বিবর্ণ ইউনাইটেডকে গুড়িয়ে দিয়ে শীর্ষে লিভারপুল
লিভারপুল ৪:০ ম্যান ইউনাইটেড
ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা এটি। কিন্তু মাঠে ও মাঠের বাইরের পরিস্থিতি বিবেচনায় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে এত বেশি তফাৎ কখনোই ছিল না। মৌসুমের শুরুতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে তাদের ঘরের মাঠে গুড়িয়ে দিয়ে দুই দলের মধ্যকার মানের তফাৎটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল লিভারপুল। মঙ্গলবার অ্যানফিল্ডে যেন সে ম্যাচেরই পুনরাবৃত্তি করল অলরেডরা। ইউনাইটেডকে ৪-০ গোলে হারিয়ে অক্টোবরের পর প্রথমবারের মতো টেবিলের শীর্ষে উঠেছে তারা।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে গত আট ম্যাচে মাত্র একটিতে জিতেছে ইউনাইটেড। সেটিও আবার লিগের ২০তম দল নরউইচ সিটির বিপক্ষে। গত শনিবার নরউইচকে হারানোয় মূল ভূমিকা রাখা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও ছিলেন না এই ম্যাচে। চোটের জন্য ছিলেন না ফ্রেড, লুক শ, এডিনসন কাভানি ও রাফায়েল ভারানও। ধুঁকতে থাকা ইউনাইটেড যে অ্যানফিল্ডে কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়বে, সেটা অনুমিতই ছিল। পঞ্চম মিনিটেই রেড ডেভিলদের সেই বাস্তবতার স্বাদ দেন লুইস ডিয়াজ।
ইউনাইটেডের রক্ষণের কাঠামো ভেঙে দিয়ে মিডফিল্ড থেকে সামনে বল পাঠান সাদিও মানে। রাইট উইং দিয়ে উপরের উঠে বলটির নিয়ন্ত্রণ নেন সালাহ। বক্সের প্রান্তে এসে করেন ক্রস। সিক্স ইয়ার্ড বক্সে দৌড়ে এসে সেই ক্রসে ফাইনাল টাচ দেন লুইস ডিয়াজ।
গোলের পরপরই চোটের জন্য মাঠ ছাড়েন পল পগবা। তার স্থলাভিষিক্ত হন জেসি লিংগার্ড।
দুর্দান্ত এক দলগত আক্রমণে ম্যাচের দ্বিতীয় গোল পায় লিভারপুল। ২২ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে সামনে বল পাঠান সেন্টারব্যাক জুয়েল মাতিপ। কিন্তু ইউনাইটেড প্রেস করায় সে বল আবার তার কাছেই ফিরে আসে। প্রেস করে যাওয়া ইউনাইটেড রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে বক্সের সামনে থাকা মানেকে পাস দেন মাতিপ। এক সেকেন্ডও দেরি না করে সেই পাসকে ইউনাইটেডের রক্ষণের উপর দিয়ে স্কুপ করেন মানে। বল গিয়ে পৌঁছায় বক্সে রান নেওয়া সালাহর পায়ে। একটি টাচ নিয়ে বলটি জালে জড়ান সালাহ। শেষ হয় তার ছয় ম্যাচের গোলখরা।
২২ মিনিটের মধ্যে দুই গোল খেয়ে যাওয়া ইউনাইটেডকে চোখ রাঙানি দিতে থাকে ওল্ড ট্রাফোর্ডের পরিণতি। যে কারণে রক্ষণ ধরে রেখে একদম সেফ খেলতে শুরু করে তারা। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে লিভারপুল একাধিকবার আক্রমণে উঠলেও আর গোল পায়নি। পুরো অর্ধে মধ্যমাঠ থেকে লিভারপুলের খেলা নিয়ন্ত্রণ করে যান থিয়াগো আলকানতারা।
লিভারপুলের বক্সে ইউনাইটেড প্রথম বলের স্পর্শ পায় ম্যাচের ৩৩তম মিনিটে। প্রথম শটের দেখা পেতে আরও অপেক্ষা করতে হয় সফররত সমর্থকদের। সেটি আসে দ্বিতীয়ার্ধে, ৫৫ মিনিটে।
প্রথমার্ধে লিভারপুলের সামনে দাঁড়াতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে শুরুটা ভালোই করে ইউনাইটেড। মধ্য বিরতিতে বদলি নামা জ্যাডন সাঞ্চোর কল্যাণে বেশ কয়েকবার আক্রমণে উঠে তারা। ৫৫ মিনিটে ইউনাইটেডের প্রথম শটটি নেন সাঞ্চোই। ৬৪তম মিনিটে সাঞ্চোর বাড়ানো বল থেকে প্রায় গোলই করে বসেছিলেন রাশফোর্ড।
কিন্তু ১০-১৫ মিনিট ভালো খেলে যখন মনে হচ্ছিল ম্যাচে ফিরে আসছে ইউনাইটেড, তখনই আবার ম্যাচের মোর ঘুরিয়ে দেয় লিভারপুল। রাইট উইং দিয়ে আক্রমণে উঠা ইলাঙ্গার পা থেকে বল নিয়ে সরাসরি পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন অ্যান্ডি রবার্টসন। ফাইনাল থার্ডে এসে লেফট উইংয়ে থাকা ডিয়াজকে পাস দেন তিনি। ডিয়াজ লো ক্রস করেন বক্সের ভেতর। সেখানে পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় জালে জড়ান বলটি।
ম্যাচের শেষদিকে আরও একটি গোল পায় লিভারপুল। বদলি নামা ডিয়গো জোটার বাড়ানো বলে চিপ করে ডি গেয়াকে পরাস্ত করেন সালাহ। নিশ্চিত করেন তার ম্যাচসেরার পুরষ্কার।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, প্রিমিয়ার লিগ যুগে ঘরের মাঠে ইউনাইটেডের বিপক্ষে এরচেয়ে বড় ব্যবধানের জয় কখনো পায়নি লিভারপুল। ৪-০ গোলের এই জয়ে সীমিত সময়ের জন্য টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। গত কয়েক মাস ধরে ম্যান সিটির ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে থাকা লিভারপুল অবশেষে এক রাতের জন্য টপকে গেল সিটিজেনদের। আগামীকাল ব্রাইটনের বিপক্ষে সিটি পয়েন্ট খোয়ালে অবশ্য দীর্ঘায়িত হবে তাদের শীর্ষে অবস্থান।