অ্যানফিল্ডে স্বাচ্ছন্দ্যের জয়, প্যারিসের ঘ্রাণ পাচ্ছে লিভারপুল
লিভারপুল ২:০ ভিয়ারিয়াল
গতকালকের থ্রিলার ম্যাচের পর নিরপেক্ষ ভক্তরা হয়তো আশায় ছিলেন আরেকটি অনুরূপ সেমিফাইনালের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট রাউন্ডের একপাশে রিয়াল মাদ্রিদ একের পর এক ঘটন-অঘটন ঘটাতে থাকলেও আরেক পাশে স্বাচ্ছন্দ্যে ম্যাচ জিতে যাচ্ছে লিভারপুল। জুভেন্টাস, বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে সেমিতে উঠা ভিয়ারিয়াল অ্যানফিল্ডে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তুললেও ০-২ গোলের পরাজয় নিয়েই শেষ পর্যন্ত মাঠ ছেড়েছে।
জুভেন্টাস, বায়ার্ন বা ইউনাইটেডের মতো দলগুলো উনাই এমেরির ভিয়ারিয়ালের কাছে হারার পিছনে অন্যতম একটি কারণ ছিল এই আন্ডারডগদের প্রতি তাদের অবহেলা। লিভারপুল যে সে ভুল করবে না, সেটা আগেভাগেই বলে রেখেছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। সবচেয়ে শক্তিশালী একাদশটি নামিয়ে তার প্রমাণও দিলেন।
ম্যাচের প্রথমার্ধ পুরোপুরিই নিয়ন্ত্রণ করে লিভারপুল। অনুমিতভাবেই সিংহভাগ বলের দখল রাখে থিয়াগোরা। প্রেস ও কাউন্টার প্রেসের মাধ্যমে ভিয়ারিয়ালকে তাদের বক্সে ঠেলে দিয়ে একের পর এক আক্রমণ করে যায় স্বাগতিকরা। ১৩তম মিনিটে সালাহর ক্রস থেকে মানের হেড এবং ২৭তম মিনিটে বক্সের ভেতর সালাহ-মানের ওয়ান-টু শেষে সালাহর নেওয়া বাঁকানো শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে এগিয়ে যেতে পারত লিভারপুল। এরপর আবার থিয়াগো ও হেন্ডারসনের শট বারে লেগে ফিরে আসে। প্রথমার্ধে মোট ১২টি শট নিয়েও ভিয়ারিয়ালের জালের দেখা পায়নি লিভারপুল।
লিভারপুল আক্রমণাত্মক খেলবে সেটা অনুমিতই ছিল। তবে কড়া মার্কিং ও কিছু ক্ষেত্রে ভাগ্যের সহায়তায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে ভালোই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল ভিয়ারিয়াল। এমেরির পরিকল্পনামতোই হয়তো চলছিল সবকিছু। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দুই মিনিটের এক ঝড়ে নষ্ট হয়ে যায় তাদের সারাদিনের পরিশ্রম।
ফরমেশন ভেঙে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার ক্লপীয় পরিকল্পনা সুফল পায় ম্যাচের ৫৩তম মিনিটে। মধ্যমাঠ থেকে রাইট উইংয়ে গিয়ে সালাহর কাছে থেকে বল নিয়ে সামনে আগান হেন্ডারসন। বক্সের কাছে এসে করেন ক্রস। কিন্তু তার ক্রস ভিয়ারিয়াল লেফটব্যাক পারভিস স্তুপিয়ানের পায়ে ডিফ্লেক্টেড হয়ে গোলমুখে চলে যায়। গোলরক্ষক জেরোনিমো রুল্লি ডাইভ দিয়ে বলটি স্পর্শ করলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। আত্মঘাতী গোলেই এগিয়ে যায় লিভারপুল।
শুরু থেকেই দলকে তীব্র সমর্থন দিয়ে যাওয়া অ্যানফিল্ডের গ্যালারি এই গোলের পর গর্জনের মাত্রা অনেকগুণে বাড়িয়ে দেয়। আর তাতে অনুপ্রাণিত হয়েই হয়তো সাথে সাথেই আবার আক্রমণে উঠে লিভারপুল। ফলও পায়। সালাহ-মানের দুর্দান্ত বোঝাপড়ায় ম্যাচের দ্বিতীয় গোল পায় স্বাগতিকরা। একবার ওয়ান-টু শেষে বক্সের ভেতর রান নেওয়া মানেকে নিখুঁত একটি থ্রু-বল দেন সালাহ। তাতে হালকা করে পা ছুঁইয়ে বল জালে জড়ান মানে। ২০১৭-১৮ মৌসুমের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক-আউট পর্বে মানের (১৪) চেয়ে বেশি গোল দিয়েছেন শুধু একজনই; করিম বেনজেমা (১৬)।
দুই গোল দেওয়ার পর অবশ্য থেমে যায়নি লিভারপুল। আক্রমণ অব্যাহত রাখে তারা। ৬৪ মিনিটে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ডের ক্রস থেকে রবার্টসন গোল দিলেও অফসাইডের জন্য তা বাতিল হয়। পরবর্তীতে বদলি হিসেবে ডিয়গো জোটা ও দিভক অরিগিকে নামলেও তৃতীয় গোলের দেখা আর পায়নি লিভারপুল।
আপাতত প্রথম লেগের ২-০ গোলের জয় নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে ইয়ুর্গেন ক্লপকে। তবে গত ২৪ ম্যাচের মধ্যে ২০টিতেই জয় তুলে নেওয়া অলরেডরা পরের লেগ নিয়েও আত্মবিশ্বাসী থাকবে। স্পেনে ভিয়ারিয়াল কোনো অঘটন না ঘটালে কোয়াড্রপল স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখে প্যারিসের ফাইনালে পা রাখবে ক্লপ-বাহিনী।