• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    পরের মৌসুমে শীর্ষ দশে থাকতে চান রানিয়েরি!

    পরের মৌসুমে শীর্ষ দশে থাকতে চান রানিয়েরি!    

    রূপকথা সত্যি করে লেস্টার সিটির ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা নিশ্চিত করল গতকাল রাতে। স্টামফোর্ড ব্রিজে খেলার একসময় ২-০ গোলে এগিয়ে যায় স্পারস, কিন্তু শেষমেশ চেলসি ২-২ গোলে ড্র করে প্রিমিয়ার লিগ শেষ হওয়ার আগেই লেস্টার সিটির শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলল। এই রূপকথার গল্পের নায়ক অনেকজন, কিন্তু নেপথ্যের কারিগর ঐ এক বুড়ো ইতালিয়ান, যিনি একটি রেলিগেশন থেকে উঠে আসা দলের কানে বীজমন্ত্র দিয়েছেন।

     

    “এরকম কিছুর জন্য আসলে প্রস্তুত থাকা সম্ভব না। এরকম কিছু ঘটে গেলে আসলে সাথে সাথে পুরো ব্যাপারটা ধরাও যায় না। খেলার প্রথমার্ধ শেষে মনে হচ্ছিল স্পারস জিতে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই আমার মনটন বেশ খারাপ ছিল। তবে কেহিল যখন গোল করল তখন আমার মনে হল আজ হতে পারে এবং আমি স্বীকার করছি যে হ্যাজার্ডের গোলটা আমি লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে উদযাপন করেছি।” এভাবেই গতরাতের বর্ণনা দিলেন লেস্টারের ম্যানেজার ক্লদিও রানিয়েরি। ৯৬ বছর বয়স্কা মা’কে সময় দিতে তিনি ইতালিতে ফিরে গিয়েছিলেন গতকাল, খেলা দেখেছেন নিজের বাড়িতে বসেই। যদিও তিনি বলেছিলেন ম্যাচটা দেখা হবে না তাঁর।

     

    “তবে সবার বোঝা উচিত যে এই বছর যা হয়েছে, এর পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয়। আগামী মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য থাকবে প্রথম দশে থাকা। আশা করি আমাদের এই আত্মবিশ্বাস আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা টিকে থাকবে সামনের বছরও।”  রানিয়েরির পা মাটিতেই। অথচ এই লোকই লেস্টার সিটির খেলোয়াড়, ভক্তদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন।

     

    “আমার বয়স হয়েছে ৬৪, দীর্ঘ সময় ধরে আমি বিভিন্ন প্রতিপক্ষের সাথে লড়ে যাচ্ছি। প্রতিপক্ষদের কারণেই আমার ভেতরে একটা আশাবাদী সত্ত্বা তৈরী হয়েছে। সবসময়ই আমার মনে হতো যে গোটা জীবনে কোন একটা লিগের শিরোপা আমি জিতবই। তবে এটাও আমি সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমিই সেই গ্রিসের বরখাস্ত হওয়া ম্যানেজার। আমাকেই গ্রিসের ডাগ আউটে দেখা যেত, সেই আমিই আজ এই আমি। আমি বদলাইনি।” রানিয়েরি এভাবেই সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়গুলোর কথা।

     

    গ্রিসের জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার ৪ মাসের মাঝেই রানিয়েরি বরখাস্ত হন, ফারো দ্বীপপুঞ্জের কাছে গ্রিসের পরাজিত হওয়ার দায়ভার মাথায় নিয়ে। সে কারণেই লেস্টার সিটির বোর্ড যখন রানিয়েরিকে কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে নিয়ে আসেন তখন লেস্টারের ভক্ত থেকে শুরু করে প্রাক্তন খেলোয়াড় ও ম্যানেজার সবাই বিভিন্ন বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য ছুঁড়েছিলেন।

     

    রানিয়েরি লেস্টারের দায়িত্ব পাওয়ার পর তাদের প্রাক্তন খেলোয়াড় গ্যারি লিনেকারের বিস্ময়, নাকি বিদ্রুপ?

     

    চেলসি, ভ্যালেন্সিয়া, জুভেন্টাস, রোমার মতো বড় বড় ক্লাবের হাল ধরেছেন আগেও রানিয়েরি, কিন্তু শিরোপার দেখা পান নি। কে জানতো এই কিং পাওয়ার স্টেডিয়াম এবং লেস্টারের ফক্সরাই তাঁকে তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা এনে দেবে? জানতেন না রানিয়েরি নিজেও। “আমি একজন কড়া বাস্তববাদী মানুষ, কাজেই শিরোপা জেতার কথা ঘুণাক্ষরেও আমার মাথায় আসে নি প্রথমে।” রানিয়েরি জানান, “আমি শুধু এক ম্যাচ এক ম্যাচ করে এগিয়েছি। সবসময় পরবর্তী ম্যাচটা কীভাবে জেতা যায় সেটা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছি, খুব দূরের চিন্তা করা বা কি হলে কি হতে পারে, আমরা কোথায় যেতে পারি এত কিছু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করি নি কখনোই।”

     

     

    “আসল নায়ক আমার খেলোয়াড়রা। তাদের দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস আর নিজেদের দক্ষতার ওপর ভরসা রাখার কারণেই আজ আমরা এখানে। প্রতিটা ম্যাচেই তারা নিজেদের সবটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এজন্যই আমি এদেরকে এত ভালবাসি। আমার খেলোয়াড়রা এই শিরোপার যোগ্য দাবীদার।” নিজের শিষ্যদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে গর্বে বুকটা যেন ইঞ্চিখানেক ফুলে উঠল রানিয়েরির।


    আরো পড়ুনঃ লেস্টারের যে গল্পটা বলা হয় নি...


    “আমাকে রানিয়েরি ফোন করেছিল।” চেলসির ম্যানেজার গাস হিডিংক সাংবাদিকদের জানান। স্টামফোর্ড ব্রিজের ঐ ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার কিছুক্ষণের মাঝেই রানিয়েরি ফোন দিয়ে হিডিংককে ফোন দিয়ে ধন্যবাদ জানান। “রানিয়েরি আমাদের ম্যাচের পারফরম্যান্সের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের খেলার জন্য। আর আমিও তাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানালাম।”

     

    “আমার সাথে কথা বলার সময় সে (রানিয়েরি) পাঁচবার ধন্যবাদ কথাটা উচ্চারণ করেছে। আমি নিশ্চিত সামনাসামনি কথা হলে আমি তার চোখের অশ্রু দেখতে পেতাম, কারণ ফোনে তার গলা কাঁপছিল।”

     

    অবশ্যই হিডিংক, গলা কাঁপাটাই কি স্বাভাবিক নয়? যেই লোকটাকে তাঁর জীবনের একটা দীর্ঘ সময় ধরে মিডিয়া, ফুটবলবোদ্ধা এমনকি তাঁর সহকর্মী ম্যানেজাররা পর্যন্ত ঠাট্টা করতে ছাড়েনি আজ তিনি সকলের ওপরে দাঁড়িয়ে। গলা কাঁপাটাই কী স্বাভাবিক নয় গাস?