সুযোগ পাবেন সাকিব-লিটন? আইয়ারের বিকল্প রানা পারবেন ভাঙা-গড়ার কেকেআরের হাল ধরতে?
এলেন কারা, গেলেন কারা
গেল আসরে কলকাতার স্কোয়াডে থাকা ১৫ জন খেলোয়াড় থাকছেন না এবার, ১৫ জন! পরিবর্তনের মিছিলে অনেককেই ছেড়ে দিয়েছে কলকাতা। বিদেশিদের মধ্যে মোহাম্মদ নাবি, চামিকা করুনারত্নে, স্যাম বিলিংস, অ্যারন ফিঞ্চ কেউ থাকছেন না এ আসরে। এলেক্স হ্যালস ও প্যাট কামিন্স আগে থেকেই নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। পরিচিত মুখ আজিঙ্কা রাহানে, শিভাম মাবি, শেলডন জ্যাকসনসহ আরও কয়েক দেশির বিয়োজন ঘটেছে কলকাতা শিবির থেকে। রহমানউল্লাহ গুরবাজ, লকি ফার্গুসন, শার্দুল ঠাকুরকে ট্রেডে দলে ভিড়িয়েছে তারা। নিলামে কিনেছে দুই অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও ডেভিড ভিসাকে। দুই ওপেনার নারায়ণ জাগাদিশান ও লিটন দাসকেও দলে যুক্ত করেছে কলকাতা। আরও কয়েক দেশি সংযোজনের মাঝে আছেন ভইবব আরোরা, মান্দীপ সিং।
সম্ভাব্য সেরা একাদশ
১। ভেঙ্কটেশ
২। জাগাদিশান
৩। রানা
৪। রিঙ্কু
৫। রাসেল
৬। সাকিব / ভিসা
৭। নারিন
৮। শার্দুল
৯। উমেশ
১০। ফার্গুসন
১১। চক্রবর্তী
ব্যাটিংঃ অলরাউন্ডারের আধিক্যে মিটবে আইয়ারের অভাব?
পুরনোরা পারফরম্যান্স করতে পারছেন না, নতুনেরা যেন কুল-কিনারাই পাচ্ছেন না। শুরু থেকেই সমস্যার শুরু। ওপেনিংয়ে ভেঙ্কটেশের সঙ্গী খুঁজে পেতেই হয়রান হতে হয়েছিল কলকাতাকে। রাহানে, ফিঞ্চ, তোমার, কেউই জ্বলে উঠতে পারেননি গত বছর। সমস্যা তো বেড়ে গিয়েছিল ভেঙ্কটেশও ব্যর্থ হওয়ায়, ১০৭ স্ট্রাইক রেটে খেলে দুইশের বেশি রান পাননি। শ্রেয়াস আইয়ার বাদে আর একজন ব্যাটারও চারশের বেশি রান করতে পারেননি। আইয়ারও নেই এবার। পুরো আইপিএল থেকে ছিটকে যাওয়া নিশ্চিত না হলেও কখন ফিরতে পারবেন, সেটিরও নিশ্চয়তা নেই। তার অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের ভার নিতিশ রানা সামলালেও মিডল অর্ডারে তার অভাব বোধ করবে কলকাতা।
উইকেটকিপার নিয়েও তো কলকাতার মাথাব্যথা কম ছিল না। দেশি শেলডন জ্যাকসন, বাবা ইন্দ্রজিত, বিদেশি বিলিংস- সবাই মেরেছেন গোল্লা। ওপেনিং, উইকেটকিপিং- দুই সমস্যার একই সমাধান এবার অবশ্য খুঁজেছে কলকাতা। তিন উইকেটকিপার ওপেনার- বিদেশি গুরবাজ ও লিটন, দেশি জাগাদিশানও হতে পারেন কার্যকর। রাসেল-নারাইনের সঙ্গে বিদেশি কোটায় আরেক পেসার রাখতে চাইবে কলকাতা, সেজন্য ওপেনার ও অলরাউন্ডারের মধ্যে যেকোন একটি বেছে নিতে হবে। রাসেলের শরীর বোলিংয়ের জন্য উপযুক্ত হলে বোলিংয়ে যথেষ্ট অপশন থাকবে কলকাতার, তাই ব্যাটিংয়েই শক্তি হয়তো বাড়াতে চাইবে। সেজন্য ওপেনিংয়ে বিদেশি গুরবাজ বা লিটনকে রাখলে ভাগ্য খুলতে পারে মান্দীপ সিংয়ের। কিন্ত কলকাতার ব্যাটিং বিকল্প যা আছে, তার চেয়ে সেখানে সাকিব কিংবা ভিসাকে একাদশে যুক্ত করলেও তো ব্যাটিংয়ে তারা কম দিবেন না! শেষমেশ কোন কম্বিনেশনে যাবে কলকাতা?
তবে এবার গতবারের চাইতে অন্তত কলকাতার ব্যাটিং একটু জোরালো, গোছানো মনে হচ্ছে। রাসেল মাসল বরাবরই কলকাতার ভরসা, রানার ব্যাট থেকেও করবে বড় কিছুর আশা। রিঙ্কুরও সময় সম্ভাবনার প্রতিফলন দেখিয়ে জ্বলে উঠার। তবে আশানূরুপ পারফরম্যান্স করতে না পারলে ভেঙ্কটেশ বিপদে ফেলে দিবেন কলকাতা ম্যানেজেমেন্টকে, একাদশের নকশা নিয়ে তাদের ভাবনা বাড়িয়ে দেবে। সাকিব, ভিসাদের উপস্থিতিও ব্যাটিং মজবুত করবে, শার্দুলের আগমন কলকাতার ব্যাটিং গভীরতা বাড়িয়েছে। কলকাতার সাফল্যের সোপান হবে এই ব্যাটিংই!
বোলিং- খরচ কমিয়ে রাখবেন কে?
লকি ফার্গুসনকে ট্রেডে কলকাতা ফিরিয়েছে, দশ কোটি খরচ করাই বলে দেয় তাকে কতটা চায় তারা। শার্দুল ঠাকুরকেও দলে যুক্ত করেছে। শার্দুল, ফার্গুসন, দুজনেরই আইপিএলে বোলিং ইকোনমি নয়ের উপরে। কলকাতার বোলিং আক্রমণের পুরনো সদস্য রাসেলও ওভারপ্রতি খরচা করেছেন গেল আসরে দশের বেশি।
গেল আইপিএলে উমেশের অপ্রত্যাশিত উম্মোচনে কলকাতার প্রাণ ফিরেছিল পেস বোলিংয়ে। পাওয়ারপ্লেতে দুর্দান্ত প্রদর্শনী দেখানো উমেশ পুরো মৌসুমে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন, ইকোনমি ছিল সাতের কম। কিন্ত উমেশেরও রান বিলানোর পুরনো অভ্যাস আছে। সাউথিও গত আসরে ৯ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিতে ইকোনমি রাখতে পেরেছিলেন আটের নিচে। কিন্ত সাউথি-উমেশদের খরুচে বোলিংয়ের যথেষ্টই সম্ভাবনা আছে। তাহলে কে রুখবেন কলকাতার খরচ? তাদের ডেরায় নেই কোন ডেথ স্পেশালিষ্টও। ফার্গুসন ও সাউথির যেকোন একজনেরই খেলার সম্ভাবনা, তাদের কাউকেই করতে হবে বড় কিছু! অবশ্য নারাইন-বরুণ-সাকিবের স্পিন বিভাগ টুর্নামেন্টেরই অন্যতম সেরা। তবে সেখানে বড়সড় চিন্তার কারণ বরুণের ফর্ম।
২০২১ ও ২০২২ আইপিএল মিলে ৩৫ উইকেট নিয়েছিলেন বরুণ, দুই মৌসুমেই ইকোনমি ছিল সাতের নিচে। সেই বরুণ গেলবার ১১ ম্যাচে সাড়ে আট ইকোনমিতে নিয়েছেন মোটে ৬ উইকেট। ছয়ের কম ইকোনমিতে বল করে গেলেও নারাইন ১৪ ম্যাচে ৯ উইকেটের বেশি পাননি। কলকাতার সাফল্যে এ দুজনেরই ফর্ম হবে গুরুত্বপূর্ণ। পুরনোরা জ্বলে উঠুক, কলকাতার নতুন কোচ, ছয়বার রঞ্জি ট্রফি জয়ী চন্দ্রকাত পন্ডিত সে আশাই করবেন।
কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা
২০১৮ সাল থেকেই রিংকু সিং কলকাতা ডাগআউটে। প্রথম তিন আসরে খেলতে পেরেছেন মোটে ১০ ম্যাচ। এরপর গেল মৌসুমে সাত ম্যাচে সুযোগ পেয়ে খেলেছেন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ক্যামিও, ১৭৪ রান করেছেন ১৪৮ স্ট্রাইক রেটে। বাঁহাতি এই ব্যাটারের নিশ্চয়ই সুযোগের অভাব হবে না এবার। কলকাতার ভবিষ্যত তারকা হয়ে উঠতে পারবেন?
গেলবারের অবস্থান
ছয় জয়ে কলকাতার ২০২২ আইপিএল শেষ হয়েছে পয়েন্ট টেবিলে সপ্তম হয়ে।