• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    অ্যানফিল্ডে নরকের স্বাদ পেল রেড ডেভিলরা

    অ্যানফিল্ডে নরকের স্বাদ পেল রেড ডেভিলরা    

    লিভারপুল ৭:০ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড


    ১০ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে অ্যানফিল্ডে এসেছিল এরিক টেন হাগের দল। বলা হচ্ছিল, ফার্গি-পরবর্তী যুগের সবচেয়ে সফল মৌসুম পার করছে ম্যান ইউনাইটেড। আর ক্লপ যুগের সবচেয়ে বাজে মৌসুম পার করছে লিভারপুল। কিন্তু রণক্ষেত্রের উত্তাপ এনে দেওয়া অ্যানফিল্ডে আরও একবার সব হিসাব-নিকাশ পণ্ড করে দিল অলরেডরা। সালাহ-গাকপো-নুনেজদের অতর্কিত আক্রমণের সামনে গুঁড়িয়ে গেল টেন হাগের ইউনাইটেড। দ্বিতীয়ার্ধের ঝড়ে ৭-০ গোলের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে স্বাগতিকরা, যা তাদের ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয়।   

    দিনের শুরুতে এই ফলাফল কেউ হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি। নিউক্যাসলের বিপক্ষে কারাবাও কাপের ফাইনাল জেতা একাদশ নিয়েই মাঠে নেমেছিল ইউনাইটেড। তবে আজ একাদশে কিছু ট্যাকটিকাল পরিবর্তন আনেন টেন হাগ। ভট ভেগহর্স্টকে নাম্বার টেন হিসেবে খেলিয়ে মার্কাস রাশফোর্ডকে দেন সেন্টার ফরওয়ার্ডের দায়িত্ব। আর ব্রুনো ফার্নান্দেজ নেন রাইট উইংয়ের দখল। এই ফরমেশন ঠিক কাজে লাগেনি রেড ডেভিলদের। প্রথমার্ধের একটি বড় সময় বলই পাননি ইউনাইটেডের সবচেয়ে ইন-ফর্ম খেলোয়াড় রাশফোর্ড। এই অর্ধে ইউনাইটেডের সবচেয়ে বড় সুযোগটি পান ফার্নান্দেজ। রাইট উইং দিয়ে বক্সে ঢুঁকে দালোতের ক্রসে হেড করেছিলেন ব্রুনো। কিন্তু তা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। রাশফোর্ড নিজেও লুক শয়ের ক্রস থেকে আসা একটি সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। দিনে ইউনাইটেডের হাইলাইটস বলতে এই দুটি আক্রমণই। বাকি পুরো ম্যাচই লিভারপুলের। 

    ম্যাচের শুরুতেই কাউন্টার প্রেসকে কাজে লাগিয়ে ইউনাইটেডের উপর চড়াও হয় লিভারপুল। কিন্তু শুরুতে নিজেদের মধ্যে বুঝাপড়াটা ঠিক গড়ে তুলতে পারছিল না সালাহ-গাকপো-নুনেজের ফ্রন্ট থ্রি। তবে একসময় তাদের ক্রমাগত পজিশন পরিবর্তনের ফাঁদে পড়ে পা হড়কায় ইউনাইটেড। বিরতির দুই মিনিট আগে বাঁ পাশ থেকে রাইট উইং বরাবর থ্রু বল খেলেন অ্যান্ডি রবার্টসন। সেন্টার ফরওয়ার্ড পজিশন থেকে রাইট উইংয়ে চলে আসা গাকপোকে ট্র্যাক করতে ভুল করেন ফ্রেড। আর সেই সুযোগে বক্সে ঢুঁকে ফার পোস্টে শট নিয়ে বসেন গাকপো। বিরতির আগে লিভারপুলকে দেন ১-০ গোলের লিড। 

    প্রথমার্ধে খেলা প্রায় সমান সমান চললেও বিরতির পর ইউনাইটেডকে রক্ষণকে হরর সিনেমার স্বাদ দেন লিভারপুলের ফরওয়ার্ডরা। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিট থেকে ইউনাইটেডের উপর চড়াও হয় স্বাগতিকরা। তাদের আক্রমণাত্মক প্রেসিংয়ের সামনে বার বার বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউনাইটেড ৪৭ মিনিটেই গোল খেয়ে বসে। বক্সের ভেতর হার্ভি এলিয়টের ক্রসে হেড করে গোল করেন ডারউইন নুনেজ। 

    আড়াই মিনিটের মধ্যে আবার গোল করে লিভারপুল। এবার রাইট উইং দিয়ে বল নিয়ে উঠেন সালাহ। সম্মোহনী ড্রিবলিংয়ে লিসান্দ্রো মার্টিনেজকে মাটিতে লুটোপুটি খাইয়ে বক্সে বল পাঠান সালাহ। প্রায় অসম্ভব এক অ্যাঙ্গেল থেকে ডি হেয়াকে ডিংক করে বল জালে জড়ান গাকপো। 

    বরাবরের মতোই ইউনাইটেডকে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা নেওয়া সালাহ স্কোরশিটে তার নাম তুলেন ম্যাচের ৬৬তম মিনিটে। এবার ম্যাকটমিনের গায়ে ডিফ্লেক্টেড হয়ে আসা বল বক্সের ভেতর জায়গামতো পেয়ে যান সালাহ। তার বুলেটগতির শট ক্রসবারে লেগে জালে জড়ায়। 

    গত মৌসুমেই ইউনাইটেডকে ৫-০ ও ৪-০ গোলের দুটি শোচনীয় পরাজয় উপহার দেওয়া লিভারপুল এদিন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর একেবারেই সদয় হওয়ার চেষ্টা করেনি। গত মৌসুমে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ৬০ মিনিটের মাথায় ৫-০ হয়ে যাওয়ার পর খেলার গতি কমিয়ে এনেছিল লিভারপুল। কিন্তু এবার শেষ মিনিট পর্যন্ত গোল দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা।   

    ফলশ্রুতিতে গাকপোর মতো জোড়া গোল পেয়েছেন নুনেজ ও সালাহও। স্কোরশিটে নাম লিখিয়েছেন শেষদিকে বদলি নামা রবার্তো ফিরমিনোও। ৭-০ গোলের এই জয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে লিভারপুলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়। নিঃসন্দেহে, অ্যানফিল্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচগুলোর মধ্যেও একটি এটি।