• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    গার্দিওলা বনাম তুখেল: অপেক্ষা করছে আরেকটি ট্যাকটিকসের যুদ্ধ ?

    গার্দিওলা বনাম তুখেল: অপেক্ষা করছে আরেকটি ট্যাকটিকসের যুদ্ধ ?    

    একসময় জার্মানির সবচেয়ে বড় ম্যাচ, ডার ক্লাসিকার লড়াই ছিল এই দুইজনের মধ্যে। বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ও বায়ার্ন মিউনিখের কোচ থাকাকালীন মাঝেমধ্যে থমাস তুখেল ও পেপ গার্দিওলাকে দেখা যেত মিউনিখের রেস্টুরেন্টে লবণ ও মরিচের ডিব্বা দিয়ে ট্যাকটিকস আলোচনা করতে। এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আবার ভিন্ন দুই দল নিয়ে মুখোমুখি হচ্ছেন এই দুই বাঘা ম্যানেজার। এই ম্যাচেও যে আমাদের জন্য আরেকটি ট্যাকটিকসের যুদ্ধ অপেক্ষা করছে, তা বলাই বাহুল্য। 

    পূর্বের দেখায় 

    এখন পর্যন্ত ১০ বার মুখোমুখি হয়েছেন তুখেল ও গার্দিওলা। প্রথম দুই লড়াই এসেছে ২০১৩-১৪ মৌসুমে, যখন গার্দিওলা ছিলেন বায়ার্নে, তুখেল মাইনজে। স্বাভাবিকভাবেই এই দুইবার জয় তুলেছে গার্দিওলার বায়ার্ন। 

    পরের মৌসুমে ডর্টমুন্ডে যোগ দেন তুখেল। তবুও গার্দিওলাকে পরাস্ত করতে পারেননি এই জার্মান। লিগে ১-৫ ও ডিএফবি পোকালে ৩-৪ গোলে হারার পর সিগনা ইদুনা পার্কে গোলশূন্য ড্র করার সান্ত্বনা পায় তুখেলের ডর্টমুন্ড। 

    পরবর্তী পাঁচ মৌসুমে আর দেখা হয়নি এই দুই কোচের। প্রথম পাঁচবারের দেখায় গার্দিওলার কাছে পাত্তা না পেলেও চেলসিতে এসে নিজের জাত চেনান তুখেল। ২০২০-২১ মৌসুমে প্রথমবারের দেখায় এফএ কাপের সেমিফাইনাল থেকে গার্দিওলার সিটিকে নকআউট করে তুখেলের চেলসি। পরের দুই দেখাতেও জয় পান তুখেল। লিগে সিটির মাঠে গিয়ে ২-১ গোলে জেতার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালেও আকাশী নীলদের এক গোলে হারায় তুখেলের চেলসি। 

    গার্দিওলা এর শোধ তুলেন পরের বছর। ২০২১-২২ মৌসুমে লিগে দুবার চেলসিকে হারায় সিটি। দুবারই ১-০ গোলে। 

    ট্যাকটিকসের  লড়াই 

    নিজেদের সর্বশেষ চার ম্যাচে লাইপজিগ, বার্নলি, লিভারপুল ও সাউদাম্পটনের মুখোমুখি হয়েছে সিটি। সবগুলো ম্যাচেই তিন জনের রক্ষণ নিয়ে খেলেছে তারা। চতুর্থ ডিফেন্ডার, জন স্টোনস বা রিকো লুইস, সাধারণত ম্যাচ শুরু করেন সেন্টার মিডফিল্ডে, কিন্তু প্রয়োজনের সময় নিচে নেমে রক্ষণে যোগ দেন।  

    ৩-২-৪-১ ফরমেশনে মাঠের সব প্রান্তেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সক্ষম হয় সিটি। রক্ষণে একজন কম থাকায় মিডফিল্ডে লোকবল বেড়ে যায়। এবং বলের দখল থাকা অবস্থায় আর্লিং হালান্ড ও সামনের চার মিডফিল্ডার (সাধারণত গুন্ডোগান, গ্রিলিস, ডি ব্রুইনা ও মাহরেজ) নিয়ে ৫ জনের একটি অতি-আক্রমণাত্মক ফ্রন্টলাইন তৈরি করে তারা। সামনে নিজেরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের প্রায়ই পজিশন থেকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয় সিটি, যে কারণে বেড়ে যায় আক্রমণের মাত্রা ও ধার। 

    গত সপ্তাহে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুলের বিপক্ষেও ৬৮ শতাংশ বলের দখল রেখেছে সিটি, গোলমুখে শট নিয়েছে ১৭ বার। ফলশ্রুতিতে ৪-১ গোলের বড় জয় পেয়েছে তারা। 

    এই সিটিকে হারাতে হলে বায়ার্নকেও ট্যাকটিকালি পাকা কোনো পরিকল্পনা নিয়ে নামতে হবে। তুখেল অবশ্য এ কাজে ভালোই দক্ষ। 

    তুখেল দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচ খেলেছে বায়ার্ন। ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে লিরয় সানে ম্যাচ শুরু করেন রাইট উইংয়ে। তবে ম্যাচে প্রায়ই তাকে দেখা যায় মিডফিল্ডে নেমে এসে লিওন গোরেৎজাকে সাহায্য করতে। পরের ম্যাচে, ফ্রাইবুর্গের বিপক্ষে অবশ্য সানে খেলতে নামেন লেফট উইংয়ে। এদিন শুধু উইঙ্গারের দায়িত্বই পালন করেন সানে, মিডফিল্ডে নেমে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় টমাস মুলারকে। ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে বড় সময় রাইট উইংয়ে ছিলেন মুলারই। ফ্রাইবুর্গের বিপক্ষে সেখানে ছিলেন কিংসলি কোমান। 

    ফ্রাইবুর্গের বিপক্ষে তুখেলের পরিকল্পনা অবশ্য কাজে দেয়নি। ম্যাচের আগেই ফ্রাইবুর্গ কোচ বলেছিলেন, তারা ৪-৪-২ ফরমেশনে খেলবে, এবং তাদের দুই স্ট্রাইকার কিমিখকে চাপে রাখবে। 

    তুখেল অবশ্য এর জবাবে ম্যাচের মাঝখানে ক্যান্সেলোকে রাইটব্যাক থেকে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে নিয়ে এসেছিলেন। গার্দিওলার অধীনে খেলে ক্যান্সেলো নিজেও এই ট্রানজিশন ভালোই রপ্ত করেছেন। ক্যান্সেলো ভালো খেললেও শেষ পর্যন্ত ফ্রাইবুর্গের শক্ত রক্ষণ আর ভাঙতে পারেনি বায়ার্ন। 

    আজকের ম্যাচে সিটি অবশ্যই ফ্রাইবুর্গের মতো বাস পার্ক করে খেলবে না। গার্দিওলার দল স্বাভাবিকভাবেই ফ্রন্টফুটে খেলার চেষ্টা করবে এই ম্যাচ। ২০২১ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে তুখেল চেলসির দল সাজিয়েছিলেন ৫-২-৩ ফরমেশনে। আজকের ম্যাচেও একই কাজ করতে পারেন তিনি। এতে করে সিটির পাঁচ জনের কথিত ফ্রন্টলাইনকে টেক্কা দিতে সক্ষম হবে বায়ার্নের পাঁচ জনের রক্ষণ। তবে বলের দখল থাকা অবস্থায় রক্ষণ থেকে মিডফিল্ডে চলে আসতে পারেন ক্যান্সেলো, আর বাঁ পাশে উইঙ্গারদের মতোই সামনে রান নিতে পারেন আলফন্সো ডেভিস। 

    তবে এমনই যে পরিকল্পনা হবে, সেটার ভাবার কোনো কারণ নেই। দুই কোচেরই অভ্যাস আছে প্রতি ম্যাচের জন্য আলাদা নকশা আঁকার। বড় ম্যাচে একদমই নতুন কিছু নিয়ে হাজির হতে পারেন তারা, বিশেষ করে গার্দিওলা। ‘২১ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে মাত্র একজন প্রথাগত মিডফিল্ডার মাঠে নামিয়েছিলেন গার্দিওলা। সেই মিডফিল্ডার, গুন্ডোগান আবার ম্যাচের সিংহভাগ সময় খেলেছেন ফলস নাইন হিসেবে। গার্দিওলার এই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্যই সেবার শিরোপাটা খোয়াতে হয়েছে সিটির।  

    শুধু ওই ম্যাচ না, গার্দিওলার বিপক্ষে জেতা টানা তিন ম্যাচে একই পরিকল্পনা এঁটেছিলেন তুখেল। অতি-আক্রমণাত্মক সিটিকে ফ্রন্টফুটে খেলতে দিয়েছেন তিনি। সিটির প্রেশার সহ্য করে কাউন্টারে গ্যাপ বের করেছে তুখেলের চেলসি, তা থেকে গোল দিয়েছে। 

    সর্বশেষ ২০২১-২২ মৌসুমে অবশ্য আবার তুখেলের বিপক্ষে টানা দুটি জয় তুলেছিলেন গার্দিওলা। ওই দুই ম্যাচে গার্দিওলা একদমই ওভারথিংক করার চেষ্টা করেননি। প্রথাগত ৪-৩-৩ ফরমেশনে দল সাজিয়েছেন, লেফটব্যাক ক্যান্সেলোও এই ম্যাচগুলোয় মিডফিল্ডে উঠে যাননি। 

    তাই আজকের ম্যাচে কার ট্যাকটিকস কী হবে তা প্রেডিক্ট করা প্রায় অসম্ভব। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, ট্যাকটিক্সের আরেকটি যুদ্ধ দেখতে যাচ্ছি আমরা।