কেন নিষিদ্ধ হলেন সোহাগ? তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো কী কী?
আর্থিক অনিয়মসহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে দুই বছরের জন্য সব ধরনের ফুটবলীয় কর্মকান্ড থেকে ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছেন বাফুফে সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। সেই সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ (বাংলাদেশি মানে ১২ লাখ টাকা)। কিন্তু কে এই সোহাগ? তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আসলে কী কী?
কীভাবে বাফুফেতে সোহাগ?
২০০৬ সালে কম্পিটিশনস ম্যানেজার হিসেবে বাফুফেতে যোগ দেন সোহাগ। ২০১১ সালে বাফুফের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আল মুসাব্বীর সাদির অকালপ্রয়াণের পর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। দুই বছর পর পূর্ণকালীন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। বাবুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনের অনুমোদনে এরপর প্রতি দুই বছর পর পর তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। বহুদিন ধরে আর্থিক অনিয়মসহ একাধিক অভিযোগ উঠলেও তার মেয়াদ বাড়ানোসহ বাড়তি সুযোগ সুবিধা ও বেতন বৃদ্ধিও করা হয়েছে বাফুফেতে।
সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
মূলত চারটি খাতে সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে ফিফা। ৫১ পৃষ্ঠার বিস্তারিত প্রতিবেদনে বর্ণনা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ। মূলত চারটি খাতে এগুলো আনা হয়েছে- ধারা ১৩ (আনুগত্যের কর্তব্য), ধারা ১৫ (সাধারণ দায়িত্ব), ধারা ২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার), ধারা ২৮ (অর্থ লোপাট ও অপব্যবহার)। মূলত অভিযোগগুলো আনা হয়েছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে সময়ে। এখানে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সারাংশ রইল
বিমান টিকিট সংক্রান্ত
২০১৯ সালের নভেম্বরে ২০২২ বিশ্বকাপ এবং ওই বছরে জাতীয় দলের ওমান সফরের জন্য আল মারওয়াহ ইন্টারন্যাশনালকে টিকিট বাবদ ১৯,৯২৫৪ ডলার দিয়েছে বাফুফে। ফিফার তদন্তে দেখা গেছে এই টিকিটের জন্য যে রশিদ দেওয়া হয়েছে তাতে সবগুলোতে Route বানানটিই ভুল। সবকটি রশিদ একই তারিখে জমা দেওয়া ও দেখতে একই রকম। মাল্টিপ্লেক্স টুরস ও ট্রাভেলস নামে যে কোম্পানিকে তৃতীয়বার টিকিটের টাকার জন্য অর্থ দিয়েছে তাদের রশিদেও নাম একেকবার একেকরকমভাবে এসেছে। পুরবী ইন্টারন্যাশনাল নামের আরেক যে এজেন্সিকে বিমান টিকিট ক্রয়ের জন্য সরবরাহ আদেশ দেওয়া হয়েছে তারা মূলত জনশক্তি সরবরাহ বিষয়ক সংস্থা। এবং পূরবী ও মাল্টিপ্লেক্স নিশ্চিত করেছে তারা বাফুফের কাছ থেকে এই ধরনের কোনো দায়িত্ব পায়নি।
ফুটবল কেনা সংক্রান্ত
২০২০ সালে ১৩,৯২১ ডলার দিয়ে ৪০০ ফুটবল কেনে বাফুফে। সেখানে সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া তিনটি কোম্পানির একটি ওফেলিয়া ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু তারা আসলে মেয়েদের পোশাক বানায় এবং রশিদে দেওয়া ঠিকানার সাথে তাদের আসল ঠিকানার মিল নেই। এমনকি ওফেলিয়ার কাছ থেকে কোনো ইনভয়েসও পায়নি বাফুফে। বলের জন্য কাজ পাওয়া অন্য দুই কোম্পানির কোটেশনেও তাদের কোম্পানির কোনো সিল ছিল না। আর এই দুই কোম্পানির পক্ষ থেকে যে সই করা হয়েছে তাও ছিল ফটোকপির ওপর, মূল রশিদে নয়।
খেলার সামগ্রী কেনা সংক্রান্ত
২০২০ সালে ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পের জন্য কিছু খেলার জিনিস কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বাফুফে। এখানেও যে তিনটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের সবার কোটেশনে কাকতালীয়ভাবে একই রকম বানান ভুল ছিল। এবং কারো কোটেশনেই বিডারের কোনো স্ট্যাম্প ছিল না। তিনটি কোতেশনের প্রিন্ট ও লেআউট একই রকম, যদিও তিনটিই আলাদা তিনটি কোম্পানির।
কেন সোহাগই শাস্তি পেলেন?
বাফুফের নিয়োগপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অর্থ সংক্রান্ত সবকিছু দেখভালের দায়িত্ব আবু নাঈম সোহাগের। সেই হিসেবে তার সময়ে করা আর্থিক অনিয়মের জন্য সরাসরি তাকে অভিযুক্ত করেছে ফিফা ও নিষেধাজ্ঞা এসেছে এই কারণেই। নির্বাচিত সভাপতি বলে সরাসরি কাজী সালাহউদ্দিনকে সরানোর কোনো সুপারিশ করেনি ফিফা। তবে এই ব্যাপারে সালাহউদ্দিন বা সোহাগ, কারও কোনো বক্তব্যই এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।