• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    মাঠ ছেড়ে 'নিষিদ্ধ' রোনালদো? এর পরিণতি কী?

    মাঠ ছেড়ে 'নিষিদ্ধ' রোনালদো? এর পরিণতি কী?    

    টটেনহামের সাথে ম্যান ইউনাইটেডের ম্যাচ চলছে। ম্যাচের অন্তিম সময়ে ইউনাইটেড এগিয়ে দুই গোলে। টিভি পর্দায় দেখা গেল, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো প্লেয়ার্স ডাগআউট ছেড়ে ভেতরের দিকে চলে যাচ্ছে। পরে জানা গেল, তিনি ড্রেসিংরুমে ঢু মেরে মাঠ ছেড়েই চলে গেছেন। অপেক্ষা করেননি শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত। এও জানা গেল, রোনালদো বদলি হিসেবে নামতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন ম্যাচে। পরে ইউনাইটেড আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানায়, চেলসির বিপক্ষে স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাকে। তিন দিন দলের সঙ্গে তিনি অনুশীলনও করতে পারবেন না। রোনালদো নিজেও এক বিবৃতিতে দিয়ে স্বীকার করেছেন, ঘটনাটা ছিল মুহূর্তের মেজাজ খারাপ থেকে করা। কিন্তু পুরো ঘটনাটা কী বার্তা দিল? 

    কেন এমন করলেন রোনালদো?

    ম্যান ইউনাইটেডের সাথে রোনালদোর এই মৌসুমে চাপান উতোর শুরু প্রি সিজন থেকেই। মৌসুম শুরুর আগেই নতুন ক্লাব খুজতে থাকে তার এজেন্ট মেন্ডেস, রোনালদো নিজেও প্রাক মৌসুমে দলের সঙ্গে অনুশীলন করেননি। এজন্য মৌসুম শুরুর বেশ কয়েকটি ম্যাচে দলেই জায়গা হয়নি তার। ইউনাইটেড কোচ এরিক তেন হাগ এই মৌসুমে একদমই অনিয়মিত খেলিয়েছেন রোনালদোকে। শোনা যাচ্ছে, টেন হাগের কোচিং স্টাফের কয়েকজনের সাথে রোনালদোর সম্পর্ক েতই খারাপ, তাদের সঙ্গে ঠিকমতো কথাও বলেন না রোনালদো। টেন হাগের কোচিং স্টাইল নিয়েও রোনালদোর আপত্তি আছে বলে জানা যায়। এটা পরিষ্কার, টেন হাগের দর্শনের সাথে রোনালদো ঠিক যান না। এজন্য দলে তিনি আর প্রথম পছন্দ নয়। টটেনহামের ম্যাচেও রোনালদোকে শুরু থেকে রাখা হয়নি। রোনালদোকে ওয়ার্ম আপ করতে দেখা গেছে, পরে অবশ্য তিন ডাগআউটেই বসে ছিলেন। একদম শেষ মুহূর্তে মাঠ ছেড়ে চলে যান রোনালদো।

     

    কাজটা কি পেশাদার হয়েছে?

    রোনালদোর কাজটা যে পুরোপুরি অপেশাদার হয়েছে, সেটা নিয়ে ফুটবল পন্ডিত থেকে শুরু করে ইউনাইটেড সমর্থকসহ সবাই একমত। একজন খেলোয়াড় কখনোই ম্যাচের শেষ হওয়ার আগে এভাবে কোচের অনুমতি না নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেন না। একজন পেশাদার বদলি হিসেবে নামতে কখনোই অস্বীকৃতি জানাতে পারেন না। ফুটবলে ম্যানেজার বা কোচের চেইন অব কমান্ড একজন ফুটবলারকে মানতেই হবে, এটাই পেশাদারি। রোনালদো এসবের সবকিছুই ভঙ্গ করেছেন। নিজেই পোস্ট দিয়ে স্বীকার করেছেন, তরুণদের জন্য সবসময় উদাহরণ সৃষ্টির চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটা সবসময় সম্ভব হয় না। মাঝে মাঝে মুহূর্তের ভুলে তাই মেজাজ হারিয়ে ফেলতে হয়, সেটাও বলেছেন। সাবেকদের সবাই বলেছেন, রোনালদোর এই কাজ তরুণ প্রজন্মের কাছে পুরোপুরি একটা নেতিবাচক উদাহরণ হয়ে থাকবে। তবে রোনালদো সরাসরি ক্ষমা না চাইলেও তার পরোক্ষভাবে ভুল স্বীকার করে নেওয়াটাও বড় ব্যাপার। ভুল মানুষ করেই, রোনালদো যে সেটার উর্ধ্ব নন সেটা মেনে নিলে তার জন্যই ভালো।

    টেন হাগ কি ঠিক করেছেন?

    ইউনাইটেড কোচ হিসেবে এরিক টেন হাগ ম্যাচ শেষেই বলেছেন, পরের দিন তিনি ব্যাপারটা দেখবেন। এরপর ইউনাইটেড বিবৃতি দেয়, চেলসি ম্যাচে তাকে বসিয়ে রাখার। এজজন কোচের কাছে শৃঙ্খলা খুব বড় ব্যাপার, বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিগ ও ইউনাইটেডের মতো ক্লাবে। যেখানে রোনালদোকে শাস্তি না দেওয়াটা এরকম বার্তা দিল, ইচ্ছে করলে যে কেউই নিয়ম ভঙ্গ করতে পারে। এদিক দিয়ে টেন হাগের শাস্তিটা অন্য ফুটবলারের জন্যও উদাহরণ হয়ে থাকবে। আর কোচের না মানলে শাস্তির উদাহরণ ফুটবলে অজস্র আছে। ব্যক্তির চেয়ে দল যখন বড় তখন ফুটবলার যতই বড় হোন তাকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার কোচের আছে। সেদিক দিয়ে টেন হাগের কাজটা ভুল বলার সুযোগ নেই। বিশেষ করে দল যখন ভালো খেলছে, রোনালদো নিজে ভালো খেলতে পারছেন না- টেন হাগের জন্য তখন এরকম উদাহরণ দাঁড় করা আরও সহজ। 

    রোনালদোর এখন কী হবে?

    বিশ্বকাপের আগে খুব বেশি ম্যাচ বাকি নেই। তার আগে রোনালদোর দলে জায়গা না পেলে খুব বেশি অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশ্বকাপ শেষে জানুয়ারি ট্রান্সফারেই রোনালদো হয়তো নতুন ক্লাব খুঁজবেন। সেটা তার ও ক্লাব দুই পক্ষের জন্যই ভালো। তবে রোনালদোর যে বেতন, তাতে সব ক্লাবের পক্ষে তাকে চাইলেও নেওয়া সম্ভব নয়। এর আগে দলবদলেও তাকে নিতে আগ্রহ দেখায়নি কোনো ক্লাব। সেদিক দিয়ে তার জন্য নতুন ক্লাব খোঁজাটা একটা চ্যালেঞ্জই। আর যদি রোনালদো মাঠে দারুণ কিছু করতে পারেন, নিজের ইগোকে একপাশে রেখে এরকম অপেশাদারি কিছু না করেন তাহলে ইউনাইটেড অধ্যায়টা লম্বা হতেও পারে। রোনালদো চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন, এই চ্যালেঞ্জটা কীভাবে নেন সেটাই দেখার বিষয়।