লিটনে লন্ডভন্ড আইরিশদের ওপর পরে ছড়ি ঘোরালেন অলরাউন্ডার সাকিব
২য় টি-টোয়েন্টি, চট্টগ্রাম (টস-আয়ারল্যান্ড/বোলিং)
বাংলাদেশ- ২০২/৩, ১৭(১৭) ওভার (লিটন ৮৩, রনি ৪৪, সাকিব ৩৮*, ওয়াইট ২/২৮, অ্যাডেয়ার ১/৫২)
আয়ারল্যান্ড- ১২৫/৯, ১৭(১৭) ওভার (ক্যাম্ফার ৫০, টাকার ২২, হিউম ২০*, সাকিব ৫/২২, তাসকিন ৩/১৬, হাসান ১/৬)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৭৭ রানে জয়ী
বৃষ্টি বাধ সেধেছিল আজও। তবে মাঠে খেলা গড়ালে এরপর সাগরিকায় রাজত্ব করল বাংলাদেশ, পুরো ম্যাচ জুড়েই। যেই চট্টগ্রামে এর আগে কখনও দুইশো ছোঁয়নি বাংলাদেশ, সেখানেই টানা দুই ম্যাচে দুইশো পার করল তারা। লিটন দাস-রনি তালুকদার বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটি গড়ার পর সাকিব আল হাসান-তাওহিদ হৃদয়ের ২৯ বলে ৬১ রানের জুটিতে আয়ারল্যান্ডকে বড় এক চ্যালেঞ্জই ছুঁড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠার পর বল হাতেও আইরিশদের নাকানিচুবানি খাইয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দুইবার ৫-উইকেট পেলেন সাকিব। আর সেই সুবাদে এক ম্যাচ হাতে রেখেই বাংলাদেশ সিরিজ জয় নিশ্চিত করল ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে।
২০৩ রানের বিশাল লক্ষ্যে আইরিশরা বিপদে পড়ে শুরুতেই। প্রথম বলেই তাসকিনের শিকার হয়ে আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই লরকান টাকারকে ফেরালেন সাকিব;সেখানেই শুরু তার স্পিনের ছোবল। পরের ওভারে এসে জোড়া আঘাত হেনে ফেরালেন রস অ্যাডেয়ার ও গ্যারেথ ডিলেনিকে। ষষ্ঠ ওভার করতে এসে আবার হানলেন জোড়া আঘাত; জর্জ ডকরেলকে ফেরানোর পর থামালেন ২২ রানে থাকা টেক্টরকে। সেই সাথে দ্বিতীয়বারের মত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পেয়ে গেলেন ৫-উইকেটের দেখা।
সেখানেই ম্যাচ কার্যত শেষ হয়ে গেলেও এক প্রান্ত আগলে লড়ে গিয়েছিলেন কার্টিস ক্যাম্ফার। অন্য প্রান্তে হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদরা ঠিকই ছড়ি ঘুরিয়েছেন। ক্যাম্ফার তবুও তার মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে ফিফটি পেয়েছিলেন ঠিকই, তবে হারের কাল বিলম্ব ছাড়া কাজে আসেনি সেই ইনিংস। এর আগে ফিওন হ্যান্ডকে ফেরানো তাসকিন পরে ১৫তম ওভারে এসে থামিয়েছিলেন ৩০ বলে ৫০ রানে থাকা ক্যাম্ফারকে, স্টাম্প উপড়ে ফেলে। আইরিশদের গুটিয়ে ফেলতে না পারলেও বাংলাদেশ ফিরেছে ৭৭ রানের বিশাল জয় নিয়ে।
এর আগে বৃষ্টির বাঁধা পেরিয়ে মাঠে নেমে লিটন রনি যেন আগের দিনের চেয়েও নিজেদের ওপর এক কাঠি ওপরে নিয়ে গেলেন। শুরু থেকেই আগ্রাসী হয়ে উঠেছিলেন দুজন। ১৬ রানে থাকার সময় অবশ্য ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়্যার লেগে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান লিটন, সেই সাথে পেয়ে যান ছয়ও । এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি তিনি। পাওয়ারপ্লে ৫ ওভারে নেমে এলে সেখানে বাংলাদেশ তুলে ফেলে ৭১ রান; তবে ৬ ওভারের হিসেবে গেলে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংগ্রহ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ তুলে ফেলে ৮৩ রান। সেই সাথে ১৮ বলে ফিফটি পূর্ণ করে লিটন পেয়ে যান বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্রুততম ফিফটি। রীতিমত ছুটতে থাকা বাংলাদেশের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করে দশম ওভারে বেঞ্জামিন ওয়াইট এসে থামান রনিকে। ২৩ বলে ৪৪ রান করে রনি ফেরেন লং অনে ক্যাচ দিয়ে।
সেই সুযোগেই আইরিশরা বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলে ১২তম ওভারে শেষ হয় লিটনের অসামান্য ইনিংস। ওয়াইটের লেগ ব্রেকে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে লিটন ফেরেন ৪ বলে ৮৩ রান করে। ১০টি চার ও ৩টি ছয়ে সাজানো লিটনের দারুণ ইনিংসের সমাপ্তির পর আক্রমণের দায়িত্বটা বুঝে নেন সাকিব ও হৃদয়। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে বৃত্তের ভেতরেই সহজ ক্যাচ দিয়ে হৃদয় ফেরেন ১৩ বলে ২৪ রানে। তবে ২৪ বলে ৩৮* রানে অপরাজিত থেকে সাকিব নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ সংগ্রহ। শেষ ৪ ওভারে সেখানে বাংলাদেশ তুলেছিল ৫০ রান। দিনশেষে সেই সংগ্রহ আইরিশদের নাগালের বাইরে নিতে সেই সাকিবই পালন করেছিলেন অগ্রণী ভূমিকা।