সিজন প্রিভিউ: মানেদের অভাব ঘুঁচিয়ে এবার হাসবেন নুনেজরা?
উল্লেখযোগ্য দলবদল
যারা এলেন: ডারউইন নুনেজ (৬৪ মিলিয়ন পাউন্ড), ফাবিও কারভালিও (৫ মিলিয়ন), ক্যালভিন রামসি (৪.২ মিলিয়ন)।
যারা গেলেন: সাদিও মানে (৩৫ মিলিয়ন), তাকুমি মিনামিনো (১৫.৫ মিলিয়ন), নিকো উইলিয়ামস (১৮ মিলিয়ন), দিভক অরিগি (ফ্রি)।
দলবদল থেকে শুরু করে ক্লাব সংক্রান্ত সব ধরনের সিদ্ধান্তে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ছাপ দেখাচ্ছে লিভারপুল। মার্কিন কোম্পানি ফেনওয়ে স্পোর্টস গ্রুপ (এফএসজি) কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এই ক্লাব দলের গড় বয়স, সম্ভাব্য ট্রানজিশন, সম্মিলিত বেতন কাঠামোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে বেশ সচেতন। মনে করিয়ে দেওয়া যায়,, ইয়ুর্গেন ক্লপের প্রথম সুপারস্টার দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই একটি বয়সসীমার মধ্যে অবস্থান করে। মোহামেদ সালাহ, রবার্তো ফিরমিনো, সাদিও মানে, জারদান শাকিরি, জিনি ওয়াইনাল্ডাম, ভার্জিল ভ্যান ডাইক, জোয়েল মাতিপ, অ্যালিসন বেকার; ২০২০ সালে প্রিমিয়ার লিগজয়ী দলের এই আট জনের বয়সের ব্যবধান মাত্র দুই বছর। সেবছরই দলে যোগ দেওয়া থিয়াগো আলকানতারাও একই বয়সসীমার মধ্যে পড়েন।
দলের একটি বড় অংশ একসাথে বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক আগেই টের পেয়েছে ক্লাবটি। সাথে রয়েছে আরেকটি ভয়। সাধারণত, ত্রিশের আশেপাশে থাকা খেলোয়াড়দের একটি দাবিই থাকে বড় বেতনের চুক্তির। বার্সেলোনার মতো বেতন কাঠামো ভেঙে বুড়িয়ে যাওয়া একটি দল বনে যাওয়ার সম্ভাবনা এড়াতে সুচারু পরিকল্পনা করেছিলেন স্পোর্টিং ডিরেক্টর মাইকেল এডওয়ার্ডস। পরিকল্পনামাফিক গত দুই মৌসুমে ক্লাব ছেড়েছেন শাকিরি ও ওয়াইনাল্ডাম। এ সময়ে ফিরমিনো ও ভ্যান ডাইকের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে আনা হয়েছে ডিয়গো জটা (২৫) ও ইব্রাহিমা কোনাতেকে (২৩)। অ্যালিসনের উপযুক্ত সহকারী হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন কুইভিন কেলেহার (২৩)। আর সাদিও মানের পজিশনে আনা হয়েছে লুইস ডিয়াজকে (২৫)। ঝঞ্ঝাটমুক্ত ট্রানজিশনের অংশ হিসেবে এবার দলে ভেড়ানো হয়েছে আরও তিন তরুণ তারকাকে- নুনেজ (২৩), কারভালিও (১৯), রামসি (১৯)।
যা জানা আছে
গত চার বছরে দুইবার লিভারপুল মৌসুম শেষ করেছে মাত্র এক পয়েন্টের আক্ষেপ। দারুণ প্রতিযোগিতামূলক এক লিগ মৌসুম শেষে গতবার অলরেডদের সংগ্রহ ছিল ৯২ পয়েন্ট। প্রিমিয়ার লিগ যুগের ৩০ মৌসুমের মধ্যে ২৫টি মৌসুমে এই পয়েন্ট ট্যালিই চ্যাম্পিয়ন্স হওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতো। ইংলিশ ফুটবলকে রাঙানো মহাকাব্যিক এক দ্বৈরথে লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার সিটি নিজেদের কোন উচ্চতায় নিয়ে গেছে তা এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে।
তবে পরিসংখ্যানের দিকে তাকানোর সুযোগ নেই লিভারপুলের। শুধু প্রিমিয়ার লিগ না, মৌসুমজুড়ে অসাধারণ ফুটবল খেলা অলরেডরা গতবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপারও খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছে। অল্পের জন্য ভেস্তে গেছে তাদের কোয়াড্রপল স্বপ্ন। সাধারণত, যেকোনো হার্টব্রেকের পরই আরও বিপুল উদ্দীপনা ও সংকল্প নিয়ে ফিরে আসে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। এক পয়েন্টের জন্য শেষবার লিগ হারানোর পরের মৌসুমে তার লিগ জেতে রেকর্ড সাত ম্যাচ হাতে রেখে। শেষবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল হারার পরের মৌসুমেই জেতে রূপালি শিরোপাটি। এবারও একইরকম কামব্যাক আশা করাটা তাই অন্যায় হবে না একদম।
ক্লাবের দীর্ঘদিনের সেবক সাদিও মানের প্রস্থান নিঃসন্দেহে একটি বড় বিষয়। তবে তার পজিশন, লেফট উইংয়ে ছয় মাস আগেই একজন বদলি এনেছে লিভারপুল। লুইজ নামের সেই উইঙ্গার ইতোমধ্যে অ্যানফিল্ডের প্রিয়মুখ হয়ে উঠেছেন। বেনফিকা থেকে আসা নতুন স্ট্রাইকার নুনেজ লাল জার্সিতে ইতোমধ্যে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন কয়েকবার। দীর্ঘদিন কোনো পিউর নাম্বার নাইন ছাড়া খেলা লিভারপুল নুনেজের সাইনিংয়ে বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারে। দুই ফুলব্যাক, দুই উইঙ্গার ও মিডফিল্ডারদের নিয়ে দলের সাপোর্ট সিস্টেম রয়েছে তা সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারেন লম্বা, বলবান ও দ্রুতগতির এই স্ট্রাইকার।
লাইপজিগের বিপক্ষে প্রিসিজনের ম্যাচে একাই চার গোল করেছেন এই উরুগুইয়ান (স্কোর: ৫-০)। সিটির বিপক্ষে কমিউনিটি শিল্ডের ম্যাচে একটি পেনাল্টি এনে দেওয়ার পাশাপাশি অন্তিম সময়ে গোল করে নিশ্চিত করেছেন দলের জয় (স্কোর: ৩-১)। এছাড়া ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষেও জিতেছে অলরেডরা। প্রিসিজনের প্রথম ম্যাচে ম্যান ইউনাইটেডের কাছে ০-৪ গোলে হারার পর সবাই হালকা ভ্রু কুঁচকেছিল, ইন্টারনেটে শুরু হয়েছিল নিন্দার ঝড়। তবে পরবর্তী ম্যাচগুলোয় ভালো পারফরম্যান্স এবং সিটির বিপক্ষে ডমিনেট করে শিল্ড জেতার পর চুপ হয়ে গেছেন সব নিন্দুক।
গত কয়েক মৌসুমের চেয়ে এবারের লিভারপুল দল কিছুটা ভিন্ন। এখন দলে যেমন সালাহ, ভ্যান ডাইক, থিয়াগোদের মতো অভিজ্ঞ সুপারস্টাররা রয়েছে; তেমনি রয়েছে নুনেজ, ডিয়াজ, ট্রেন্ট, এলিয়টের মতো ক্ষুধার্ত তরুণ। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের এমন সুন্দর মিশেল লিভারপুলকে দ্বিতীয় প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা এনে দিতে পারে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বড় প্রশ্ন: মিডফিল্ডের গভীরতা কি লিগ জেতার জন্য যথেষ্ট?
থিয়াগো, জর্ডান হেন্ডারসন, নাবি কেইটা, অ্যালেক্স অক্সলেড চ্যাম্বারলিন; এই চার মিডফিল্ডারই ইনজুরি-প্রোন। তারমধ্যে, দলের একমাত্র ডিফেন্সিভ মিড, ফ্যাবিনিয়োর কোনো উপযুক্ত ব্যাক-আপ নেই। শুরুতে একজন নতুন মিডফিল্ডারকে দলে ভেড়ানোর পরিকল্পনা করা হলেও অরেলিয়ান সুয়ামেনি রিয়ালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলে ভেস্তে যায় তা। ক্লাব-সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের দাবি, লিভারপুলের অপর পছন্দের মিডফিল্ডার হচ্ছেন জুড বেলিংহাম, যাকে এই মৌসুমে ছাড়তে নারাজ বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। তাই অগত্যা নতুন মিডফিল্ডারের জন্য একবছর অপেক্ষা করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্লাবটি।
মৌসুমের মাঝখানে ইনজুরি-সংক্রান্ত ঝামেলা শুরু হলে মিডফিল্ডের গভীরতার অভাব ভোগাতে পারে লিভারপুলকে। তবে হার্ভি এলিয়ট, ফাবিও কার্ভালিওরা ক্লপের মিডফিল্ডে নিজেদের অবস্থান পাকা করতে পারলে দৃশ্যপট অন্যরকম হতে পারে।
শেষ পাঁচ মৌসুমে লিভারপুল
২০২১-২২: ২য়
২০২০-২১: ৩য়
২০১৯-২০: চ্যাম্পিয়ন
২০১৮-১৯: ২য়
২০১৭-১৮: ৩য়
প্যাভিলিয়নের প্রেডিকশন: প্রথম।