'আমি সবকিছুই পেয়েছি': বিশ্বকাপের পর প্রথম সাক্ষাৎকারে যা বললেন মেসি
বিশ্বকাপ জয়ের কেটে গেছে দুই মাসেরও বেশি। লিওনেল মেসি অবশেষে বিশ্বকাপের পর দিয়েছেন নিজের প্রথম সাক্ষাৎকার, আর্জেন্টাইন রেডিও আরবান প্লেকে খোলাখুলি বলেছেন নিজের অনেক কথা...
পরিবার নিয়ে
'আমি আমার পরিবারকে বলেছি অবশেষে অনেক কষ্ট, অনেক সময়ের পর সবকিছু শেষ হয়েছে। এমন একটা সময় ছিল যখন জাতীয় দলে আমার সময়টা ভালো কাটেনি। হতাশার অনেক মুহূর্ত এসেছে, কাছে গিয়েও অনেক কিছু হয়নি। আমি অনেক দিক থেকে লম্বা সময় ধরে সমালোচনা শুনে এসেছি। আমি জানি, আমার পরিবারও কমবেশি তা শুনেছে। তারা সবসময় আমাকে দেখাতে চেয়েছে তারা ভালো আছে। তারা মানসিকভাবে শক্ত আছে। তবে ভেতরে ভেতরেও তারা অনেক কষ্ট পাচ্ছিল। কারণটা শুধু আমি পারিনি বলেই নয়, আমাকে এমনকি ফুটবলের বাইরেও যেসব অপ্রিয় কথা শুনতে হয়েছে সেসবের জন্যও। এই ব্যাপারটা আমাকে অনেক বেশি আহত করেছিল। এরপর তো আমরা বৃত্তটা পূরণ করেছি। আমরা বিশ্বকাপ জিতেছি, কোপা আমেরিকা জিতেছি। এরপর আর কিছু বলার নেই।
সৌদি আরবের সাথে ম্যাচের পর মাতেও অংক কষে হিসাব করছিল আমরা পরের পর্বে যেতে পারব কি না। নেদারল্যান্ডসের সাথে জয়ের পর থিয়াগো কান্না করে দিয়েছিল। ওরা আর্জেন্টাইন ফ্যান হিসেবে বড় হচ্ছে, পুরোদমে উপভোগ করছে।
ফাইনালের পর কী মনে হচ্ছিল
ওই সময় কী মনে হচ্ছিল সেটা আসলে আমার জন্য বোঝানো কঠিন। পরিবারের সাথে দেখা হওয়ার আগে অনেক কিছুই আমার মনে হচ্ছিল, আবার কিছুই মনে হচ্ছিল না। যেন আমি আমার মাঝে আর নেই। ওই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আমি তখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, শেষ পর্যন্ত এটা আমি করতে পেরেছি।
আমি আবারও বলছি ওই সময় কী হয়েছে সেটা গুছিয়ে ব্যাখ্যা করা আমার জন্য খুব কঠিন। অনুভূতিটা আসলে সব পেয়েছিরই, জাতীয় দলের হয়ে সবকিছুই হয়ে গেছে আমার। ক্যারিয়ারে আর কিছুই পাওয়ার নেই। ব্যক্তিগতভাবে বার্সেলোনাতেই আমি সবকিছু পেয়েছিলাম। যখন আমি শুরু করেছিলাম তখন ভাবিনি এমন কিছু পাব। এটা আসলেই সোনায় সোহাগা যেটা বলে। আর যখন বিশ্বকাপ ট্রফিটা হাতে নেওয়ার সময় হলো, তখন মনে হচ্ছিল কাপটা যেন আমাকে বলছে, এবার তুমি আমাকে ছুঁয়ে দেখতে পার।
মন্টিয়েলের পেনাল্টির আগে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ঈশ্বরকে বলছিলাম, আমি তো পুরো ক্যারিয়ারেই তাকে সাথে পেয়েছি। এখন আমার আর কোনো দুঃখ নেই। আমি কিন্তু পুরো ফাইনালটা এরপর আর দেখিনি। কিছু হাইলাইটস, কিছু ক্লিপ দেখেছি, কিন্তু পুরো ম্যাচটা দেখা হয়নি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফাইনালের পর আমার ইন্সটাগ্রামে এত মেসেজ আসা শুরু করল, অ্যাকাউন্টই ব্লক হয়ে যায়। হোয়াটসঅ্যাপও মেসেজের জন্য ফ্রিজ হয়ে যায়। লাখ কোটির মতো মেসেজ এসেছিল। আমি জানতাম না আমার ছবিটা ইনস্টাগ্রামে সবচেয়ে বেশি লাইক পেয়েছে, তবে বুঝতে পেরেছি মানুষ বিশ্বকাপ হাতে আমাকে দেখতে চায়। আর আমার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট কিন্তু আমি নিজেই চালাই, কোনো কোম্পানি বা ম্যানেজার নয়।
ডিয়েগো বেঁচে থাকলে তিনিই কাপটা আমাকে দিতেন। এটা খুব সুন্দর একটা ছবি হতো। আমার মনে হয় আমি ওপর থেকে ডিয়েগো ও আরও অনেকের শুভকামনা পেয়েছি, যে কারণে কাপটা আমাদের হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে
হ্যাঁ, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আমার টিমমেটরা বলেছিল ওরা আমাদের নিয়ে ম্যাচের আগে কী বলেছে। প্রতিক্রিয়াটা আসলে ওজন্যই। আমি আসলে ওই ব্যাপারটা (ম্যাচশেষে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলা) মনে রাখতে চাই না, কিন্তু সেটা সহজাতভাবেই চলে এসেছিল। অনেক নার্ভাস ছিলাম সেসময়।
সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ?
আমার কাছে মনে হয়, বিশ্বকাপে মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল আমাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। কারণ ওই ম্যাচের আগে আমাদের পিঠ ছিল দেয়ালে। সব ম্যাচের আগে আমাদের প্রস্তুতি ছিল ভালো, এজন্য প্রতিপক্ষের চেয়ে আমরা এগিয়ে ছিলাম।
কোচিং স্টাফ নিয়ে
আমাদের কোচিং স্টাফ এক কথায় দুর্দান্ত। অনেকেই সাবেক ফুটবলার। আমাদের সাথে সকল চড়াই-উৎরাই তারা পেরিয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী তারা কাজ করতে জানে। বিশ্বকাপের পূর্ব অভিজ্ঞতা তাদের আছে, তাই ভালোমতোই জানত কখন কী করতে হবে বা বলতে হবে।
নিজেকে যা বলব...
আমি তরুণ মেসিকে পেলে বলতাম, কখনো তোমার স্বপ্নের পেছনে ছোটা বন্ধ করে দিও না। কারণ দিন শেষে তার জন্য ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে।