• ইউয়েফা নেশনস লিগ
  • " />

     

    বিশ্বকাপের আগে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ফুটবল: কেমন করল বড় দলগুলো?

    বিশ্বকাপের আগে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ফুটবল: কেমন করল বড় দলগুলো?    

    বিশ্বকাপের আগে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক বিরতি ছিল এটি। সদ্য শেষ হওয়া দুই সপ্তাহের এই ব্রেক বিশ্বকাপগামী সকল দলের জন্যই ছিল শেষ প্রস্তুতি। পাশাপাশি এই ব্রেকে খেলা দুই ম্যাচের উপর নির্ভর করেছে সকল ইউরোপীয় দলের নেশনস লিগের ভাগ্যও। 

    চলুন দেখে নেওয়া যাক এবারের ব্রেকে কেমন করল বড় দলগুলো- 

    জার্মানি: দেশের মাটিতে হাঙ্গেরির বিপক্ষে হেরে আন্তর্জাতিক বিরতি শুরু করে জার্মানি। নেশনস লিগে ০-১ গোলের এই পরাজয় জার্মানির ফ্রন্টলাইনে পরিপক্বতার অভাবকে আরও একবার সবার সামনে তুলে ধরে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-৩ গোলের ড্র থেকে কিছুটা সান্ত্বনা নিতে পারে জার্মানরা। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, জার্মানিই গ্রুপের একমাত্র দল যাদের বিপক্ষে হারেনি ইংল্যান্ড। আবার ওয়েম্বলিতে জার্মানির তিনটি গোলই এসেছে ইংল্যান্ডের রক্ষণের ভুলে। সব মিলিয়ে, এই দলকে নিয়ে বিশ্বকাপের আগে হ্যান্সি ফ্লিকের যে অনেক কাজ করতে হবে তা বলাই বাহুল্য। 

    ফ্রান্স: বর্তমান চ্যাম্পিয়ন (নেশনস লিগ, বিশ্বকাপ দুটোরই) ফ্রান্সের ফর্মটাও ঠিক ভালো যাচ্ছে না। ডেনমার্ক, ক্রোয়েশিয়ার গ্রুপ থেকে প্রথম চার ম্যাচে মাত্র দুই পয়েন্ট কুড়িয়ে সেমির দৌড় থেকে আগেই বাদ পড়ে গিয়েছিল ফ্রান্স। এছাড়া, বড় ইনজুরির লিস্ট নিয়ে এই ব্রেক শুরু করা ফ্রান্সের দলীয় স্পিরিটও আগের মতো ছিল না। তবে কিলিয়ান এমবাপে ও অলিভিয়ের গোলে অস্ট্রিয়াকে ২-০ গোলে হারাতে সক্ষম হয়েছে তারা। তবে রক্ষণের দুর্বলতায় ডেনমার্কের বিপক্ষে তারা পরের ম্যাচে হেরেছে একই ব্যবধানে। প্রস্তুতি যেমনই হোক, বিশ্বকাপের আগে কুন্ডে-লরিস-বেনজেমার মতো বড় তারকারা সবাই ইনজুরি থেকে ফিরে আসবেন সেই প্রার্থনাই হয়তো এখন করবেন দেশম। 

    ইংল্যান্ড: গ্যারেথ সাউদগেটের দলের চেয়ে বাজে আন্তর্জাতিক বিরতি ও নেশনস লিগ যায়নি আর কোনো দলের। গ্রুপ পর্বের প্রথম চার ম্যাচ থেকে মাত্র দুই পয়েন্ট নিয়ে এই ব্রেক শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। সেই ধারা অনুযায়ী এবারের দুই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট কুড়িয়েছে তারা। ইতালির বিপক্ষে ০-১ গোলে হারার পর জার্মানির বিপক্ষে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে তারা। বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডের এই ফর্ম নিন্দার ঝড় তুলেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে। দলের প্রায় সবাই প্রতিভাবান হওয়ায় নিন্দার প্রায় পুরোটুকুই গিয়ে পড়ছে সাউদগেটের উপর।  

    নেদারল্যান্ডস: পোল্যান্ড ও বেলজিয়ামকে হারিয়ে আবারও নিজেদের সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। এই দুই জয়ে নিজেদের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নেশনস লিগের সেমি নিশ্চিত করেছে তারা। একই সাথে লুই ভ্যান গালের অধীনে এখনও অপরাজিত ডাচরা বিশ্বকাপের আগে যেন একটি বার্তাও পৌঁছে দিয়েছে সকল প্রতিপক্ষের কাছে।  

    বেলজিয়াম: গোল্ডেন জেনারেশনের সর্বশেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে এটি। সে হিসেবে বেলজিয়ামের প্রস্তুতি ঠিক খারাপ হয়নি। ওয়েলসকে ২-১ গোলে হারিয়ে এবারের ব্রেক শুরু করে তারা। তবে নেদারল্যান্ডসের কাছে ০-১ গোলে হারিয়ে সেমিতে যাওয়ার সুযোগ হারায় তারা। সান্ত্বনার ব্যাপার হচ্ছে, গ্রুপের অঘোষিত ফাইনালের একমাত্র গোলটি খেয়েছে বেলজিয়াম কর্নার থেকে। এর বাইরে বাকি ম্যাচে হল্যান্ডের সঙ্গে সমানে সমানই লড়েছে ডি ব্রুইনারা। 

    ইতালি: ক্লিনশিট রেখে ইংল্যান্ড ও হাঙ্গেরির বিপক্ষে স্বাভাবিক জয় নিয়ে ইতালি আরেকবার সবাইকে মনে করিয়ে দিল বিশ্বকাপ তাদের কতটা মিস করবে। গতবছর ইউরো জেতা রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা এবার জায়গা করে নিয়েছে নেশনস লিগের সেমিতেও। 

    পর্তুগাল: চেক প্রজাতন্ত্রকে ৪-০ গোলে হারিয়ে অনেক বাহবা কুড়ালেও স্পেনের বিপক্ষে হেরে গিয়ে নেশনস লিগ থেকে বাদ পড়েছে পর্তুগাল। প্রথম ম্যাচে ফাটা নাক নিয়ে খেলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও বেশ বাহবা কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু দলের প্রয়োজনে পরের ম্যাচে আবারও একটি অস্তমিত পারফরম্যান্স দিয়ে মাঠ ছেড়েছেন পর্তুগালের প্রধান স্ট্রাইকার। স্বাভাবিকভাবেই, বিশ্বকাপে তাকে একাদশে রাখা নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের। 

    স্পেন: লুইস এনরিকের অধীনে স্পেনকে কখনোই খুনে ফুটবল খেলতে দেখা যায়নি। তবে প্রায় ম্যাচেই রেজাল্ট বের করে নেয় তারা। এবারও তাই করল আলভারো মোরাতারা। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-২ গোলের হার সবাইকে একটু চিন্তিত করে তুললেও পর্তুগালকে হারিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে স্পেন। মোরাতার একমাত্র গোলে পাওয়া সেই জয় স্পেনকে সেমির টিকিটও এনে দিয়েছে। 

    ব্রাজিল: ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো হাই-প্রোফাইল দলের সাথে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলার সুযোগ না পেলেও ব্রাজিলের আন্তর্জাতিক ব্রেক খারাপ যায়নি। দুই প্রীতি ম্যাচে ঘানা ও তিউনিসিয়ার বিপক্ষে হেসেখেলে জিতেছে তিতের দল। গোলের খাতায় নাম লিখিয়েছেন রিচার্লিসন, রাফিনহা, নেইমারের মতো বড় তারকারা। 

    আর্জেন্টিনা: ব্রাজিলের মতো আর্জেন্টিনাও ফলপ্রসূ দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছে। হন্ডুরাস ও জামাইকা, দুই দলের বিপক্ষেই ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে তারা। দুই ম্যাচে লিওনেল মেসি করেছে চার গোল। ৩৫ ম্যাচ ধরে অপরাজিত মেসিরা হুঙ্কার দিয়েই পা রাখতে যাচ্ছে বিশ্বকাপে।