কেভিচা কাভারাতস্কেলিয়া: নাপোলির নতুন ম্যারাডোনা?
প্রথমেই বলে রাখি শিরোনাম পড়ে ভড়কাবেন না যেন। ডিয়েগো ম্যারাডোনার কাতারে অখ্যাত এক ফুটবলারকে তুলে আনা? না এই ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পৃথিবীর কেউই দেখাবে না। কিন্তু কেন নাপোলির এক ফুটবলারের নাম জুড়ে গেছে কিংবদন্তির সাথে, সেই গল্পটাই পড়ুন।
কুইচা কোয়ারাৎস্কেলিয়া; নামটা অত চেনা নাও ঠেকতে পারে আপনার কাছে। জর্জিয়ার এক অখ্যাত ফুটবলারকে মনে রাখার তেমন কারণও হয়তো নেই। কিন্তু ইতালিয়ান ফুটবলের খবরাখবর যারা রাখছেন বা রাখেন, তারা কুইচাকে চিনবেন। নাপোলির এই উইঙ্গার এখন সিরি আ’র ‘ব্রেক আউট স্টার’। নেপলস শহরের ক্লাবটির হয়ে খেলেছেন মাত্র পাঁচ ম্যাচ। তাতেই পেয়ে গেছেন ‘কভারাডোনা’ ডাকনাম।
হ্যাঁ, নেপলসের রাজা, প্রয়াত আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার নামের আদলে। অথচ নেপলসের প্রতিটি দেয়ালের ইট-সুরকি, মেট্রো স্টেশনেও মিশে আছে এই কিংবদন্তির ছোঁয়া। নাপোলির হোম গ্রাউন্ডটাও তো ম্যারাডোনার নামেই। সেখানে কুইচা কী এমন করে বসলেন, যে স্বয়ং ম্যারাডোনার নামের সাথে তার নামটা মিশিয়ে দিলেন নাপোলির ভক্তরা?
চলতি মৌসুমে দারুণ শুরু করেছে নাপোলি। টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ক্লাবটি এখন পর্যন্ত অপরাজিত আছে সিরি’ আ তে। এই অপরাজিত যাত্রায় কুইচার পা থেকে এসেছে চার গোল আর এক অ্যাসিস্ট। এতেও বোধহয় ঠিকঠাক বোঝা যাচ্ছে না তাকে ঘিরে কেন নেপলসবাসীদের এত উন্মাদনা।
গত শনিবার লাৎসিওকে ২-১ গোলে তাদের মাঠেই হারিয়েছে নাপোলি। সেই ম্যাচেই নিজের ছোট্ট সিরি আ ক্যারিয়ারের সেরা গোলটা পেতে পেতেও পাননি কুইচা। মাঝমাঠ থেকে বলে পেয়ে শট করার আগে জোন ১৪-এর সামনে, তাকে মার্ক করা দুই ডিফেন্ডারকে চমকে দিয়ে যেভাবে চরকির মতো শরীরটা ঘুরিয়েছিলেন, তাতেই ডাকনাম পড়েছে ‘কভারাডোনা’।
ম্যারাডোনাও তো এভাবেই ‘টার্ন’ নিতেন। সুবিধামতো অবস্থানে গিয়ে ডানপায়ে জোরালো শট নিয়েছিলেন কুইচা। দুর্দান্ত সেই শট বারে লেগে ফিরে এলেও নাপোলিকে জেতানো গোলটা ৬১ মিনিটে তিনিই করেছিলেন। যদিও ক্যারিয়ারের পুরোটাই পড়ে রয়েছে কুইচার, তবুও ফুটবল রোমান্টিকরা চাইলে ম্যারাডোনার সাথে আরেকটু মিল খুঁজতে পারেন। সিরি আ’তে দুজনেরই অভিষেক হয়েছে ভেরোনার বিপক্ষে।
ম্যারাডোনার সাথে কুইচার তুলনা নয়, ভক্ত-সমর্থকরা তার মাঝে ম্যারাডোনার ছায়া খুঁজে বেড়াচ্ছেন। দারুণ ড্রিবলার ছিলেন ম্যারাডোনা, বল যেন চুম্বকের মতো লেগে থাকতে পায়ের সাথে। কুইচাও সেভাবেই খেলছেন নাপোলির লেফট উইং ধরে। প্রতি ৯০ মিনিটে প্রায় সাতটি করে ড্রিবলের প্রয়াস আসছে তার পা থাকে। বলের সাথেও লেপ্টে থাকতে চান। তাই তো প্রতি ৬০ মিনিটে একটি করে গোলে জুড়ে আছে তার অবদান। নাপোলির কোচ স্পালেত্তিও এক বাক্যে বলে দিয়েছেন, ‘যেকোনো ধরনের বল নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ওর আছে।’
নিজের জন্মভূমি জর্জিয়াতে কুইচাকে ডাকা হয় ‘জর্জিয়ান মেসি’ বলে। ভাগ্যই বটে তার। নাপোলিতে পাঁচ ম্যাচ খেলেই মন জয় করে নিয়েছেন সমর্থকদের। আবার ইতালিতে যাওয়ার আগেই হয়ে উঠেছেন নিজ দেশের লিওনেল মেসি। এই নামটা কুইচা পেয়েছিলেন ডিনামো বাতুমিতে তার সতীর্থ জুরিকো ডাভিতাসভিলের কাছ থেকে।
কুইচা ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ডিনামো বিলিসির একাডেমি থেকে। সেখান থেকে রুস্তাভি, রুবেন কাযান, ডিনামো বাতুমি হয়ে ভিড়েছেন নাপোলিতে। ১০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি’তে নাপোলিতে আসার আগে বাতুমির জার্সিতে ১১ ম্যাচে আট গোল করেছিলেন ২২ বছর বয়সী কুইচা। মূলত সেই পারফরম্যান্স দিয়েই নজরে পড়েন নাপোলির স্কাউটদের।
জর্জিয়ার লোকজন কুইচাকে ‘জর্জিয়ান মেসি’ বলে ডাকলেও তার আদর্শ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। পর্তুগীজ এই কিংবদন্তিতে আদর্শ মেনে বড় হয়েছেন তিনি। রোনালদোর ৭ নম্বর জার্সি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের জার্সির নম্বরটা রেখেছেন ৭৭।
জর্জিয়া থেকে শীর্ষ পর্যায়ে অনেক ফুটবলারই এসেছেন। কাহকা কালাদযে এসি মিলান মাতিয়ে গেছেন। শটা আরভেলাদে আয়াক্স, রেঞ্জার্সের হয়ে শিরোপা জিয়েছেন। প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন জর্জি কিঙ্কলাদজে-তেমুরি কেটসবাইয়ারা। তাদের সেই এলিট তালিকায় হয়তো যুক্ত হতে যাচ্ছে কুইচার নামও।
সেই পথেই হয়তো আছেন তরুণ কুইচা। জাতীয় দলের হয়ে ১৭ ম্যাচে করেছেন আট গোল। টানা দুইবার জিতেছেন জর্জিয়ার সেরা ফুটবলারের খেতাব। যেটা ছুঁতে পারেননি কিঙ্কলাজদেও। নাপোলির ভক্তরা ইতোমধ্যে তাকে আপন করে নিয়েছেন। ম্যারাডোনার রেখে যাওইয়া শূন্যস্থান তিনি কেন, হয়তো কেউই পূরণ করতে পারবেন না। তবে তার মাঝে ম্যারাডোনাকে খুঁজে নিতে চাচ্ছেন অনেকেই। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে কুইচাদের প্রতিপক্ষ লিভারপুল। নাপোলির সমর্থকরাও এই ম্যাচের পর চাইবেন কুইচাকে আরও একবার ‘কভারাডোনা’ বলে ডাকতে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, গোল.কম