সিজন প্রিভিউ: চতুর্থ মৌসুমে আরতেতার বিপ্লব?
উল্লেখযোগ্য দলবদল
যারা এলেন: ফাবিও ভিয়েরা (৩১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড), গ্যাব্রিয়েল জেসুস (৪৫ মিলিয়ন), ওলেকসান্দার জিনচেঙ্কো (৩২ মিলিয়ন), মার্কুইনোজ (৩.১৫ মিলিয়ন), ম্যাট টার্নার (৫.৭৩ মিলিয়ন)।
যারা গেলেন: মাতেও গেন্দৌজি (৯ মিলিয়ন), আলেকজান্দার লাকাজেট (ফ্রি)।
গ্রীষ্মকালীন দলবদল বাজারে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বড় অঙ্ক খরচ করছে আর্সেনাল। গত গ্রীষ্মে নতুন খেলোয়াড়দের পিছনে গানারদের খরচ করা ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ড ছিল পুরো লিগেই সর্বোচ্চ। আর এই মৌসুমে ইতোমধ্যে ১১৭ মিলিয়ন খরচ করেছে লন্ডনের ক্লাবটি। দুই মৌসুমে ২৫০+ মিলিয়ন (তা আবার মূল দলের কোনো তারকাকে বিক্রি না করেই), মিকেল আরতেতার মতো অর্থনৈতিক সমর্থন পায়নি পূর্বের কোনো আর্সেনাল ম্যানেজারই।
গত মৌসুমের মতো এবারও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাইনিং করেছে আর্সেনাল। জেসুস, জিনচেঙ্কো, ভিয়েরা; এই তিনজনেরই সম্ভাবনা আছে সরাসরি মূল একাদশে জায়গা করে নেওয়ার। এসব খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তি দলের শক্তিমত্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বাড়িয়ে দিতে বাধ্য।
যা জানা আছে
সুপার লিগ কাণ্ডের সময়ে আর্সেনালের মালিকপক্ষকে ভক্তদের তীব্র রোষানলে পড়তে হয়, যা অব্যাহত থাকে দীর্ঘদিন (স্ট্যান ক্রঙ্কির মালিকানা নিয়ে এখনও সন্তুষ্ট না ভক্তদের একাংশ)। ভক্তদের তিক্ততার রেশ ধরে গত মৌসুমে মালিকানা বদলেরও কাছাকাছি চলে এসেছিল ক্লাবটি। গত মে-জুনে স্পটিফাই সিইও ডনিয়েল ইকের করা টেকওভার বিডে ভক্তদের পাশাপাশি সমর্থন দিয়েছিলেন আর্সেনাল কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরি, প্যাট্রিক ভিয়েরা ও ডেনিস বারক্যাম্প। তবে শেষপর্যন্ত মালিকানা ধরে রাখে ক্রঙ্কি পরিবার।
সেই থেকে বেশ দিল দরিয়া হয়ে উঠে দীর্ঘদিন ‘কিপটেমি’র জন্য ভক্ত মহলে নিন্দিত এই মালিকানা পর্ষদ। তরুণ অনভিজ্ঞ ম্যানেজার আরতেতার উপর শুধু ভরসাই করেনি আর্সেনাল বোর্ড, তাকে একটি তারুণ্য-নির্ভর গড়ে তুলতে করেছে সব ধরনের সহযোগিতা।
সেই দল নিয়ে গত মৌসুমে শীর্ষ চারের খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছে আর্সেনাল। দৃঢ় রক্ষণ ও সৃজনশীল আক্রমণভাগ নিয়ে সময় সময় বেশ নান্দনিক ফুটবল উপহার দিলেও একজন গোল-স্কোরিং ফরওয়ার্ডের অভাবে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিতে হয় ক্লাবটিকে। গ্যাব্রিয়েল জেসুসের সাইনিং দলের সেই জরুরী শূন্যস্থান পূরণে সাহায্য করবে। পেপ গার্দিওলার অধীনে সুচারু হওয়া এই স্ট্রাইকারের আছে একাধিক প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জেতার অভিজ্ঞতা। এছাড়া এই ব্রাজিলিয়ান খেলতে পারেন একাধিক পজিশনেও।
জেসুস আর্সেনালের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তারকা হয়ে উঠতে পারেন, সেই ইঙ্গিত মিলেছে প্রিসিজনেই। মোট পাঁচটি প্রীতি ম্যাচে অর্ধেক সময় করে খেললেও জেসুস গোল পেয়েছেন মোট সাতটি। এর বদৌলতে আর্সেনাল জিতেছে প্রিসিজনের সবকটি ম্যাচই। সর্বশেষ দুই ম্যাচে চেলসি ও সেভিয়াকে তুলোধুনো করেছে গানারদের আক্রমণভাগ (যথাক্রমে ৪-০ ও ৬-০)। মৌসুম শুরু হলে এই ছন্দ ধরে রাখবেন জেসুস, এটাই এখন সকল আর্সেনাল ভক্তের প্রত্যাশা।
বড় প্রশ্ন: শীর্ষ চার হবে তো?
এটা আর্সেনালের জন্য একটি বড় প্রশ্নই বটে। নিজেদের নিরাপদ অর্থনৈতিক কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে গত দুই মৌসুমে ব্যাপক খরচ করেছে ক্লাবটি। এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়িক মডেল বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে না ক্লাবটি যদি না মাঠের ফুটবল থেকে প্রতিদান আসে। টিভি সত্ত্ব, স্পন্সরশিপ, ম্যাচ ফি ও আরও নানাদিক মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফুটবল সয়ংক্রিয়ভাবেই একটি ভালো অঙ্কের গ্যারান্টি দেয় সকল অংশগ্রহণকারী ক্লাবকে। ছয় বছর ধরে শীর্ষ চারের বাইরে থাকা আর্সেনাল সেই অর্থ ও খ্যাতির মুখ দেখে না অনেকদিন ধরে। ক্লাবকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল রাখতে এবার শীর্ষ চারে শেষ করাটা আরতেতার দলের জন্য একরকম বাধ্যতামূলকই।
শেষ পাঁচ মৌসুমে আর্সেনাল
২০২১-২২: ৫ম
২০২০-২১: ৮ম
২০১৯-২০: ৮ম
২০১৮-১৯: ৫ম
২০১৭-১৮: ৬ষ্ঠ
প্যাভিলিয়নের প্রেডিকশন: চতুর্থ।