ডার্বি জিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আশা টিকিয়ে রাখল আর্সেনাল
চেলসি ২:৪ আর্সেনাল
এপ্রিলের শুরুতে বেশ ভালোভাবেই টেবিলের চতুর্থ স্থানটা দখল করে রেখেছিল আর্সেনাল। দেখছিল পাঁচ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার স্বপ্ন। কিন্তু ক্রিস্টাল প্যালেস, ব্রাইটন ও সাউদাম্পটনের বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচ হেরে সে স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া গানারদের জন্য তাই আজকের লন্ডন ডার্বিতে জেতার কোনো বিকল্প ছিল না।
এডি এনকেতিয়ার জোড়া গোলে চেলসিকে হারিয়ে আবারও শীর্ষ চারের লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে আর্সেনাল। মিকেল আরতেতার অধীনে তারুণ্য-নির্ভর দলটি কতটুকু অগ্রগতি করেছে, তার আরেকটি স্মারক স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের এই জয়।
ঘরের মাঠে চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল চেলসি। রিস জেমসের নেওয়া ফ্রিকিক ঝাঁপিয়ে পড়ে সেভ করে সফরকারীদের প্রথম লাইফলাইন দেন গোলরক্ষক অ্যারন রামসডেল। ফ্রিকিক-পরবর্তী কর্নারেও গোল দেওয়ার সুযোগ পায় চেলসি। কিন্তু প্রাথমিক হেডের পর নিয়ার পোস্টে অ্যালনসোর নেওয়া শট ডিফ্লেক্টেড হয়ে সাইড নেটে আছড়ে পড়ে।
১৩ মিনিটে নিজেদের বক্স থেকে বল উদ্ধার করে সামনে বিশাল বড় লং পাস দেন আর্সেনাল ফুলব্যাক নুনো তাভারেস। তার পাস গিয়ে পড়ে চেলসি ডিফেন্ডার আন্দ্রেস ক্রিশ্চেনসনের পায়ে। দলকে বিপদমুক্ত করার উদ্দেশ্যে গোলকিপারকে ব্যাক পাস দেন এই ড্যানিশ। কিন্তু তার দুর্বল ব্যাক পাসেই বিপদে পড়ে চেলসি। ক্রিশ্চেনসনের গা ঘেঁষে থাকা এনকেতিয়া দখল নেন বলের। সামনে এগিয়ে মালাং সারকে কাটিয়ে এবং এডওয়ার্ড মেন্ডিকে পরাস্ত করে আর্সেনালকে দুর্দান্ত এক শুরু এনে দেন এই স্ট্রাইকার।
তবে আর্সেনালের এই উচ্ছ্বাস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। চার মিনিটের মধ্যেই সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা। মধ্যমাঠে বল উদ্ধার করে লেফট উইংয়ে থাকা টিমো ভের্নারকে পাস দেন রুবেন লফটাস-চিক। উইং থেকে বল নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন ভের্নার। এরপর বক্সের বাইরে থেকে নেন মাটি কামড়ানো শট। গ্র্যানিট শাকাকে নাটমেগ করা সেই শট বেন হোয়াইটের পায়ে ডিফ্লেক্টেড হয়ে জায়গা করে নেয় আর্সেনালের জালে।
২৭ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় আর্সেনাল। শাকাকে দিয়ে শুরু হওয়া সে আক্রমণ। এরপর মধ্যমাঠ থেকে মার্টিন ওডেগার্ড রাইট উইংয়ে থাকা বুকায়ো সাকাকে পাস দেন। একটু সামনে এগিয়ে বক্সের মাথায় এসে দাঁড়ানো ওডেগার্ডকে বলটি ফেরত পাঠান সাকা। উল্টো ঘুরে বাঁপাশ থেকে বক্সে ঢোকা স্মিত-রোকে পাস দেন ওডেগার্ড। এক টাচেই দুর্দান্ত এক মাটি কামড়ানো শটে গোল করেন স্মিত-রো। স্কোর এসে দাঁড়ায় ২-১ এ।
দ্বিতীয় গোল খাওয়ার পরও দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায় চেলসি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আবারও সমতা ফেরায়। এবার ভের্নারের ক্রস থেকে গোল করেন সিজার অ্যাজপিলিকুয়েটা। ২-২ গোলে শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে চেলসি বেশ কয়েকবার আক্রমণে উঠলেও গোল করতে ব্যর্থ হয়। গোলের সামনে লুকাকুর আরেকটি অফ-ডে গেলেও ভের্নার চেষ্টা চালিয়ে যান দলকে এগিয়ে নেওয়ার। কিন্তু ৫৭ মিনিটে রক্ষণের ভুলে আবার পিছিয়ে যায় স্বাগতিকরা। চেলসি বক্সের ভেতর ফুলব্যাক তাভারেসের বাড়ানো বলটি ঠিকমতো রিসিভ করতে ব্যর্থ হন এনকেতিয়া। চেলসি ডিফেন্ডার মালাং সার ক্লিয়ার করার চেষ্টা করে উল্টো বলটিকে আবার এনকেতিয়ার পায়েই ঠেলে দেন। এবার আলতো স্পর্শে বলটিকে জালে জড়াতে কোনো ভুল করেননি এই আর্সেনাল তারকা।
তৃতীয়বারের মতো এগিয়ে যাওয়া আর্সেনাল ম্যাচের বাকি সময়েও তাদের কতৃত্ব ধরে রাখে। যোগ করা সময়ে অ্যাজপিলিকুয়েটার ভুলে একটি পেনাল্টি পেয়ে বসে তারা। সেই পেনাল্টিকে জালে জড়িয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন ২০ বছর বয়সী সাকা।
এই জয়ে যেমন শীর্ষ চারের আশা ফিরে পেয়েছে আর্সেনাল, ঠিক তেমনি ফিরে পেয়েছে লন্ডনে দাদাগীরি করার এখতিয়ারও। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে আর্সেনালের টানা দ্বিতীয় জয় এটি। গত বছর ০-১ গোলে ঘরের মাঠে ডার্বি হারা চেলসি ১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম ব্রিজে টানা দুইবার আর্সেনালকে জিততে দেখল।