• বিশ্বকাপ বাছাই
  • " />

     

    বিশ্বকাপের ইউরোপিয়ান ও আফ্রিকান প্লে অফ: যা যা জানা প্রয়োজন

    বিশ্বকাপের ইউরোপিয়ান ও আফ্রিকান প্লে অফ: যা যা জানা প্রয়োজন    

    সালাহ, রোনালদো বা কিয়েসা: এই বিশ্বকাপ প্লে-অফ কতটা গুরুত্বপূর্ণ? কারা থাকছেন, কারা বাদ পড়ছেন? 

    আর কয়েকমাস বাদেই বিশ্বকাপ। ফুটবল জগতের সবচেয়ে বড় আসরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে দেখাই যাবে না, কল্পনা করতে পারেন? কিংবা মোহামেদ সালাহকে যদি না দেখা যায়? ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি, বা আফকন চ্যাম্পিয়ন সেনেগালের অনুপস্থিতিই বা কীভাবে মেনে নিবেন? 

    কোনোটিই সহজে মেনে নেওয়ার মতো না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আসছে বাছাই পর্বেই শেষ হয়ে যাবে বিশ্বের কয়েকজন তারকা ফুটবলার এবং কয়েকটি দুর্দান্ত দলের কাতার বিশ্বকাপে যাওয়ার স্বপ্ন। 

    ইউরোপে গ্রুপপর্বে শীর্ষে থেকে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়া কয়েকটি দেশ মিলে লড়বে শেষ তিন স্পটের জন্য। এই দৌড়ে আছে সর্বশেষ দুই ইউরোর চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল ও ইতালি। এবং আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হবে পাঁচটি নক-আউট ম্যাচ, যেগুলোর শেষে বাদ পড়বে মহাদেশের ঐতিহ্যবাহী কিছু দল। 

    বছরের অন্য যেকোনো ইন্টারন্যাশনাল ব্রেকের চেয়ে এবারের ব্রেক তাই একটু বেশিই তাৎপর্য বহন করছে। বাছাইপর্বের সর্বশেষ রাউন্ডের উত্তেজনা স্বাভাবিকভাবেই অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। 

    ইউরোপ ও আফ্রিকাজুড়ে হতে চলা এই প্লে-অফের সব প্রয়োজনীয় তথ্য ও খুঁটিনাটি তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে- 

     

    প্রক্রিয়া- কী, কীভাবে, কেন?  

    ইউরোপে গ্রুপ পর্বের ১০ রানার আপ এবং ২০২১ নেশন্স লিগে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা দুই দল, যারা শীর্ষে থেকে বিশ্বকাপের টিকিট কাটতে ব্যর্থ হয়েছে (অস্ট্রিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্র), এই ১২ দলকে তিনটি পৃথক প্লে-অফ গ্রুপে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। 

    প্রতি গ্রুপে থাকছে চার দল। এই চার দলকে দুই ভাগ করে দুটি নকআউট সেমিফাইনাল এবং একটি ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। 

    যার মানে, প্লে-অফ থেকে বিশ্বকাপে পা রাখতে চাইলে একটি দলকে টানা দুটি ম্যাচ জিততে হবে। একটু হেরফের হলেই বাদ। 

    প্লে-অফের ‘সি’ গ্রুপে পড়েছে পর্তুগাল ও ইতালি। বৃহস্পতিবার তুরস্কের বিরুদ্ধে সেমিতে মাঠে নামবে পর্তুগাল, আর উত্তর মেসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে ইতালি। ২৯ মার্চ এই দুই সেমিতে জয়ীদের মাঝে প্লে-অফ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। আর তাতে জয়ী দল পাবে কাতারের টিকিট।

    আফ্রিকায় দুই লেগে পাঁচটি নক-আউট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। জয়ী পাঁচ দল জায়গা করে নেবে বিশ্বকাপে। যার ফলে বাদ পড়বে বেশ কয়েকটি মহাদেশীয় পরাশক্তি এবং কাতারে দেখা যাবে না বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলারকে। 

     

    আফ্রিকা অঞ্চলের ড্র: 

    কঙ্গো বনাম মরক্কো 

    ক্যামেরুন বনাম আলজেরিয়া 

    মালি বনাম তিউনিসিয়া 

    মিশর বনাম সেনেগাল 

    ঘানা বনাম নাইজেরিয়া 

    সবকটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবারে। সালাহ বা মানে, এই দুই লিভারপুল তারকা ও আফকনের ফাইনালিস্টের মধ্যে একজনকে দেখা যাবে না কাতারে। এছাড়া, কাতারের দৌড় থেকে বাদ পড়তে পারে রিয়াদ মাহরেজের আলজেরিয়া কিংবা কেলেচি ইহিনাচোর নাইজেরিয়াও। 

     

    ইউক্রেন যুদ্ধ কি বাছাইপর্বকে প্রভাবিত করবে? 

    রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর রাশিয়া ফুটবল ইউনিয়নকে সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। 

    প্লে-অফে ‘বি’ গ্রুপে অবস্থান করছিল রাশিয়া। এই গ্রুপের বাকি তিন দল- পোল্যান্ড, সুইডেন ও চেক প্রজাতন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার বিপক্ষে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। 

    রাশিয়ার বিপক্ষে প্লে-অফ সেমিফাইনাল খেলার কথা ছিল পোল্যান্ডের। রাশিয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় আগামী ২৯ মার্চ সুইডেন বা চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে সরাসরি ফাইনাল খেলবে পোল্যান্ড। 

    ইউক্রেন অবস্থান করছে গ্রুপ ‘এ’তে। তাদের প্লে-অফ সেমিফাইনাল খেলার কথা স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। যুদ্ধের জন্য এই প্লে-অফকে আপাতত স্থগিত করার জন্য অনুরোধ করেছে ইউক্রেন অ্যাসোসিয়েশন অব ফুটবল। 

    ফিফাও যথারীতি স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কিন্তু নতুন কোনো তারিখ ঠিক করেনি স্কটল্যান্ড-ইউক্রেন ম্যাচের জন্য। ম্যাচটি জুনে হতে পারে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ইএসপিএন। তবে তখনো সমস্যার সমাধান না হলে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে ফিফার। 

     

    কোন বড় তারকারা বাদ পড়তে পারেন এই প্লে-অফ থেকে? 

    সর্বশেষ দুই ইউরো চ্যাম্পিয়নের একটিকে দেখা যাবে না কাতারে। পর্তুগাল ও ইতালি একই গ্রুপে পড়ায় হিসাব-নিকাশ এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। 

    বাদ পড়াটা ইতালির জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে। চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা গত বিশ্বকাপেও মূল আসরে খেলতে পারেনি। সুইডেনের বিপক্ষে দুই লেগের একটি প্লে-অফ হেরে ২০১৮ বিশ্বকাপের দৌড় থেকে বাদ পড়েছিল আজ্জুরিরা। ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ১২ মাসের মধ্যে আবারও একই পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে রবার্তো মানচিনির দল। 

    রোনালদো ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিবেন তিনি। অনেক সিয়ারসেভেন ভক্তই তাই আশায় বুক বেঁধে আছেন, এবারই হয়তো অধরা শিরোপাটি হাতে উঠবে এই ৩৭ বছর বয়সী মহাতারকার। ডিয়োগো জোটা, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, জোয়াও ফেলিক্স, রুবেন ডিয়াজদের নিয়ে গড়া পর্তুগাল দলও স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। কিন্তু গ্রুপ পর্বে রানার আপ হওয়ায় এখন তাদের উপর চোখ রাঙানি দিচ্ছে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই বাদ পড়ে যাওয়ার ভয়। 

    এর বাইরে, ২০১৮ বিশ্বকাপ মিস করা জলাতান ইব্রাহিমোভিচও স্বপ্ন দেখছেন আরেকটি বিশ্বকাপ খেলে অবসর নেওয়ার। ৪০ বছর বয়সী সুইডেন তারকা যদি সেটা করতে পারেন, তাহলে বিশ্বকাপে দেখা যাবে রবার্ট লেভানডফস্কিকে। ইব্রার সুইডেন এবং লেভার পোল্যান্ড যে পড়েছে একই গ্রুপে। 

    এদিকে আফ্রিকান ফুটবলের কনফেডারেশন প্লে-অফের ড্র করেছে গত ২২ জানুয়ারি, যখন আফকন চলছে। যে কারণে, টুর্নামেন্ট-পূর্ব ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে এই ড্র।  র‍্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ দলকে রাখা হয়েছে এক পাত্রে, বাকি দলগুলোকে অন্য পাত্রে। 

    এই ড্র আফকন শেষ হওয়ার পর করলে দুই আফকন ফাইনালিস্টকে আর একই স্পটের জন্য লড়াই করতে হতো না। আফ্রিকার শীর্ষ দুই দলেরই সম্ভাবনা থাকত বিশ্বকাপে খেলার। 

     

    আরও কোনো প্লে-অফ আছে? 

    আগামী ২৭-৩০ মার্চের মধ্যে ওশেনিয়া অঞ্চলের চার দলের প্লে-অফ আয়োজন করবে কাতার। এই চারটি দল হচ্ছে- নিউজিল্যান্ড, ফিজি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও তাহিতি। 

    ওশেনিয়া প্লেঅফের বিজয়ী দল আগামী ১৩-১৪ জুন কাতারে উত্তর আমেরিকার চতুর্থ স্থান অধিকারী দলের মুখোমুখি হবে সর্বশেষ বিশ্বকাপ স্পটের জন্য। আর ১৩-১৪ জুন দোহায় এশিয়ার চতুর্থ স্থানে থাকা দল মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আমেরিকার পঞ্চম স্থানে থাকা দলের। 

     

    কবে হচ্ছে বিশ্বকাপের ড্র? 

    বেশি দেরি নেই ড্রয়ের। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১ এপ্রিল, দোহায়। 

    ৩২টি দেশকে চারটি করে মোট আট গ্রুপে ভাগ করে দেওয়া হবে। জুনে প্লে অফ থাকা দলগুলোকে ‘কোয়ালিফায়ার টিবিসি’ হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রুপ বরাদ্দ করা হবে।