'সুপার সাকিব'-এ চড়ে শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়
৩য় ওয়ানডে, চট্টগ্রাম (টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
বাংলাদেশ- ২৪৬, ৪৮.৪ ওভার (সাকিব ৭৫, মুশফিক ৭০, শান্ত ৫৩, আর্চার ৩/৩৫, রশিদ ২/২১, কারান ২/৫১)
ইংল্যান্ড- ১৯৬, ৪৩.১ ওভার (ভিন্স ৩৮, সল্ট ৩৫, বাটলার ২৬, সাকিব ৪/৩৫, এবাদত ২/৩৮, তাইজুল ২/৫২)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৫০ রানে জয়ী
জয় দিয়েই সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানে, মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটির পরেও বাংলাদেশের সংগ্রহ হয়েছিল আড়াইশো-ছুঁইছুঁই। সেখান থেকেই সাকিবের দুর্দান্ত স্পেলের সাথে তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসেনদের সময়োপযোগী স্পেলে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই সাথে রেকর্ড বই এলোমেলো করে সাকিব বেশ কিছু রেকর্ড একান্তই নিজের করে নিয়েছেন।
২৪৭ রানের লক্ষ্যে দুই ওপেনার ফিল সল্ট ও জেসন রয় অনায়াসেই পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলার পরে হুট করেই নবম ও দশম ওভারে বাংলাদেশ ফেরায় দুজনকেই। ৩৫ রানের দারুণ এক ইনিংস শেষে সাকিবের নিরীহ এক বলে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ দিয়ে সল্ট ফেরার পরের ওভারেই ডাভিড মালানও থতমত খেয়ে যান এবাদতের লেংথে, মিড অনে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ দিয়ে ফেরেন তিনিও। খুনের ঘ্রাণ পেয়ে সেখান থেকেই বাঘের মত জেগে উঠেন সাকিব, পরের ওভারের প্রথম বলেই উপড়ে ফেলেন রয়ের স্টাম্প। সেখান থেকে পাচে পাঠানো স্যাম কারানকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজটা ভালভাবেই করছিলেন জেমস ভিন্স। ২২তম ওভারে দুজনে মিলে দলকে শতরানের নিয়ে যাওয়ার পর দুজনেই গিয়ার পালটানোর সুযোগ খুঁজতে থাকেন। সেটার সুযোগ নিয়েই কারানকে ২৩ রানে লং অনে মুঠোবন্দি করেন মিরাজ।
কারান ফেরার পরেই আবারও দৃশ্যপটে সাকিবের প্রত্যাবর্তন। দারুণ খেলতে থাকা ভিন্সকে বাকরুদ্ধ করে দারুণ এক অফ ব্রেকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করেন সাকিব, ৩৮ রানে। পরের ওভারে পায়ের ওপর দারুণ ইয়র্কারে এবাদত উপড়ে ফেলেন মঈনের স্টাম্প। তার কিছুক্ষণ পরেই তাইজুলকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ২৬ রানে ফেরেন অধিনায়ক জস বাটলার। জয় তখন আসন্নই মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য। ক্রিস ওকস সেখানে বাঁধ সাধলেও অন্য প্রান্তে একে একে উইকেট শিকারের মিছিলে নেমে পড়ে বাংলাদেশ। দারুণ এক আন্ডারকাটারে রশিদের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তাইজুল, তার কিছুক্ষণ পরেই মিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে সাকিবের শিকার হয়ে ফেরেন রেহান। সেই সাথে প্রথম বাংলাদশি হিসেবে ৩০০ ওয়ানডে উইকেট পাওয়ার পাশাপাশি ওয়ানডে ইতিহাসের মাত্র ৩য় অলরাউন্ডার হিসেবে ৬০০০ রান ও ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। পরের ওভারেই মোস্তাফিজকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ওকস ফিরলে সেখানেই নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে শুরুটা মোটেও ভাল হয়নি বাংলাদেশের। স্যাম কারানের জোড়া আঘাতে তৃতীয় ওভারের মাথায় ফিরে যান দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। সেখান থেকে ইনিংস মেরামতের উদ্দেশ্যে পরিস্থিতি বুঝে জুটি গড়েন মুশফিক-শান্ত। দুজনে মিলে ২২তম ওভারে দলীয় শতরান পূর্ণ করার এক ওভার পরেই শান্ত পেয়ে যান ওয়ানডে ক্যারিয়ার ও এই সিরিজের দ্বিতীয় ফিফটি, ৬৯ বলে। পরের ওভারেই অবশ্য মুশফিকের সাথে ভুল বোঝাবুঝির মাশুল দিয়ে শান্ত ফেরেন ৭১ বলে ৫৩ রানের ইনিংস শেষে; সেই সাথে ভাঙে ৯৮ রানের মূল্যবান জুটি। তার এক বল পরেই অবশ্য ৬৯ বলে মুশফিক পেয়ে যান ৫১তম ওয়ানডে ফিফটি।
সেখান থেকে সাকিবকে নিয়ে নিজের ইনিংস লম্বা করার পথে হাঁটলেও সুযোগটা নিতে পারেননি মুশফিক। আদিল রশিদের গুগলি ধরতে না পেরে সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্প খোয়ান, ফেরেন ৯৩ বলে ৭০ রানের ইনিংস শেষে। ইনিংসের বাকি গল্পটা বলতে গেলে সাকিবর লড়াইয়ের। রশিদের পরের ওভারেই তাকে ছয় মারার পরের বলে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ। ৪২তম ওভারে দলীয় ২০০ রান পূর্ণ হওয়ার পরের ওভারে ৫৫ বলে সাকিব পান সিরিজের টানা দ্বিতীয় ফিফটি। তবে ঠিক পরের বলেই ওকসের শিকার হয়ে ১৫ রানে আফিফ ফেরার পরের ওভারে রেহাম আহমেদ পেয়ে যান তার প্রথম ওয়ানডে উইকেটের দেখা, মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে। সাকিবকে সঙ্গ দিতে না পেরে তাইজুল ইসলাম ফেরেন আর্চারের শিকার হয়ে। ৪৯তম ওভারে রয়ের দারুণ ক্যাচে সাকিবের ৭১ বলে ৭৫ রানের ইনিংসের অবসান হলে তার পরের বলেই মোস্তাফিজকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে ফেলেন আর্চার। তবে সেই সংগ্রহ নিয়ে দিনশেষে বাংলাদেশ হেসেছে জয়ের হাসি।