চেলসির মালিকানা বদল: বড় ক্লাবগুলোর মালিক কারা?
চেলসির সাথে শেষ হয়েছে রোমান আব্রামোভিচের প্রায় দুই যুগের পথচলা। একটি যুগেরও পরিসমাপ্তি হয়েছে এর মাধ্যমে। ২০০৩ সালে চেলসির মালিকানা নিয়েছিলেন এই রুশ ধনকুবের। কেন বেটসের কাছ থেকে ১৪০ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনার পর চেলসি আর আব্রামোভিচ হয়ে উঠেছিল একে অন্যের সমার্থক। চেলসির ম্যাচে প্রায়ই গ্যালারিতে দেখা যেত তাকে।
কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের জেরে আব্রামোভিচকে নিষিদ্ধ করে ব্রিটিশ সরকার। একের পর এক আসতে থাকে নিষেধাজ্ঞা। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে তার সুসম্পর্কও এর অন্যতম কারণ। রাজনৈতিক কারণে তাই বাধ্য হয়েই লন্ডনের ক্লাবটিকে বিক্রি করেছেন তিনি।
কনসোর্টিয়াম স্পন্সরশিপের মাধ্যমে চেলসির মালিকানা কিনেছেন কয়েকজন বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের টড বোয়েহলি। এর আগেও চেলসিকে কেনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। সেবার প্রায় আড়াই বিলিয়ন পাউন্ডের প্রস্তাব দিয়েছিলেন আব্রামোভিচকে। চেলসির সহ-মালিকানায় আছে ক্লিয়ারলেক ক্যাপিটাল, সুইস বিলিয়নিয়ার হান্সজোয়ার্গ উইস, মার্ক ওয়াল্টার ও জোনাথন গোল্ডস্টেইন। এবার ৪.২৫ বিলিয়ন পাউন্ডে ইংলিশ ক্লাবটিকে কিনেছেন তারা।
আমেরিকার খেলার জগতে টডের পথচলা অনেকদিনের। বেসবল ও বাস্কেটবল দলের মালিকানার পাশাপাশি ই-স্পোর্টস জগতেও বিনিয়োগ আছে টডের। ফ্যান্টাসি স্পোর্টসের সাথে ক্লাউড নাইন নামের একটি প্রতিষ্ঠানও আছে তার। ২০১২ সালে কিনেছিলেন বেসবল দল লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্সের একাংশ।
চেলসি কেনার পর ক্লাবটির ম্যাচ দেখতে স্টামফোর্ড ব্রিজের গ্যালারিতে উপস্থিত হয়েছিলেন টড। প্রতিপক্ষ ছিল উলভস।উলভসের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করেছে চেলসি।
আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো চেলসির মালিক হননি টড। তবে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ ও যুক্তরাজ্য সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে শীঘ্রই মালিকানা বুঝে নেবেন। এবার আলোচনা করা যাক প্রিমিয়ার লিগের বড় ক্লাব আর তাদের মালিকদের নিয়ে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, প্রিমিয়ার লিগের সফলতম দলগুলোর একটি।রেড ডেভিলদের বর্তমান মালিক আমেরিকার বিখ্যাত গ্লেজার ফ্যামিলি। ২০১৪ সালে মূল মালিক ম্যালকম গ্লেজারের মৃত্যুর পর থেকে ম্যান ইউনাইটেডের মালিকানা সামলাচ্ছেন তার ছয় সন্তান।
২০০৮ সালে থাকসিন শিনাওয়াত্রার কাছ থেকে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ম্যানচেস্টার সিটি কিনেছিলেন আরব ধনকুবের শেখ মনসুর। ২০১৫ ও ২০১৯ সালে মনসুরের সাথে যুক্ত হয়েছিল দুটি আমেরিকান ও চায়না প্রতিষ্ঠান। যদিও মালিকানার বেশিরভাগ এখনো মনসুরের দখলেই আছে।
২০১০ সাল থেকে লিভারপুলের মালিকানায় আছে ফেনওয়ে স্পোর্টস গ্রুপ। এফএসজি নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার তথা ক্লাব মালিক জন হেনরি। বেসবল দলও আছে তার।
২০০৭ সালে বিনিয়োগ করে আর্সেনালের ৯.৯ শতাংশের ভাগ নিয়েছিলেন আমেরিকান ব্যবসায়ী ও বিলিওনিয়ার স্ট্যান ক্রোয়েঙ্কে। সময়ের সাথে সাথে গানারদের ওপর তার বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়া একক কর্তৃত্বে এখন আর্সেনালের শতভাগ দখল তার প্রতিষ্ঠানের।
এদিকে প্রিমিয়ার লিগের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন লা লিগার মালিকানা ব্যবস্থা। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে নেই স্পেনের কোনো দলই। বাইরের কারো মালিকানা কেবনার সুযোগও নেই। সোশিওদের গণতান্ত্রিক ভোটে নির্বাচিত হয় ক্লাবের সভাপতি ও পরিচালক। ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিদের বলা হয় স্যোশিও।
ক্লাবগুলোর সভাপতিদের সেভাবে আর্থিক স্বাধীনতা নেই। নিয়মানুযায়ী নিজের পকেটের টাকা ক্লাবে বিনিয়োগ করার কোনো সুযোগও নেই তাদের। সভাপতিদের খরচও করতে হয় ক্লাবের আয়ের সমানুপাতিক হারে। আয়ের মূল উৎস টিভি স্বত্ব, মার্চেন্ডাইজ ও ম্যাচ টিকেট বিক্রি। অর্থাৎ ক্লাবগুলোর সিংহভাগের মালিক তাদের নিবন্ধিত সমর্থকরাই। প্রতি ক্লাবেই আছে নিবন্ধিত সমর্থক। সবচেয়ে বেশি নিবন্ধিত সোশিও আছে বার্সেলোনায়।
বুন্দেসলিগাতে ক্লাবের মালিকানা কিনতে পারে ব্যক্তিবিশেষ কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান। তবে পুরো অংশীদারিত্ব তাদের নেয়ার সুযোগ নেই। জার্মান লিগের ৫০+১ নিয়মানুসারে ক্লাবের ৫১ ভাগের মালিক হবেন তারা। বাকি ৪৯ শতাংশের মালিক সংশ্লিষ্ট ক্লাবের দর্শক-সমর্থকরা।ক্লাবগুলোকে স্পন্সর ও মালিক পক্ষের বহির্ভূত চাপ মুক্ত রাখতেই এই সিদ্ধান্ত।
১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত বুন্দেসলিগায় দল বা ক্লাবের স্বত্ত্ব কেনার সুযোগ ছিল না কারো। দল চালাতেন ক্লাবের কার্যকরী সদস্যরা। কিন্তু ক্লাবগুলোর আর্থিক ও সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নতির জন্য সেবছরই ৫০+১ নিয়মের চালু করে জার্মান ফুটবল কর্তৃপক্ষ।