মাইকেল রিপন: জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়, গায়ে নেদারল্যান্ডসের পর নিউজিল্যান্ডের জার্সি
ক্রিকেটার হিসেবে অত নামডাক ওয়ালা কেউ নন মাইকেল রিপন। ক্রিকেটের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা ভক্তরাও হয়তো সেভাবে তার নাম শোনেননি। সেটাই বরং স্বাভাবিক। ক্রিকেটের প্রসারণের এই যুগে দারুণ কিছু না করলে আলোচনায় আসাটা অসম্ভবই। এর ওপর রিপন খেলেন আইসিসির সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডসের হয়ে। তবুও রিপন এসেছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রে।
কারণটাও বেশ চমকপ্রদ। গত মার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই ওয়ানডে খেলেছিলেন নেদারল্যান্ডসের হয়ে। কিন্তু মাস দুয়েক যেতেই বদলে গেল দৃশ্যপট। সেই নিউজিল্যান্ডের জাতীয় দলেই ডাক পেয়েছেন এই অলরাউন্ডার; কদিন আগেও যারা ছিল প্রতিপক্ষ। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী আগস্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেই মাঠে দেখা যেতে পারে তাকে।
রিপনের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায় কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার এগিয়েছে ডাচদের জার্সিতে। ২০১৩ সাল থেকে নিয়মিত খেলছেন নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে। সেখানে ধারাবাহিক পারফর্ম্যান্সের সুবাদে এবার কিউইদের আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস সফরের দলে। কিউইদের জার্সিতে অভিষেক হলে আরও একটা রেকর্ড গড়বেন রিপন। নিউজিল্যান্ডের বিশাল ক্রিকেট ইতিহাসে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া প্রথম চায়নাম্যান বোলার তিনি। ম্যাচ খেলতে পারলে দারুণ এই ইতিহাসের অংশও হয়ে যাবেন।
যাযাবর জীবন থিতু নিউজিল্যান্ডে
পেশাদার ক্রিকেটে রিপনের হাতেখড়ি জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকায়। ২০১১-২০১২ মৌসুমে কেপ কোবরাস, ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের হয়ে খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। সেই মৌসুমের পর পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। সাসেক্সে এক মৌসুম কাটানোর পর চলে যান নিউজিল্যান্ডে। ২০১৩ সাল থেকে খেলছেন ওটাগোর হয়ে। সেই সুবাদে তার দ্বিতীয় ঘর নিউজিল্যান্ড। বসতিও সেখানেই। তরুণ বয়সের যাযাবর জীবনটাও ঠাই পেয়েছিল সেখানেই। ক্রিকেট ক্যারিয়ারটাও অন্যমাত্রা পেল নিউজিল্যান্ডের জাতীয় দলে ডাক শুনে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধান নির্বাচক গাভিন লারসনও জানিয়েছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার জন্যই রিপনকে স্কোয়াডভূক্ত করেছেন তারা। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার সাথে রিপনকে এগিয়ে রেখেছে তার চায়নাম্যান বোলিং। সাথে যোগ হয়েছে লোয়ার অর্ডারে ডানহাতি এই ব্যাটারের আগ্রাসী ব্যাটিং। ওটাগোর হয়ে ৩৭ গড়ে ১২৯৫ রান করেছেন লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে । ৬০ উইকেট নিয়েছেন ৩৪.৫১ গড়ে। টি-টোয়েন্টিতে ৩৮১ রান করার পাশাপাশি উইকেটও নিয়েছেন ৩৩টি।
জন্মসূত্রে প্রোটিয়া এই ক্রিকেটার নিজের আদর্শ মানেন প্রয়াত কিংবদন্তি শেন ওয়ার্নকে। ক্রিকেটের বীজটা বুনে দিয়েছিলেন তার বাবা। কেপ টাউনে বাড়ির পেছনে বাবার সাথে ক্রিকেট খেলতেন রিপন।
যেমন ছিল রিপনের ‘ডাচ’ অধ্যায়
কেপ টাউনের রন্দেবশ হাইস্কুলে পড়াশোনার পর ১৬ বছর বয়সে নেদারল্যান্ডের ক্লাব ভিআরএ আমস্টারডামের সাথে পাঁচ ম্যাচের চূক্তি করেন রিপন। তখনই নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটের সাথে তার পথচলা শুরু হয়েছিল। এর দুই বছর পর আমস্টারডামের প্রতিদ্বন্দ্বী এসিসিতে যোগ দিয়ে পুরো এক মৌসুম খেলেন। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে ইংল্যান্ড ঘুরে ২০১৩ সালে থিতু হয়েছেন নিউজিল্যান্ডে।
সে বছর এপ্রিলে নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের হয়ে তার অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টিতে। অভিষেকেই ৬৫ রানের ইনিংস খেলে ছড়িয়ে দেন নিজের আগমনী বার্তা। এর তিন মাস পরে তার গায়ে ওঠে ডাচদের ওয়ানডে জার্সিও। সব মিলিয়ে নেদারল্যান্ডের ৯ ওয়ানডে ও ১৮ টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ার তার।
কীভাবে নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলবেন রিপন?
আইসিসির নিয়মানুযায়ী, সহযোগী সদস্য দেশের প্রতিনিধিত্ব করলেও পূর্ণ সদস্য দেশের হয়ে খেলার জন্য বিবেচিত হতে পারবেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু কেউ যদি আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের জার্সিতে একটি ম্যাচও খেলেন, পরবর্তী তিন বছর কোনো সহযোগী দেশের জার্সিতে খেলতে পারবেন না সেই ক্রিকেটার। অর্থাৎ নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধিত্ব করা রিপন নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেললে আগামী তিন বছর পর্যন্ত নেদারল্যান্ডেসের হয়ে খেলার যোগ্যতা হারাবেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডে ‘প্রবাসী’ ক্রিকেটাররা
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মেছেন কিন্তু খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে, এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। ইতোমধ্যে এই তালিকায় আছেন বিজে ওয়াটলিং, গ্রান্ট এলিয়ট, নিল ওয়াগনার, ক্রুগার ভ্যান উইক,কলিন মানরো, গ্লেন ফিলিপস ও ডেভন কনওয়ে। রিপনের অভিষেক হলে তার নামও বসবে সেখানে। এদের মধ্যে ডেভন কনওয়ে বছরের শুরুতেই টেস্ট খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। যদিও নেদারল্যান্ডস তার জন্মভূমি নয়, তবুও কিউইদের হয়ে ডাচদের বিপক্ষে নামার সময় তার একটু আলাদা অনুভূতিই হবে।