রেকর্ডময় রাতে আইরিশদের নিয়ে বাংলাদেশের ছেলেখেলা
১ম ওয়ানডে, সিলেট (টস-বাংলাদেশ/বোলিং)
বাংলাদেশ- ৩৩৮/৮, ৫০ ওভার (সাকিব ৯৩, হৃদয় ৯২, মুশফিক ৪৪, হিউম ৪/৬০, ম্যাকব্রাইন ১/৪৭, ক্যাম্ফার ১/৫৬)
আয়ারল্যান্ড- ১৫৫, ৩০.৫ ওভার (ডকরেল ৪৫, ডহেনি ৩৪, স্টার্লিং ২২, এবাদত ৪/৪২, নাসুম ৩/৪৩, তাসকিন ২/১৫)
ফলাফল: বাংলাদেশ ১৮৩ রানে জয়ী
আয়ারলান্ডকে গুড়িয়ে দিয়ে রেকর্ড বই ঢেলে সাজাল বাংলাদেশ। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংগ্রহ পাওয়ার পর এবাদত হোসেন, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদদের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয় পেল বাংলাদেশ।
৩৩৯ রানের লক্ষ্যে প্রথম পাওয়ারপ্লেটা অবশ্য কোনও উইকেট না হারিয়েই কাটিয়ে দিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। তবে ১২তম ওভারে সাকিবই এনে দেন প্রথম ব্রেকথ্রু। উইকেটের পেছনে ৩৪ রানে থাকা স্টিফেন ডহেনিকে তালুবন্দি করে মুশফিকও সেখান থেকে শুরু করেন তার এক ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের (৫) রেকর্ডের যাত্রা; যেই রেকর্ড আগে ছিল তার নিজেরই ও খালেদ মাসুদের। পরের ওভারেই ২২ রানে থাকা পল স্টার্লিংকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করলেন এবাদত। এরপরেই যেন তাসের ঘরের মত লুটিয়ে পড়ল আয়ারল্যান্ড।
১৭.১ ওভারেই বড় লক্ষ্য তাড়ায় আয়ারল্যান্ডের নামের পাশে ৭৬ রান উঠতেই নেই ৫ উইকেট! তাসকিনের দুর্দান্ত ওপেনিং স্পেল, এবাদতের গতিময়তার সাথে খাপ খাওয়ানোর আগেই মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এল নাসুমের ঘূর্ণি। মাঝে জর্জ ডকরেল একাই লড়লেন। তবে তাতে আর লাভ হল কোথায়! ৩০.৫ ওভারেই গুটিয়ে গেল আয়ারল্যান্ড। ৪৫ রানে থাকা ডকরেলের স্টাম্প উপড়ে তুলির শেষ আঁচড়টা দিলেন এবাদতই। বাংলাদেশ তাই সিরিজটা শুরু করল হেসেঅভারেই!
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ ব্যাটিং পাওয়ারপ্লের মধ্যেই দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে শুরুটা ভালই করেছিল আয়ারল্যান্ড। তৃতীয় ওভারেই মাত্র ৩ রানে তামিম ইকবাল ফেরার পর লিটন দাস স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকলেও দশম ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে কাভারে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ৩১ বলে ২৬ রান শেষে থেমেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই ইনিংসের দায়িত্ব বুঝে নেন সাকিব; সাথে তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
প্রথম দিকে সাকিব বেশ নড়বড়ে থাকলেও শান্ত অন্য প্রান্তে উইকেট বুঝেই খেলার চেষ্টা করছিলেন। তবে ১৭তম ওভারে হুট করেই মনোযোগ হারিয়ে ম্যাকব্রাইনের বলে স্টাম্প খুইয়ে বসেন ৩৪ বলে ২৫ রানে থাকা শান্ত। এরপর পাঁচে নেমেই অভিষিক্ত হৃদয় যেন ভয়ডরহীন ক্রিকেটের বার্তাই দেন। তার সাথে থাকা সাকিব ২৪ রানে থেকে সেই সাথে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ছুঁয়ে ফেলেন ৭০০০ ওয়ানডে রানের মাইলফলক। সেখান থেকেই ৬৫ বলে সাকিব পেয়ে যান নিজের ৫৩তম ওয়ানডে ফিফটির দেখা। ইনিংসে গিয়ার পাল্টান সেখান থেকেই। টেক্টরের করা ৩৫তম ওভার থেকে ৫টি চারে সাকিব নেন ২২ রান! সাকিবের উৎসাহে হৃদয় নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটি পেয়ে যান ৫৫ বলে।
৩৮তম ওভারে এসে সেই আক্রমণের ধারা বজায় রাখতে গিয়ে সাকিব ফেরেন ৮৯ বলে ৯৩ রান শেষে হিউমের শিকার হয়ে; ভাঙে ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি। ফুল লেংথের সেই বল খেলতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে নিজের কাল ডেকে আনলে অন্য প্রান্তে থাকা হৃদয় এগিয়ে যান সেঞ্চুরির দিকে। উইকেটে এসেই ঝড় তুলে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মুশফিক। তবে দুজনেই আশাহত হয়ে ফেরেন মাইলফলকের কাছে গিয়েই। হিউমের শিকার হয়ে ২৬ বলে ৪৪ রান শেষে মুশফিক ফেরার পর এক বলের মধ্যেই দারুণ এক ইয়র্কারে স্টাম্প খুইয়ে ৮৫ বলে ৯২ রান শেষ থামেন হৃদয়। শেষদিকে হিউম দারুণ বল করলেও নাসুম আহমেদের ৭ বলে ১১* রানে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৩৩৮ রানের বিশাল সংগ্রহ; দিনশেষে যেটা আইরিশদের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশি বোলাররা।