লেগ স্পিনারের জন্য হাথুরুর হাহাকার : লিখন-তানবীরদের পর কোন পথে হাঁটবেন রিশাদ?
বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দফায় চান্ডিকা হাথুরুসিংহে দলের খোলনলচে বদলে দেওয়ার একটা চেষ্টা করেছিলেন। সেই চেষ্টার ব্যত্যয় ঘটবে না এবারও। তার প্রমাণ হিসেবেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দেখা মিলেছিল বিপিএলের পারফরমারদের। তবে এবারে আয়ারল্যান্ড সিরিজের টি-টোয়েন্টি দলে যেন চমক দেখালেন। স্কোয়াডে জাকের আলীর সাথে ডাক পেয়েছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।
হাথুরু অবশ্য আগের দফাতেও একজন লেগ স্পিনারের জন্য হাহাকার করে গিয়েছেন। হারিকেন দিয়েই যেন বাংলাদেশের ঘরোয়া লেগ খুঁজে বের করেছিলেন জুবায়ের হোসেন লিখন ও তানবীর হায়দারকে। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ড সফরে তানবীর হায়দারকে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে সেবার শোরগোল কম হয়নি।
ঘটনা যাই হোক, দলে বিশেষ করে সাদা বলে একজন লেগ স্পিনারের জন্য হাথুরু ছিলেন বেশ সোচ্চার। তারই পরিক্রমায় এবার দলে রিশাদ। কেন বলা হচ্ছে হাথুরুর জন্যই দলে রিশাদ? সেটা বুঝতে একটা পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। ২০২১ সালের জুনের পর সাদা বলে ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনও ম্যাচই খেলেননি রিশাদ। তা সত্ত্বেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষিক্ত তানভীর ইসলামকে বাদ দিয়ে স্কোয়াডে ডাকা হল রিশাদকে। এর আগে সংবাদ সম্মেলনেও হাথুরু বলেছিলেন সংক্ষিপ্ত সংস্করণে একজন লেগ স্পিনারের প্রয়োজনীয়তার কথা। তারই পরিক্রমায় দলে রিশাদ।তবে রিশাদকে নিয়ে শুরুতেই আশা বাঁধাটাও হয়তো চরম আশাবাদীদের দ্বারাই সম্ভব। এক্ষেত্রে আশা রাখাটা কতটা কঠিন সেটা বুঝতে ফিরতে হবে সেই দুই লেগ স্পিনারের পরিণতির দিকে।
জুবায়ের হোসেন লিখন
ডাকটা পেয়েছিলেন হাথুরুর কল্যাণেই। ২০১৪ সালের অক্টোবরে যখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামলেন তখনই হয়ে গেলেন বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার। নবম বলেই উইকেট তো পেলেনই, ওই সিরিজেও পেলেন ১১ উইকেট। খুলনায় দ্বিতীয় টেস্টটাতে পেয়েছিলেন ৫-উইকেটও। এরপর ভারতের বিপক্ষে ভিরাট কোহলিকে জেই গুগলিতে বোকা বানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের কট্টর ভক্তদের হৃদয়ে বহু দিন সেটা গেঁথে থাকার কথা।
তবে যেভাবে ক্যারিয়ারটা শুরু করেছিলেন, ক্রিকেটের মহাকাশে মিলিয়ে গিয়েছেন ঠিক ততটাই দ্রুততার সাথে। ফলাফল ২০১৫ সালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার দেখা না মেলা। ৬ টেস্টে ১৬ উইকেট, ৩ ওয়ানডেতে ৪ উইকেট, ১ টি-টোয়েন্টিতে ২ উইকেট: বাংলাদেশের হয়ে ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান থেমে গিয়েছে এখানেই।
তানবীর হায়দার
ঘরোয়া ক্রিকেটে নামডাক থাকলেও রাতারাতি জাতীয় দলে ঢুকে যাওয়ার মত স্পিনার তানবীর ছিলেন কি না সেটা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। মূলত তিনি ছিলেন অলরাউন্ডার। ২০১৩-১৪ মৌসুমে প্রথম বিভাগে ৪০০+ রান করার পর তখন থেকেই ব্যাটিংয়ে বেশি মনোনিবেশ করলেন। ফলস্বরূপ বোলিংয়ের ধারটা ক্রমশই কমতে লাগল। এমনকি যখন ডাক পেলেন বাংলাদশ দলে তার আগের ২০১৫-১৬ মৌসুমেও ৪০০+ রান করলেও বল হাতে সাদামাটা এক মৌসুম কাটিয়েছিলেন তানবীর। তবে ইংল্যান্ড সিরিজের আগে চার দিনের এক প্রস্তুতি ম্যাচে চার জন ইংলিশ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়েছিলেন; যার মধ্যে ছিলেন জো রুট। হন্যে হয়ে লেগ স্পিনার খুঁজতে থাকা হাথুরুর মন গলে গেল সেখানেই। সেবার স্কোয়াডে ডাকও পেয়েছিলেন। তবে অভিষেকটা হয়েছিল ২০১৬ সালের নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডেতে। ২টি ওয়ানডে খেলে উইকেট পাননি একটিও। বাংলাদশের জার্সি গায়ে এরপর আর মাঠেও নামা হয়নি।
এখানে প্রশ্ন তোলা যায় যে, তানবীর বা লিখন হয়তো সেই মাপের স্পিনার ছিলেন না। হয়ত রিশাদ অন্য মাপের স্পিনার। তবে লিখনের ক্যারিয়ারের গতিপথ থেকেই কিছুটা অনুমান করা যায় বাংলাদেশের লেগ স্পিনারদের চর্চা নিয়ে। লিখন জাতীয় দলে নজর কাড়ার পর তার যত্ন নেওয়ার বিষয়ে বেশ জোর দিয়েছিলেন হাথুরু। ঘরোয়াতেও তাকে বেশ হাকডাক দিয়েই দলে নিয়েছিল আবাহনী। তবে সেটা যেন লিখনের জন্য হিতে বিপরীত হয়ে এসেছিল। রান গুণতে শুরু করায় আসরের মাঝ থেকেই তাকে আর দলে নেওয়া হয়নি। এরপর তো ২০১৫ বিপিএলে দলটাই পেলেন না। ফল স্বরূপ বাংলাদশের ক্রিকেটের মানচিত্র থেকে অকালেই হারিয়ে গেলেন তিনি।
রিশাদকে নিয়েও চিন্তা এখানেই। বাংলাদেশের ঘরোয়াতে লেগ স্পিনারদের চর্চার অবকাশ নেই। লেগ স্পিনার রান গুণবে - এটা এখনও বাংলাদশের ঘরোয়ার ক্রিকেটের হর্তাকর্তাদের মগজে এখনও ঢোকেনি। হাথুরু তাই লেগ স্পিনার চাইলেও বাংলাদশের ঘরোয়ার পরিস্থিতি এখনও যে লেগ স্পিনারদের জন্য অনুকূল হয়নি সেটা বলাই বাহুল্য।