• লা লিগা
  • " />

     

    কীভাবে খেলোয়াড় কিনছে ঋণজর্জর বার্সেলোনা?

    কীভাবে খেলোয়াড় কিনছে ঋণজর্জর বার্সেলোনা?    

    রবার্ট লেভানডফস্কি, রাফিনহার মতো ফুটবলারকে দলে ভেড়ানো, ওসমান ডেম্বেলের সাথে চুক্তি নবায়ন। আর্থিক দুরবস্থায় থাকা বার্সেলোনাকে ট্রান্সফার মার্কেটে এমন রূপে দেখে সবাই খানিকটা অবাকই হয়েছেন। দলবদলের তালিকায় আছে আরও ফুটবলার।

    অথচ গত মৌসুমেই লা লিগার গঠনতন্ত্র ও অর্থনৈতিক নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়ে। নিজেদের ইতিহাসের সফলতম ফুটবলার লিওনেল মেসিকেও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বার্সেলোনা কদিন আগে কোচ জাভি হার্নান্দেজও সরাসরি বলেছিলেন নিজেদের আর্থিক দৈন্যদশার কথা। তবে মৌসুম ঘুরতে না ঘুরতেই যেন বদলে গেছে বার্সেলোনা। কোভিডের ধাক্কাতে হওয়া ক্ষতি কাটিয়ে ট্রান্সফার মার্কেটে কীভাবে একের পর এক সাইনিং করছে এই স্প্যানিশ দলটি?

     

    রাফিনহার জন্য বার্সাকে গুনতে হয়েছে ৫৮ মিলিয়ন ইউরো। লেভাডফস্কির জন্য বায়ার্নকে দিতে হবে ৫০ মিলিয়ন ইউরো। এই সাইনিংগুলোর জন্য বার্সেলোনাকে গোছাতে হয়েছে তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো। এর নেপথ্যে আছে সভাপতি হুয়ান লাপোর্তার বোর্ডের নেয়া কয়েকটি বড় সিদ্ধান্ত। নতুন মেয়াদে টিভি সত্ত্ব বিক্রি, ফুটবলারদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ, মার্চেন্ডাইজিং বিক্রি  ও নতুন স্পন্সরশিপ আনা। 

     

    গত ৩০ জুন ২৫ বছরের জন্য টিভি সম্প্রচার স্বত্ত্বের ১০ শতাংশ বিক্রি করেছে বার্সেলোনা। এই খাত থেকে ক্লাবটির আয় হবে ২১৫ মিলিয়ন ইউরো। যার বেশিরভাগই ট্রান্সফার মার্কেটে খরচ করেছে ক্লাবটি। স্প্যানিশ মিডিয়ার খবর অনুযায়ী টিভি সম্প্রচারসত্ত্বের আরও ১৫ শতাংশ বিক্রি করতে চাইছে বার্সেলোনা। সিক্সথ স্ট্রিট’ নামক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কিনেছে সম্প্রচারসত্ত্ব। 

    লা লিগার নিয়মানুযায়ী প্রতি মৌসুমের বাজেটের ৭০ শতাংশ খরচ করা যাবে ফুটবলারদের বেতনে। গত মৌসুমে বেতন খাতে বার্সেলোনার খরচ ছিল মোট বাজেটের ৯৫%। বার্সেলোনার ক্ষেত্রে তা বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে জেরার্ড পিকে-সার্জিও বুস্কেট-জর্ডি আলবারা খেলছেন নির্ধারিত বেতনের চেয়ে কমে। সেই খাতের বেঁচে যাওয়া অর্থ বিনিয়োগ করে এরিক গার্সিয়া, মেম্ফিস ডিপায় কে দলে টেনে বেতনভূক্ত করেছিল ক্লাবটি। ফ্রি এজেন্ট হিসেবে দলে এসেছেন দুজন। 

     

     

    ক্লাবের নিবন্ধিত স্যোশিওদের অনুমতি নিয়ে ইতোমধ্যে মার্চেন্ডাইজিং খাতের ৪৯% বিক্রি করেছে বার্সেলোনা। মৌসুমের আয়ের একটা অংশ উঠে এসেছে এই খাত থেকেও। এখান থেকে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইউরো আয় হবে বার্সেলোনার। 

    এবার খরচের খাতায় চোখ বোলানো যাক, যেখানে দারুণ দূরদর্শিতা দেখিয়েছন লাপোর্তা আর তার সহকারীরা। রাফিনহার দলবদলের অর্থ তিন কিস্তিতে লিডস ইউনাইটডকে পরিশোধ করবে বার্সেলোনা। তবে নানান জল্পনা কল্পনা চলছে ফ্রাংকি ডি ইয়ংকে নিয়ে। এমনিতেই তার দলবদলের খবরে বাজার সরগরম। এর ওপর যোগ হয়েছে কম বেতনে তার খেলা না খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা। তাই বার্সেলোনায় তার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন এসেই যায়। আপাতত যদি কম বেতনে ডি ইয়ং খেলতে রাজি হন, তবে দল ছাড়ার সময় বকেয়া থাকা এই অর্থের পুরোটাই বুঝে পাবেন তিনি।

     

    ঠিক এখানেই সুবিধা হয়েছে বার্সেলোনার। বেতন খাতের এই বেঁচে যাওয়া তহবিল স্বাছ্যন্দেই ট্রান্সফার মার্কেটে বিনিয়োগ করতে পারছে ক্লাবটি। নতুন করে কোনো ফুটবলারকে বিক্রিও করতে হচ্ছে না তাদের। এই আর্থিক ভারসাম্য ফেরাতে ভূমিকা রেখেছে মেসি-গ্রিজমানের দলবদলও। এর সাথে ডেম্বেলে-উমিতিতির বেতনের হারও কমিয়েছে বার্সেলোনা। 

     

    অর্থনৈতিক কাঠামো গোছানোর মূল যে চ্যালেঞ্জটি ছিল লাপোর্তার বোর্ডের সেই বাধা আপাতত টপকে গেছে তারা। দলবদলের বাজারেও ছিল প্রতিফলন। বলা যায় আপাতত প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে উঠেছে ক্লাবটি। তবে এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা কতটা থাকবে, সেটা সময়ই বলে দিবে। 

     

    বার্সেলোনার এই ঘুরে দাঁড়ানোর যাত্রায় লাপোর্তার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মাতেও আলেমানি। পেশায় আইনজীবি হলেও বার্সেলোনার পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন ২০১৯ সাল থেকে। মূলত তার পরিকল্পনাতে ভর করেই গত মৌসুম থেকে এক পা দু পা করে এগিয়েছে বার্সেলোনা। আপাতত বার্সেলোনার এই ম্যাজিক ফর্মুলা এসেছে আলেমানির মাথা থেকেই

    তাকে নিয়ে বার্সেলোনার এক কর্মকর্তার বলা এই কথাটাও সাক্ষী দেয় ঠিক কতটা ক্ষুরধার তার মস্তিষ্ক, 'ধরুন আলেমানি আপনাকে দশ টাকা মূল্যের প্রস্তাব দিতে চায়। সে শুরুটা করবে দেড় টাকা থেকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে সবসময় জয়টা তারই হয়। আমাদের অনেক কম বেতনের প্রস্তাব দিয়েছিল। বেতনের পরিমাণটা বাড়ানোর জন্য আমরা বলেছিলাম, আরও একটা বছর বাড়িয়ে চুক্তি সারি। সে আপনাকে বিশ্বাস করাবে, আপনি জিতেছেন আলোচনায়। কিন্তু সবসময় আলেমানিই জিতে।'