• সিরি আ
  • " />

     

    কেন পয়েন্ট কেড়ে নেওয়া হলো জুভেন্টাসের? এখন কী হবে তাদের?

    কেন পয়েন্ট কেড়ে নেওয়া হলো জুভেন্টাসের? এখন কী হবে তাদের?    

    কদিন আগেই সিরি আ তে যারা ছিল তিন নম্বরে, এক মুহূর্তের সিদ্ধান্তে তারা নেমে গেল দশে। ১৫ পয়েন্ট জরিমানা করা হয়েছে জুভেন্টাসের, বড় শাস্তি বললেও যেটাকে কম বলা হয়। এক ধাক্কায় শিরোপাস্বপ্ন তো বতেই, চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার স্বপ্নও সম্ভবত শেষ হয়ে গেল জুভেন্টাসের। কিন্তু কেন এমন হলো?


    জুভেন্টাসের এমন কেলেংকারি সিরি আতে নতুন কিছু নয়। ২০০৬ সালের সেই কুখ্যাত ক্যালসিওপলির ঘটনা মনে থাকার কথা অনেকের। যখন ম্যাচ পাতানো ও নানা দুর্নীতির কারণে জুভেন্টাসের শিরোপা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, নেমে গিয়েছিল দ্বিতীয় বিভাগে।


    এরপর ধীরে ধীরে আন্দ্রেয়া আগনেলির অধীনে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে জুভেন্টাস। ২০১০ র  পর থেকে তারা আবার নিজেদের আর্থিক অবস্থানটা শক্ত করে। সিরি আর গড় আয় কমলেও স্টেডিয়াম ব্যবস্থাপনা ও বিজনেস মডেল ঠিক করে জুভেন্টাস ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে ইতালির মডেল ক্লাব। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের পর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে এনে চমকে দেয় ফুটবলবিশ্বে।


    কিন্তু প্রদীপের নিচে আঁধারের মতো জুভেন্টাসে চলতে থাকা নানা অনিয়ম। যার অনেক কিছুই বের হয়ে এসেছে ইতালিয়ান পুলিশের সাম্প্রতিক তদন্তে। জুভেন্টাসের এই শাস্তির কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে মূলত দুইটি, দলবদলে খেলোয়াড়দের দাম বাড়িয়ে দেখানো এবং বেতনসহ ক্লাবের অভ্যন্তরীণ আর্থিক হিসেবে গরমিল।


    কাহিনিটা শুরু হয়েছিল গত বছর, যখন ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন জুভেন্টাসসহ একাধিক ক্লাবের বিপক্ষে তদন্ত শুরু করে। জুভেন্টাসের বিপক্ষে অভিযোগ আসে, তারা অন্তত ৩৬টি যুব খেলোয়াড়দের দলবদলের মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়েছে। এই বাড়িয়ে দেখার জন্য তারা বাড়তি রেজিস্ট্রেশন ফি নিজেদের হিসেবে দেখিয়েছে, যেটা আইনত অবৈধ। 

    শুরুর তদন্তে ইতালিয়ান ফেডারেশন জুভেন্টাসকে ছাড় দিলেও ব্যাপারটা গড়ায় ইতালি সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ প্রিজমার কাছে। তারা জোরেশোরেই শুরু করে তদন্ত। এরপর বেরিয়ে আসে ২০২০ সালে কোভিডের সময় অনিয়মের গল্প। জুভেন্টাসের দাবি, কোভিডের সুময় তারা তিন মাস খেলোয়াড়দের বেতন কর্তন করেছে। যেটা আসলে ছিল এক মাস। যার মানে এখানেও একটা গরমিল আছে। এর মধ্যে কোভিড পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা নতুন করে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর মতো বিনিয়োগ নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আছে

    এসব মিলে গত অক্টোবর মাসে পদত্যাগ করে জুভেন্টাসের পুরো বোর্ড। প্রেসিডেন্ট আগনেলি সরে দাঁড়ান, চিফ ফুটবল অফিসার ফাবিও পারাতিসি চলে যান টটেনহামে অদিকে বন্ধ হয়নি তদন্ত। শেষ পর্যন্ত রায় হিসেবে ১৫ পয়েন্ট কেড়ে নেওয়ার শাস্তি ঘোষিত হয়। আগনেলিকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় ইতালিয়ান ফুটবল থেকে, পারিতিচি নিষিদ্ধ হন ৩০ মাসের জন্য। যদিও জুভেন্টাস বলেছে, এই শাস্তির বিপক্ষে তারা আবেদন করবে। এরই মধ্যে আপিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোচ মাসিমিলিয়ানো আল্গেরি বলেছেন, ক্লাবের এই দুঃসময়ে তিনি ক্লাব ছেরে কোথাও যাচ্ছে না। ক্লাব অধিনায়ক লিওনার্দো বনুচ্চি বলেছেন, জুভেন্টাস হচ্ছে নয় মাথাওয়ালা দানব হাইডার মতো। একটি মাথা কেটে দিলে আরেকটি গজাবে, জুভেন্টাসের মাথা কেটে দিইয়েও তাদের থামানো যাবে না।

    তবে সামগ্রিকভাবে জুভেন্টাসের আর্থিক কাঠামো বড় একটা ধাক্কা খেয়েছেই। গত মৌসুমেই তারা ৭৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে নিয়ে এসেছে দুসান ব্লাহোভিচকে। এসেছেন পল পগবা, আনহেল ডি মারিয়া, লিয়ান্দ্রো পারেদেসরা। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে না পারলে বা শিরোপাদৌড়ে থাকতে না পারলে পরের মৌসুমে এদের ধরে রাখা যাবে কি না, সেটাও এখন বড় প্রশ্ন।

    তবে জুভেন্টাস দেখিয়েছে, তারা এর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে জানে। এবার কি সেই গল্পটাই আবার লিখবে জুভেন্টাস?