• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    কষ্টার্জিত ড্রয়ে সেমিতে ইংলিশ পরাশক্তি সিটি ও লিভারপুল

    কষ্টার্জিত ড্রয়ে সেমিতে ইংলিশ পরাশক্তি সিটি ও লিভারপুল    

    অ্যাট. মাদ্রিদ (০) ০: ০ (১) ম্যান সিটি 

    লিভারপুল (৬) ৩:৩ (৪) বেনফিকা 


    শেষ বাঁশির পর ফিল ফোডেনদের উদযাপন দেখে স্বয়ং ধারাভাষ্যকারই বলে বসলেন, “এ যেন সিটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর একটি”। না, এই ম্যাচ জেতেওনি ম্যানচেস্টার সিটি। কিন্তু ওয়ান্দা মেট্রোপালিতানোকে ১০২ মিনিটেরও বেশি সময় লড়াই করে পাওয়া এই কষ্টার্জিত ড্র নিশ্চিতভাবেই সিটির সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ড্র। 

    সিটির মতো ড্র করেই সেমিফাইনালের টিকিট কেটেছে তাদের প্রিমিয়ার লিগ রাইভাল লিভারপুল। কিন্তু তাদের ৩-৩ ব্যবধানের ড্র (অ্যাগ্রিগেটে ৬-৪) এতটা নাটকীয় ছিল না। 

    প্রথম লেগের পর অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের নেতিবাচক ফুটবলের সমালোচনা করেছে পুরো ফুটবল বিশ্ব (যেই দলে ছিলেন গার্দিওলা, ডি ব্রুইনাও)। কিন্তু এরপরও ম্যাচের আগে ডিয়েগো সিমিওনে বলেছিলেন, নিজের আদর্শ ও পরিকল্পনা থেকে নড়বেন না তিনি। 

    তাই হলো। দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠেও রক্ষণাত্মক গেমপ্ল্যান নিয়ে খেলা শুরু করে অ্যাটলেটিকো। সেই সুযোগে একের পর এক আক্রমণ করে যেতে থাকে সিটি। ৩০ মিনিটে গুন্ডোগানের শট বারে লেগে ফিরে না আসলে তখনই শেষ হয়ে যেত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিন্তু সিটির সকল আক্রমণ সামলে নিয়ে অক্ষত অবস্থাতেই প্রথমার্ধ শেষ করে স্বাগতিকরা। 

    অ্যাটলেটিকোর রক্ষণাত্মক ও প্রতি-আক্রমণ নির্ভর খেলার উপর ভিত্তি করেই হয়তো পুরো গেমপ্ল্যান সাজিয়েছিলেন পেপ গার্দিওলা। যে কারণে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জোয়াও ফেলিক্সরা হুট করে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা শুরু করলে তাদের সামনে পুরোপুরি বিবর্ণ দেখাতে শুরু করে সিটিকে। 

    শেষ ৪৫ মিনিটে একটি গোল বের করার মিশন নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করা অ্যাটলেটিকো শারীরিক ভাষা থেকে শুরু করে খেলার ধরন, সবকিছুই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। সিটির ডিফেন্স ও মিডফিল্ডের লাইন ভেঙে আক্রমণে উঠা, বল হারানোর সঙ্গেই প্রেস করে বল জেতা ও রক্ষণের হাইলাইন ভেঙে সামনে রান নেওয়ার মাধ্যমে একের পর আক্রমণ চালাতে শুরু করে স্বাগতিকরা। 

    নেতিবাচক ফুটবলের জন্য নিন্দিত অ্যাটলেটিকোর এই আগ্রাসী ফুটবলের কোনো জবাবই ছিল না সিটির কাছে। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ২০ মিনিট নিজেদের অর্ধ থেকেই বের হতে পারেনি ডি ব্রুইনারা। কিন্তু ৫৭ মিনিটে গ্রিজমানের ভলি ও ৭০ মিনিটে ডি পলের নেওয়া বাঁকানো শট অল্পের জন্য বাইরে চলে যাওয়ায় অক্ষতই থাকে সিটির জাল। 

    আক্রমণে যেতে না পারলেও রক্ষণের দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবেই পালন করে সিটিজেনরা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এক গোলের লিড ধরে রাখাটা কষ্টকর হতে থাকে সফরকারীদের জন্য। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝপথে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন ডি ব্রুইনা ও কাইল ওয়াকার। শেষদিকে অ্যাটলেটিকো-কায়দায় সময় নষ্ট করা শুরু করে সিটি। এতেই বাঁধে সমস্যা। 

    চোটের ভান করে ফিল ফোডেনের সময় নষ্ট করার পায়তারা দেখে প্রতিক্রিয়া দেখান স্তেফান স্যাভিচ। সেখান থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে দুই দলের সকল খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের মাঝে। হলুদ কার্ড দেখেন সিটি ও অ্যাটলেটিকোর চার জন খেলোয়াড়। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ফেলিপে। 

    এই ধস্তাধস্তির পরও যোগ করা সময়ে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে অ্যাটলেটিকো। কিন্তু কোরেয়া ও কুনিয়ার শট ঠেকাতে সামর্থ্য হয় সিটির রক্ষণ। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্রতেই শেষ হয় ম্যাচ। অ্যাগ্রিগেটে ১-০ গোলের জয় নিয়ে সেমি-ফাইনালে পা রাখে সিটি। সেমিতে মাদ্রিদের অপর দলটির মুখোমুখি হবে তারা। 

    এদিকে অ্যানফিল্ডে দলের অধিকাংশ তারকা খেলোয়াড়কে বসিয়ে রেখে একাদশ সাজান ইয়ুর্গেন ক্লপ। আসছে শনিবার সিটির বিপক্ষে ম্যাচের কথা মাথায় রেখেই যে এত সর্তকতা, সেটা লিভারপুলের শুরুর একাদশের চেহারাতেই ফুটে উঠে। কিন্তু পরিবর্তিত একাদশ নিয়েও বেনফিকার সঙ্গে ভালোই শুরু করে স্বাগতিকরা। ২১ মিনিটে কর্নার থেকে গোল করেন লিভারপুল ডিফেন্ডার ইব্রাহিমা কোনাতে। এর ১০ মিনিটের মধ্যে গন্সালো রামোসের গোলে সমতা ফেরায় বেনফিকা। 

    ১-১ গোলে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের ৫৫ ও ৬৫ মিনিটে গোল করেন লিভারপুল নাম্বার নাইন রবার্তো ফিরমিনো। তার জোড়া গোলে অ্যাগ্রিগেট ব্যবধান এসে দাঁড়ায় চার গোলে। কিন্তু এরপরও থেমে যায়নি বেনফিকা। দুর্দান্ত দুটি আক্রমণ থেকে ৭৩ ও ৮২ মিনিটে গোল করেন যথাক্রমে রোমান ইয়ারেমচুক ও ডারউইন নুনেজ। অফসাইডের জন্য সফরকারীদের দুটি গোল বাতিল না হলে এই রাতের চেহারা অন্যরকমও হতে পারত। 

    তবে শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলের ড্র নিয়েই ম্যাচ শেষ করে দুই দল। দুই গোলের অ্যাগ্রিগেট ব্যবধান নিয়েই সেমিতে উঠে লিভারপুল। প্যারিসের ফাইনালে পৌঁছুতে হলে এখন ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যদের পেরোতে হবে শুধু ভিয়ারিয়ালের বাঁধা।