কেপাকে উল্টো পাশে পাঠিয়ে জালে জড়ান দলের ১১তম পেনাল্টিটি।
এরপর পেনাল্টি নিতে আসেন স্বয়ং কেপা। ১১৯ মিনিটে মেন্ডির বদলি হিসেবে নামা এই স্প্যানিয়ার্ড টানা ১০টি পেনাল্টি মিস করার পর আসেন নিজে শট নিতে। তার শট উড়ে যায় গোলপোস্টের উপর দিয়ে। আর উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে লিভারপুল ও ওয়েম্বলি লাল শিবির।
এই জয়ে ১০ বছর পর লিভারপুলের হাতে ওঠল লিগ কাপের শিরোপা। এই নিয়ে নয়বারের মতো কাপ শিরোপায় হাত রেখেছে মার্সিসাইডের দলটি, যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসেই সর্বোচ্চ। স্কোয়াডে গভীরতার অভাবের জন্য প্রায়শই কাপ টুর্নামেন্টগুলোকে অবজ্ঞা করা ক্লপও এই জয়ের বদৌলতে পেলেন প্রথম কাপ শিরোপার স্বাদ, তৃতীয় চেষ্টায় জিতলেন ওয়েম্বলির ফাইনালও।