রোনালদোদের স্বপ্ন ভেঙ্গে শেষ আটে অ্যাটলেটিকো
ম্যান ইউনাইটেড (১) ০:১ (২) অ্যাট. মাদ্রিদ
আয়াক্স (২) ০:১ (৩) বেনফিকা
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ মৌসুম শুরু করেছিল লিগ শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে। অপরদিকে ভারান-সাঞ্চো-রোনালদোকে দলে ভেড়ানো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড স্বপ্ন দেখছিল লিগ শিরোপা আবার ঘরে ফেরানোর। সেই স্বপ্ন অনেক আগেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। শুধু লিগ না, সব ঘরোয়া শিরোপার দৌড় থেকেই বাদ পড়েছে এই দুই দল। সর্বশেষ প্রতিযোগিতা (এবং সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা) হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ১৬ তাই এক অর্থে দুই ক্লাবের জন্যই ছিল মৌসুমের অঘোষিত ফাইনাল।
ইউনাইটেডের হতাশাকে বাড়িয়ে দিয়ে সেই ফাইনালে শেষ পর্যন্ত জয়ী হলো অ্যাটলেটিকোই। রেনান লোদির একমাত্র গোলে কোয়ার্টারের টিকিট কেটেছে লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা। এদিকে, ডারউইন নুনেজের গোলে আয়াক্স হারিয়েছে পর্তুগিজ দল বেনফিকা।
শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগে মঙ্গলবার ওল্ড ট্রাফোর্ডে ছিল ফাইনালের আমেজই। ম্যাচের প্রথম বড় সুযোগটি তৈরি করে স্বাগতিকরা। ডানপাশ থেকে আক্রমণে উঠে ইউনাইটেড। ডালট, রোনালদো হয়ে বল যায় ব্রুনো ফার্নান্দেসের পায়ে। রাইট উইং থেকে ফার্নান্দেসের করা ক্রস একদম পছন্দসই জায়গায় পান অ্যান্থনি ইলাঙ্গা। ওল্ড ট্রাফোর্ড প্রায় উদযাপন শুরু করে দিলেও ইলাঙ্গার শট ইয়ান ওবলাকের মুখে লেগে ফিরে আসে। পুরো ম্যাচে এরচেয়ে বড় সুযোগ আর তৈরি করতে পারেনি ইউনাইটেড।
ওবলাকের পর নিজের সামর্থ্যের পরিচয় দেন ডেভিড ডি হেয়াও। ১৮ মিনিটে রদ্রিগো ডি পলের নেওয়া দূরপাল্লার শট ডানপাশে ডাইভ দিয়ে সেভ করেন এই স্প্যানিয়ার্ড।
৩৩তম মিনিটে খুবই গুছানো এক আক্রমণ করে অ্যাটলেটিকো। মাঝমাঠে ইউনাইটেডের প্রেস উপেক্ষা করে আক্রমণে উঠে গ্রিজমানরা। কোকে, গ্রিজমান হয়ে বল পান রদ্রিগো ডি পল। সুন্দর এক থ্রু বলে তিনি রাইট উইংয়ে খুঁজে নেন মার্কোস য়ুরেন্তেকে। য়ুরেন্তের ক্রসে পা ছুঁইয়ে গোল করেন ফেলিক্স। কিন্তু অফসাইডের জন্য বাতিল হয় সে গোল।
গোল বাতিল হওয়ার আফসোস অবশ্য বেশিক্ষণ পোড়াতে পারেনি সিমিওনের দলকে। ৯ মিনিটের মাঝে আরেকটি গুছানো আক্রমণে ইউনাইটেডকে কাবু করে তারা। রেডডেভিলদের রক্ষণ চিড়ে এই আক্রমণ শুরু করেন ফেলিক্স। বক্সের ভিতরে ঢুকে তিনি বল পাঠান রাইট উইংয়ে থাকা গ্রিজমানকে। সুনিপুণ এক ক্রসে গ্রিজমান খুঁজে নেন অপর উইংয়ে থাকা লোদিকে। পোস্টের কাছে একদম ফাঁকা দাঁড়িয়ে থাকা লোদি সেই ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে এগিয়ে নেন সফরকারীদের।
হাফটাইমে পিছিয়ে থাকা ইউনাইটেড দ্বিতীয়ার্ধে আরেকটু আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করে। আর দ্বিতীয়ার্ধের সিমিওনে গ্রহণ করেন তার চিরায়ত লিড ধরে রাখার ট্যাকটিস- লো ব্লকে রক্ষণ করে কাউন্টারের জন্য অপেক্ষা করা। সেই ট্যাকটিসেই সফল হয় অ্যাটলেটিকো। ইউনাইটেড একের পর এক আক্রমণে আসার চেষ্টা করলেও সেগুলো ফিরিয়ে দিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি হোসে মারিয়া হিমনেজদের। আর প্রতি-আক্রমণে বেশ কিছু দারুণ সুযোগ তৈরি করতেও সক্ষম হয় সফরকারীরা।
শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়ার্ধে আর কোনো গোল হয়নি। দিনে ১-০ ব্যবধানের জয় এবং অ্যাগ্রিগেটে ২-১ ব্যবধানের জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে সিমিওনের শিষ্যরা।
স্বাভাবিকভাবেই এই ম্যাচেও বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এই মৌসুমের আগ পর্যন্ত অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে ৩৫ ম্যাচ খেলে ২৫ গোল করেছিলেন তিনি। এরমধ্যে আছে তিনটি হ্যাটট্রিকও। এছাড়া এ মৌসুমে গ্রুপ পর্বে ইউনাইটেডকে একাধিক ম্যাচে রক্ষা করা এবং লিগে সর্বশেষ ম্যাচেও হ্যাটট্রিক করা সিআর সেভেন এ ম্যাচেও বাজিমাত করবেন, তার পক্ষেই ছিল সবার বাজি।
কিন্তু প্রথম লেগের মতো এই লেগেও নিজের ছায়া হয়ে থাকলেন এই পর্তুগিজ। পুরো ৯০ মিনিটে গোলমুখে নিতে পারেননি একটি শটও।
আর এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে অবশেষে রোনালদো-অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছেন সিমিওনে। অ্যাটলেটিকো ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২০২০ সালের আগ পর্যন্ত শুধু রোনালদোর দলের বিপক্ষে হেরেই বাদ পড়েছেন এই গুণী ম্যানেজার। দুটি ফাইনালসহ চারবার রোনালদোর দলের (রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাস) বিপক্ষে হেরেছে সিমিওনের অ্যাটলেটিকো।
দিনের অপর ম্যাচে আয়াক্সকে হারিয়েছে বেনফিকা। গ্রুপ পর্বে সবকটি ম্যাচ জিতে রেকর্ড করা এই আয়াক্সের মাঝে ২০১৮-১৯ মৌসুমের ছায়া দেখতে পাচ্ছিল অনেকে। কিন্তু শেষ ১৬’তে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েও ভক্তদের হতাশ করেছে হল্যান্ডের দলটি। প্রথম লেগে ড্র করার পর ঘরের মাঠে দ্বিতীয় লেগে কোনো গোল করতে ব্যর্থ হয়েছে এরিক টেন হাগের শিষ্যরা। এ কারণে ডারউইন নুনেজের দ্বিতীয়ার্ধের গোলই বেনফিকার জন যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। ৭৭ মিনিটের এই গোলে ছয় বছর পর কোয়ার্টার ফাইনাল পা রেখেছে বেনফিকা।