কারা নিল আইপিএলের স্বত্ব? কেমন দাম উঠল? এক নজরে নিলামের সবকিছু
তিন দিন ধরে আইপিএলের সত্ত্ব নিয়ে অনলাইনে চলল তুমুল কাড়াকাড়ি। আর যেই মূল্যে এবারের সব সত্ত্ব বিক্রি হয়েছে তা সম্বন্ধে অনেক কানাঘুষাও নিশ্চয় শুনেছেন, শুনে হতবিহবল হয়েছেনও হয়ত। আইপিলের সত্ত্বের পরিক্রমা, অন্যান্য খেলার সাথে তুলনায় কোথায় দাঁড়াচ্ছে এবারের নিলাম, ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেটের সম্প্রচার সত্ত্বের সাথেই বা কতটা ফারাক এবারের সত্ত্বে সেসব নিয়ে একটা পরিষ্কার ধারণা পাবেন এই প্রতিবেদনে; সাথে হয়ত আপনার হা হয়ে থাকা চোয়ালটা আরও প্রসারিত হবে।
যেভাবে হল এবারের নিলাম
এবারের নিলাম ছিল ৩ দিন ব্যাপী। নিলামে তোলা হয়েছিল ৪টি প্যাকেজ। প্যাকেজ ‘এ’-তে ছিল ভারতের টেলিভিশন সত্ত্ব, প্যাকেজ ‘বি’-তে ছিল উপমহাদেশের ডিজিটাল সত্ত্ব, প্যাকেজ ‘সি’-তে ছিল বিশেষ কতোগুলো মাচের সত্ত্ব যার মাঝে ছিল প্লেঅফ ও ফাইনাল, প্যাকেজ ‘ডি’-তে ছিল উপমহাদেশের বাইরের সত্ত্ব। প্যাকেজ ‘সি’-এর অন্তর্ভুক্ত বিশেষ ম্যাচগুলো অবশ্য নির্ধারিত হবে আগামী মৌসুমের সময়সূচী ঘোষণার পরে। এসবকে কেন্দ্র করেই ১৩ জুনে অনলাইনে শুরু হয়েছিল নিলাম। নিলামে দর কষাকষি হয়েছিল প্রতি ম্যাচের মূল্যের ভিত্তিতে। প্রতি প্যাকেজের মাঝে অন্তর্ভুক্ত কোনও ম্যাচের জন্য সর্বোচ্চ দর হাঁকানো কোম্পানির কাছেই গিয়েছে ওই প্যাকেজ। সব প্যাকেজের ভিত্তিমূল্যের মোট পরিমাণ ছিল ৩২,৫০০ কোটি ভারতীয় রুপি।
কার কাছে গেল কোন প্যাকেজ
ভারতীয় উপমহাদেশের সম্প্রচার সত্ত্ব: ২৩,৫৭৫ কোটি ভারতীয় রুপিতে এই সত্ত্ব কিনেছে ডিজনি স্টার। ২০১৭ সালে ২১ম সেঞ্চুরি ফক্সের মালিকানা পেয়েছিল ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি, যার ফলশ্রুতিতে স্টার ইন্ডিয়াও চলে গিয়েছে তাদের অধীনে। আগের মেয়াদেও এই সত্ত্ব স্টার ইন্ডিয়ার কাছে ছিল; নাম পরিবর্তনের সুবাদে এবার থাকছে ডিজনি স্টারের কাছে।
ভারতের ডিজিটাল সত্ত্ব: ২৩,৭৫৮ কোটি ভারতীয় রুপিতে এই সত্ত্ব কিনেছে মুকেশ আম্বানির কোম্পানি ভায়াকম ১৮।
ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরের সত্ত্ব: অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের সত্ত্ব কিনেছে ভায়াকম ১৮। ২০৫ কোটি ভারতীয় রুপিতে মধ্যপ্রাচ্য ও ২৫৮ কোটি রুপিতে যুক্তরাজ্যের সত্ত্ব পেয়েছে টাইমস ইন্টারনেট।
অর্থের ছড়াছড়ি: আগের মেয়াদের সাথে এবারের তুলনা
২০১৮-২০২২ মেয়াদের আইপিএলের সত্ত্ব ছিল ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রিত সত্ত্ব। এবারের মেয়াদের সত্ত্বের কাড়াকাড়ির খেলা ছাড়িয়ে গিয়েছে সেটাকেও। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই তুলনা:
মোট মূল্য
২০১৮-২০২২: ১৬,৩৪৭.৫ কোটি ভারতীয় রুপি (২.৫৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার, ২০১৭ সালের ডলারের মূল্য সাপেক্ষে)
২০২৩-২০২৭: ৪৮,৩৯০.৫ কোটি ভারতীয় রুপি (৬.২ বিলিয়ন ইউএস ডলার)
প্রতি ম্যাচের মূল্য (মোট ম্যাচের সংখ্যা: ৪১০)
২০০৮: ১.৫৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার
২০০৯-২০১৭: ২.৮২ মিলিয়ন ইউএস ডলার
২০১৮-২০২২: ৫৪.২৩ কোটি ভারতীয় রুপি (৮.৪৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার, ২০১৭ সালের ডলারের মূল্য সাপেক্ষে)
২০২৩-২০২৭: ১১৮.০২ কোটি ভারতীয় রুপি (১৫.১১ মিলিয়ন ইউএস ডলার)
ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেটের সাথে এবারের সত্ত্বের তুলনা
ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দল দুটোর সব ম্যাচের সত্ত্বও এতদিন ছিল স্টার ইন্ডিয়ার অধীনে। সেই সত্ত্বের সাথে আইপিএলের এবারের সত্ত্বের মূল্যের তুলনা করতে গেলেও যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়বে। ২০১৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেটের প্রতি ম্যাচ সম্প্রচারের সত্ত্ব স্টার কিনেছিল ৬০.১৮ কোটি ভারতীয় রুপির বিনিময়ে। সেখানে আইপিএলের এবারের ম্যাচ প্রতি সত্ত্বের দাম উঠেছে ১১৮.০২ কোটি ভারতীয় রুপি, যা জাতীয় দলের সত্ত্বের ১.৯৬ গুণ।
খেলার জগতে ঠিক কোন জায়গায় এবারের আইপিএল সত্ত্বের মূল্য
যেকোনো খেলার সত্ত্বের তুলনায় গেলে আইপিএল এখন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী লিগ! এমনকি ২০২২-২০২৫ মেয়াদের প্রিমিয়ার লিগের নতুন সত্ত্বের সাথে ম্যাচ প্রতি হিসেবে গেলে প্রিমিয়ার লিগ এখন তৃতীয় ধনী। এক নজরে দেখে আসা যাক শীর্ষ তিন ধনী লিগের তালিকা (প্রতি ম্যাচ হিসেবে):
১.এনএফএল (ন্যাশনাল ফুটবল লিগ, যুক্তরাষ্ট্র): ৩৫.০৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার (সুত্র: ফোর্বস)
২.আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, ভারত): ১৫.১১ মিলিয়ন ইউএস ডলার
৩.ইপিএল (ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, ইংল্যান্ড): ১১.৩৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার (সুত্র: দ্যা অ্যাথলেটিক)
নিলামের অর্থের খেলা দেখে যাদের এতক্ষণে চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা, তাদেরকে তাক লাগিয়ে দিতেই হয়ত বিসিসিআই সচিব জয় শাহ আজ ঘোষণা দিয়েছেন এরপরের মৌসুম থেকে আইসিসির এফটিপিতে আইপিএলের জন্য আড়াই মাসের জায়গা বরাদ্দ রাখতে সুপারিশ করেছেন তারা ও মৌখিক সম্মতিও পেয়েছেন। মুলত, আগামী ৫ বছরে আইপিলের ৪১০ ম্যাচ, যার মাঝে প্রথম দুই মৌসুমের ৭৪ ম্যাচ, পরের দুই মৌসুমে ৮৪ ম্যাচ ও ২০২৭ মৌসুমে ৯৪ ম্যাচে যাতে শীর্ষ সারির সব ক্রিকেটারদের পাওয়া যায় তার জন্যই এমন পরিকল্পনা বিসিসিআইয়ের।