রূপকথার হ্যাটট্রিকেই সবকিছুর জবাব দিলেন রোনালদো
ম্যান ইউনাইটেড ৩:২ টটেনহাম হটস্পার
বছরের প্রায় আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও (এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত) গোলের দেখা পেয়েছেন মাত্র একবার। এটা যে একেবারেই রোনালদোসুলভ না। এই পর্তুগিজের গোলখরার সঙ্গে ছিল দলের ছন্নছাড়া পারফরম্যান্স। গত সপ্তাহে ম্যানচেস্টার ডার্বিতে পরাজয়ের পর গেল গেল রবই শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ডার্বিতে রোনালদো না খেললেও আলোচনায় ঠিকই ছিলেন। রয় কিনের মতো সাবেক ইউনাইটেড তারকারা রোনালদোর চোটের সংবাদকে তুরি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রশ্ন তুলেছেন রোনালদোর কমিটমেন্ট নিয়ে। এ সব বিতর্কের জবাব দিতেই যেন স্পার্সের বিপক্ষে নামলেন রোনালদো। শীর্ষ চারের লড়াইয়ে মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে তার হ্যাটট্রিকেই তিন পয়েন্ট আদায় করেছে রেড ডেভিলরা।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে শুরুতে স্পার্স কয়েকবার আক্রমণে আসলেও ম্যাচের নবম মিনিটেই জোরালো একটি পেনাল্টির আবেদন করে ইউনাইটেড। সাঞ্চোর কাটব্যাক থেকে রোনালদো নেওয়ার শট ম্যাট ডোখার্টির হাতে লাগলেও তাতে পেনাল্টি দেয়নি রেফারি বা ভিএআর।
পেনাল্টির আক্ষেপ অবশ্য বেশিক্ষণ ভোগায়নি ইউনাইটেডকে। এর তিন মিনিটের মাথায় ডিবক্সের বেশ বাইরে থেকে দূরপাল্লার এক শটে স্পার্স কিপার হুগো লরিসকে দুর্দান্ত এক শটে পরাস্ত করেন রোনালদো। এই কিংবদন্তির পক্ষ থেকে ম্যাচে যে আরও কিছু আসতে যাচ্ছে, সেই ইঙ্গিত তখনই পাওয়া যায়।
শুধু আক্রমণ না, ট্র্যাক ব্যাক করে রক্ষণেও সাহায্য করার চেষ্টা করতে থাকেন রোনালদো। দলকে ম্যাচ জেতানোর মিশন নিয়েই যেন নেমেছিলেন।
সেই মিশনে অবশ্য বাঁধ সাধতে শুরু করে তার দলের খেলোয়াড়েরাই। ৩৪তম মিনিটে বক্সের ডানপাশ থেকে কুলুসেভস্কির করা ক্রসে হাত লাগিয়ে বসেন অ্যালেক্স টেলেস। পেনাল্টি পায় স্পার্স। পেনাল্টি বিশারদ হ্যারি কেইনের সেই পেনাল্টি জালে জড়াতে তেমন বেগ পেতে হয়নি।
স্পার্স সমতায় ফিরলেও বেশিক্ষণ স্বস্তিতে থাকতে পারেনি। এ গোলের মিনিটখানেকের মধ্যে আবার আক্রমণে আসে রোনালদোরা। মধ্যমাঠ থেকে মাতিচের দেওয়া পাস পেয়ে লেফট উইংয়ে লম্বা একটি রান নেন সাঞ্চো। বক্সের কাছে এসে যথাসময়ে করেন ক্রস। সেই ক্রস গিয়ে পৌঁছায় গোলকিপারের সামনে থাকা রোনালদোর পায়ে। তার সুনিপুণ ট্যাপ-ইনে আবারও লিড পায় ইউনাইটেড।
২-১ ব্যবধানে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধেও ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল খেলতে শুরু করে দুই দল। এরমধ্যে স্পার্স সমতায় ফেরার জন্য বেশ কিছু দুর্দান্ত সুযোগও তৈরি করে। সমতার জন্য মরিয়া স্পার্সের জন্য এবারও ‘ত্রাতা’ হয়ে আবির্ভূত হয় ইউনাইটেডেরই একজন। তিনি আর কেউ না, স্বয়ং হ্যারি ম্যাগুয়ের। প্রায় প্রতি ম্যাচেই রক্ষণে ভুল করার জন্য নিন্দিত ম্যাগুয়ের এবার চূড়ান্ত ভুলটিই করে বসলেন।
৭২তম মিনিটে লেফট উইং থেকে করা রেগুইলনের ক্রসকে নিজের জালে জড়িয়ে বসেন এই ইংলিশ ডিফেন্ডার। আবারও সমতায় ফেরে স্পার্স।
তবে এই সমতা যেন রোনালদোর স্ক্রিপ্টকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্যই আনা। হ্যাটট্রিক নিশ্চিতকারী গোলটির তাৎপর্য তখন কমে যেত কি না!
৮২ মিনিটে একটি কর্নার পায় ইউনাইটেড। টেলেসের নেওয়া কর্নারে রোনালদোকে ঠিকমত মার্ক করেনি স্পার্সের কেউ। নিকটস্থ প্লেয়ার ডোখার্টি থেকে কয়েক হাত উপরে লাফ দিয়ে বলে মাথা ছুঁয়ান রোনালদো। তার দুর্দান্ত হেডটি গিয়ে পৌঁছায় জালের উপর-ডান কোনায়। আর এরই মাধ্যমে ওল্ড ট্রাফোর্ড সাক্ষী হয় আরেকটি রূপকথাময় রোনালদো পারফরম্যান্সের। প্রিমিয়ার লিগে টেডি শেরিংহামকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে হ্যাটট্রিক এখন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর, যা তার ৪৯তম। সেই সঙ্গে পেশাদার ফুটবলে ৮০৭ গোল করে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন অবিসংবাদিতভাবে।