নতুন বছরেও পুরোনো ছন্দেই খাওয়াজা !
গতবছর ঠিক এই জানুয়ারিতেই কী দারুণভাবেই না প্রত্যাবর্তনের গল্পটি লিখেছিলেন উসমান খাওয়াজা ! দুই বছরেরও বেশি সময় দলের বাইরে থাকা খাওয়াজাকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজের সিডনি টেস্টে মূল একাদশে ফেরার সুযোগ দিয়েছিল ট্রাভিস হেডের ইনজুরি। সুযোগ পেয়েই নিজেকে নতুনভাবে প্রমাণ করলেন খাওয়াজা, দুই ইনিংসেই করলেন সেঞ্চুরি! চার ইনিংসে ৮৫ গড়ে ২৫৫ রান তোলা এই ব্যাটসম্যান অজিদের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে অ্যাশেজ জয়ে অবদান তো রেখেছিলেনই, পাশাপাশি পাকাপোক্ত করেছিলেন একাদশে নিজের জায়গাটিও!
সেই যে ছন্দে ফেরা, তারপর থেকে যেন আর থামার নাম নেই এই অজি ব্যাটসমানের! পুরনো ক্যালেন্ডারকে সরিয়ে ঘরের দেওয়ালে স্থান করে নিয়েছে নতুন ক্যালেন্ডার, কিন্তু টেস্টের খাওয়াজা আছেন সেই অপ্রতিরোধ্য ছন্দেই! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ টেস্টে প্রায় ডাবল সেঞ্চুরির ( ১৯৫*) এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নতুন বছরকেও সেই পুরনো ছন্দেই আলিঙ্গন করলেন তিনি।
ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়ার পথে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো বোলার নয়, বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন খাওয়াজা নিজেই! ফক্স স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাওয়াজা জানিয়েছেন, বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটিতে নিজেদের পক্ষে ফল আনতে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন তিনি। সেটিও কিনা নিজের ডাবল সেঞ্চুরি থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে থাকতে!
"আমি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে ভালোবাসি। প্রতিটি ম্যাচই আমি দলের জয়ের জন্য খেলি। তাই, শুধু নিজের ডাবল সেঞ্চুরির উদ্দেশ্যে দুই-তিন ওভার খেলতে নামা অবশ্যই ভুল সিদ্ধান্ত হবে" - অজি কাপ্তান প্যাট কামিন্সের কাছে এভাবেই নিজের মতামত প্রকাশ করেন খাওয়াজা !
অবশ্য খাওয়াজার ইচ্ছাপূরণ হয়নি, দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করা অস্ট্রেলিয়াকে শেষ পর্যন্ত ড্রয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। পুরো ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংকে শাসন করা খাওয়াজা পেয়েছেন ম্যাচসেরার স্বীকৃতি। ডাবল সেঞ্চুরি পাননি, তবে গড়েছেন অনন্য সব রেকর্ড।
নিজের ত্রয়োদশ সেঞ্চুরি অর্জনের মাধ্যমে সিডনি ক্রিকেট গ্ৰাউন্ডে সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিকও করে ফেললেন খাওয়াজা। এর আগে এই ভেন্যুতেই টানা তিন সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে শুধু তিনজনের - অস্ট্রেলিয়ার ওয়ালি হ্যামন্ড, ডগ ওয়াল্টার আর ভারতের ভিভিএস লক্ষ্মণের।
পাশাপাশি সিডনিতে নূন্যতম চার টেস্ট সেঞ্চুরি পাওয়া ব্যাটসম্যানদের তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছেন তিনি, যেখানে তাঁর সঙ্গী অস্ট্রেলিয়ার দুই প্রজন্মের দুই সেরা ব্যাটসম্যান - রিকি পন্টিং এবং স্টিভেন স্মিথ। তবে ব্যাটিং গড়ের হিসেবে সকলকে ছাড়িয়ে গেছেন খাওয়াজা, ১৯৫ রানে অপরাজিত থেকে যখন বৃষ্টির কারণে মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন এই মাঠে ব্যাটিং গড় ১৩০.৮৩ !
এ তো গেল শুধু একম্যাচের হিসাব, পুরো ২০২২ জুড়েই একের পরে এক রেকর্ড গড়েছেন খাওয়াজা। ২০২২ পঞ্জিকাবর্ষে টেস্টে সবার আগে এক হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছেছেন তিনি। গত তিন বছরে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন তিনি। ১১টি টেস্টের ২০ ইনিংসে ব্যাট করতে নামা খাওয়াজা ৬৭.৫০ গড়ে করেছেন ১০৮০ রান, এক হালি সেঞ্চুরির পাশে তুলে নিয়েছেন পাঁচটি ফিফটিও। ২০২২ এ টেস্টে সর্বোচ্চ রানসংগ্ৰাহকের তালিকায় খাওয়াজার ওপরে শুধু আছেন শুধু বাবর আযম এবং জো রুট ।
অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন পরবর্তী খাওয়াজার সাথে অতীতের খাওয়াজার যোজন যোজন পার্থক্য কারোরই চোখ এড়াচ্ছে না। এই যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশব মহারাজ ভূয়সী প্রশংসায় ভাসালেন খাওয়াজাকে, "আমি তার বিপক্ষে ২০১৬ আর ২০১৮তেও খেলেছিলাম, কিন্তু এখন সে ভিন্ন ব্যাটসম্যান। সে তাঁর রক্ষণকে খুব ভালোভাবে বিশ্বাস করে, উইকেটের চারপাশে শট খেলতে পারে এবং স্কোর করার সুযোগগুলোকে ভালোভাবেই কাজে লাগাতে পারে। কঠোর পরিশ্রমই তাঁকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।"
৩৬ বছর বয়সকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে স্রেফ সংখ্যা হিসেবে প্রমাণ করা খাওয়াজার খেলা দেখে মুগ্ধ তার সতীর্থ স্টিভেন স্মিথ, "এই মুহূর্তে সে ক্যারিয়ার সেরা পর্যায়ে আছে। সে সুন্দর ব্যাটিং করছে এবং তাঁর ইচ্ছামতোই রান করতে পারছে।"
খাওয়াজা এই 'ইচ্ছামতো রান করা'-র ছন্দ ধরে রাখলে অবশ্য বেশ ভুগতেই হবে বুমরাহ-অশ্বিনদের। ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই যে সিরিজ তাঁদের!