চ্যাম্পিয়নস লিগে ফেবারিট কই?
এসে গেছে আরেকটি চ্যাম্পিয়নস লিগ। ভালোবাসা দিবসেই শুরু হয়ে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ১৬ এর লড়াই। এই পর্বে অবশ্যই নজর থাকবে দুইটি হেভিওয়েট ম্যাচের দিকে। গত তিন ফাইনালের দুটিই যে এবার হয়ে যাচ্ছে এই পর্বে! পিএসজির মুখোমুখি ২০২০ এর চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন আর গতবারের দুই ফাইনালিস্ট লিভারপুল ও রিয়াল মাদ্রিদ এবার মুখোমুখি। কিন্তু এবার কি সত্যিই কোনো ফেবারিট আছে?
পিএসজি দিয়েই শুরু করা যাক। প্যারিসের এই ক্লাবটি এই বছরের শুরু থেকেই যেন কিছুটা দিশাহারা। এই মৌসুমে ডিসেম্বরের আগে তারা কোনো ম্যাচ হারেনি। সেই তারাই এই বছর দশটি ম্যাচের মধ্যে হেরেছে চারটিতে। এই সপ্তাহেই তারা হেরেছে মোনাকোর কাছে, হারের পর আবার সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন কিমপেম্বে।
বায়ার্নের বিপক্ষে পিএজসির হয়ে নামতে পারছেন না এমবাপে। সংশয় আছে মেসির ফিটনেস নিয়েও। পিএসজির শংকার জায়গা মধ্যমাঠ, সেখানে এখন ভরসা ২০ বছর বয়সী হুগো একটিকে। ফ্রেঞ্চ লিগে এখনো সবার ওপরে থাকলেও তাদের ঠিক চ্যাম্পিয়নদের মতো লাগছে না। ভোগাতে পারে ভেরাত্তির চোটও।
বায়ার্নও যে খুব ভালো অবস্থায় আছে সেটাও বলা যাবে না। বুন্দেসলিগায় তারাই সবার ওপরে, কিন্তু সববারের মতো এবার অজেয় নয়। সর্বশেষ তিন ম্যাচ জিতেছে বটে, কিন্তু তার আগে এই বছরে টানা তিন ম্যাচ টানা ড্র করেছিল। এই চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলাই লাইপজিগ ও ফ্রাংকফুর্ট ঠেকিয়ে দিয়েছে বায়ার্নকে। চোটের সমস্যা আছে তাদেরও। এবারের আসরেই আর খেলতে পারবেন না নয়্যার, লুকাস হার্নান্দেজ। নেই সাদিও মানে, গোল করার লোকটা খুঁজে বের করতে কষ্ট হতে পারে বায়ার্নের।
কাগজে কলমে ম্যানচেস্টার সিটি এবার অন্যতম ফেবারিট। কিন্তু সিটির ফর্মও ঠিক সুবিধের নয়। প্রিমিয়ার লিগে কদিন আগেই তারা হেরেছে টটেনহামের কাছে। বিদায় নিয়েছে লিগ কাপ থেকে। চ্যাম্পিয়িনস লিগে গ্রুপ পর্বে তারা চার অপরাজিত দলের একটি। তবে চোটের সমস্যা আছে তাদেরও, তার ওপর ফুলব্যাক পজিশন নিয়েও ঠিক স্বস্তিতে নেই গার্দিওলা। এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফিটা বেশি করেই চাইবেন, কিন্তু গত বেশ কয়েকবার সেটা কাছাকাছি এসেও ফস্কে গেছে তার।
লিভারপুলের মৌসুমটা গত বছরের চেয়ে এবার একেবারেই অন্যরকম। গতবারের ফাইনালিস্ট লিভারপুলের ছিল কোয়াড্রপল জেতার হাতছানি। এবার লিভারপুল শিরোপা দূরের কথা, দশের মধ্যে থাকতেই হিমশিম খাচ্ছে। স্মরণকালের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন ক্লপ। ফর্মে নেই সালাহ, নুনেজ থেকে কেউই। চোটের জন্য ভ্যান ডাইক, জোতা, ফিরমিনোদের না থাকা চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে তাদের। গ্রুপ পর্বে নাপোলির কাছে হার বাদ দিলে সব ম্যাচেই জিতেছে লিভারপুল।
রিয়াল মাদ্রিদের নিজেদের অবস্থাও সুবিধের নয়। এই সপ্তাহেই হারতে হয়েছে মায়োর্কার সাথে। লিগে এর মধ্যেই বার্সেলোনার চেয়ে তারা পিছিয়ে ১১ পয়েন্টে। ক্রুস, মদ্রিচদের খেলায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট, গতবারের তুরুপের তাস বেনজেমা এবার লড়াই করছেন চোটের সাথে। এই চোটের থাবায় কামাভিঙ্গা মেকশিফট লেফটব্যাক হিসেবে খেলাতে হচ্ছে। গতবার সহজেই লিগ জেতা রিয়ালের এবারের ফর্মটা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে অনেক।
প্রিমিয়ার লিগের আরেক ক্লাব চেলসির অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। লিগের প্রথম দশে থাকতেই হিমশিম খাচ্ছে দুইবছর আগের চ্যাম্পিয়নরা। গ্রাহাম পটারের দল জানুয়ারিতে বিস্তর টাকাপয়সা খরচ করে নিয়ে এসেছে এঞ্জো ফার্নান্দেজ, মিকাল মুদ্রিক, জোয়াও ফেলিক্সদের। কিন্তু মাঠে এখনো কিছু করতে পারছে না তারা। গ্রুপ পর্বে চেলসির হয়ে মাঠে সবচেয়ে বেশি সময় থাকা স্টার্লিং ইনজুড়ড আর জর্জিনহো ছেড়ে গেছেন ক্লাব।তবে চেলসির ডিফেন্স ভালো করছে, যেটা কাজে আসতে পারে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো টুর্নামেন্টে।
এবার সারপ্রাইজ অ্যাকেজ হতে পারে নাপোলি। গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে বেশি গোল তাদের, সবচেয়ে বেশি গোলের সৃষ্টিও করেছে তারা। শেষ ১৬তে তারাই সম্ববত সবচেয়ে ইনফর্ম দল। ওসিমহেন, কার্ভাতস্কেলিয়া, লোজানো, জিলেনস্কিদের দল এর মধ্যেই সিরি আতে শিরোপাদৌড়ে অনেকটা ব্যবধানে এগিয়ে আছে। শেষ ১৬তে তাদের প্রতিপক্ষ ফ্রাংকফুর্ট, বড় কিছুর স্বপ্ন তারা দেখতেই পারে।