লন্ডন ডার্বি: নবাগতদের রাতকে অমরত্ব দিল কন্তে-টুখেলের রেষারেষি
চেলসি ২:২ টটেনহাম হটস্পার
মৌসুম শুরু হতে না হতেই একটি প্রিমিয়ার লিগ ক্লাসিক উপহার দিল চেলসি ও টটেনহাম হটস্পার। রোববার স্টামফোর্ড ব্রিজের ৯০ মিনিট আবারও সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে লন্ডনের এই দুই ক্লাবের মধ্যকার বিদ্বেষ কতটা গভীর। কুলিবালি-স্টার্লিং-পেরিসিচদের মতো নতুন সাইনিংদের কারিশমায় আসা ২-২ গোলের ড্রকে তাই ছাপিয়ে গেছে দুই ম্যানেজারের মাঝে হওয়া কোন্দল।
ব্রিজে ম্যাচের শুরুতে স্পার্স চাপ প্রয়োগ করে খেলতে শুরু করলেও ১০ মিনিটের মধ্যেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে স্বাগতিকরা। বলের দখল রেখে আক্রমণ করা শুরু করে মাউন্ট-হ্যাভার্জরা। এরকম একটি আক্রমণ থেকেই ১৮ মিনিটে কর্নার পায় চেলসি। নতুন সাইনিং মার্ক কুকুরেয়ার নেওয়া সেই কর্নার সবাইকে ছাড়িয়ে জায়গা করে নেয় ফার পোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা কালিদু কুলিবালির পায়ে। এক নবাগতের ক্রসে শট নিয়ে গোল করেন আরেক নবাগত।
প্রথমার্ধের বাকি সময়ে বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে চেলসি একের পর এক আক্রমণ করে গেলেও আর গোলের দেখা পায়নি। ১-০ ব্যবধানে শেষ হয় প্রথমার্ধ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দুই দলকেই আগের চেয়ে একটু আক্রমণাত্মক গিয়ারে দেখা যায়। অ্যান্টোনিও কন্তে তার ট্যাকটিসেও পরিবর্তন আনেন। ৫৭ মিনিটে রিচার্লিসনকে বদলি হিসেবে নামানোর পর স্পার্স কার্যত ৩-৩-৪ ফরমেশনে খেলতে শুরু করেন। সামনে খেলেন চার ফরওয়ার্ড- হ্যারি কেইন, রিচার্লিসন, ডেজাঁন কুলুসেভস্কি ও হিউয়েঙ-মিন সন। এই দুর্ধর্ষ ফ্রন্টলাইনের প্রেশারেই প্রথম গোল পায় স্পার্স।
কুলুসেভস্কি ও সনের প্রেসিংয়ের মুখে নিজেদের বক্সে বল হারান চেলসি মিডফিল্ডার জর্জিনহো। সেই লুজ বলে শট নিয়ে দলকে সমতায় ফেরান পিয়ের-এমিল হয়বিয়ার্গ। কিন্তু এই ৬৮ মিনিটের এই গোলের মিনিটখানেক আগেই আক্রমণে উঠেছিল চেলসি। সেই আক্রমণ ক্ষণস্থায়ী হয় হ্যাভার্জের উপর করা বেন্টাঙ্কৌরের এক ট্যাকেলে। খোলা চোখে এই ট্যাকেলকে ফাউল ভেবেছিল পুরো স্টামফোর্ড ব্রিজ। সেকেন্ডের জন্য খেলা থামিয়ে দিয়েছিলেন বেন্টাঙ্কৌর নিজেও। কিন্তু রেফারি বাঁশি না বাজানোয় খালি চালিয়ে যায় স্পার্স। এবং মিনিটের মধ্যে গোল করে ফেরায় সমতা।
গোলের পর চেলসি ডাগআউটের দিকে ফিরে উল্লাসে ফেটে পড়েন সাবেক চেলসি ম্যানেজার কন্তে। কিন্তু তার উদযাপন তৎক্ষণাৎ থামিয়ে দেন অপর ডাগআউট থেকে ছুটে আসা টমাস টুখেল। রেষারেষি বেশিদূর গড়াতে না দিয়ে দুই ম্যানেজারকে আলাদা করেন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা চতুর্থ রেফারি। কিন্তু এই রেষারেষি যে এখানেই শেষ না!
১০ মিনিটের মাঝে স্পার্সের রক্ষণ থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে গোল করে চেলসি। ৭৭ মিনিটে নবাগত রহিম স্টার্লিংয়ের পাস থেকে নেওয়া রিস জেমসের শট জালে জড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই স্পার্সের ডাগআউটের দিকে ছুটে যান টুখেল। কন্তের সামনে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে বুনো উদযাপন করেন এই জার্মান কোচ।
কিন্তু তার এই উদযাপনও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। অতিরিক্ত সময়ে শেষ মুহূর্তে, যখন স্টামফোর্ড ব্রিজ জয় উদযাপন শুরু করে দিয়েছে প্রায়, তখন আবার নাটকীয়ভাবে সমতায় ফেরে সফরকারীরা। বদলি নামা নতুন সাইনিং ইভান পেরিসিচ মিনিটের ব্যবধানে টানা তিনটি স্পট-কিক নেন। প্রথম দুটি থেকেই গোল দেওয়ার মতো সম্ভাবনা তৈরি করে স্পার্স। তারপর তৃতীয় স্পটকিকটি (কর্নার) গিয়ে পড়ে হ্যারি কেইনের মাথায়। তার হেড থেকে স্পার্স ভক্তরা প্রায় স্মরণীয় এক ড্র।
ম্যাচ শেষে হ্যান্ডশেক করার সময় আবার বাহাসে জড়ান দুই ম্যানেজার। আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠে স্টামফোর্ড ব্রিজ। এবার কোচিং স্টাফ ও খেলোয়াড়রা মিলে দুই ম্যানেজারকে ছাড়িয়ে আনলেও লাল কার্ড দেখেই শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়তে হয় টুখেল ও কন্তেকে।